এম এ কোরেশী শেলু, রাঙ্গুনিয়া ( চট্টগ্রাম): কাতার বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনায় নিয়োজিত থাকবেন বিশ্বের ৩৬ জন রেফারি। ৬৯ জন সহকারী রেফারি ও ২৪ জন ভিডিও ম্যাচ অফিসিয়াল ম্যাচের দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের সঙ্গে সমন্বয়কারী ও সহকারী রেফারি হিসেবে কাজ করবেন বাংলাদেশের শিয়াকত আলী। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়নের বালুগোট্টা গ্রামের বাসিন্দা তিনি।
শিয়াকত বলেন, ‘একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমি গর্বিত। বাংলাদেশকে বিশ্বে তুলে ধরার এটাও একটি সুযোগ।’
শিয়াকত আলী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া মরিয়ম নগর ইউনিয়নের মাইজ পাড়া গ্রামের সন্তান। তিনি মো. রফিকুল আলম সওদাগরের ছেলে।
শিয়াকত ২০১৩ সালে চাকুরীর সুবাধে কাতারে পাড়ি জমান। সেখানে বার্সেলোনার একটি রেফারি অন্বেষণ কার্যক্রমে অংশ নিয়েই কপাল খুলে যায় তার। তিনি বলেন, ‘আমি স্কুল পর্যায়ে অ্যাথলেট এবং ভালো সাঁতারু ছিলাম। ২০১৩ সালে জীবিকার খুজে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে কাতারে আসি। সেই সময় স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার একটি ফুটবল প্রজেক্ট শুরু হয় কাতারে। প্রজেক্টের জন্য স্কুলে স্কুলে গিয়ে খেলোয়াড় সংগ্রহের কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য বার্সেলোনা প্রজেক্টের সিইওর দারস্থ হই। বাংলাদেশে স্কুলে ক্রীড়া শিক্ষকতা ও রেফারিংয়ের কথা শুনে ওই সিইও সম্মতি জানান।
শিয়াকত বলেন, কাতারে খেলোয়াড় সংগ্রহের পাশাপাশি ৪ হাজার ম্যাচের খেলাও পরিচালনা করি। পাশাপাশি তিনি কাতার আর্মি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের রেফারি হিসাবেও দায়িত্বে পালন করছি। তাছাড়া বার্সেলোনার সেই প্রজেক্ট শেষে কাজের সুযোগের জন্য আবেদন করি কাতার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে। সেখানেও মেলে সবুজ সংকেত। প্রথমে কাতার ফুটবলে ১৬ দিনের রেফারি প্রশিক্ষণ শেষ করি। পরে কাতারের স্পায়ার একাডেমি থেকে রেফারিং অ্যান্ড স্পোর্টস সাইকোলজিতে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করি। এরই মধ্যে রেফারিংয়ের ওপর সিওডি ডিপ্লোমা কোর্সও সম্পন্ন করি।
তিনি বলেন, কাতার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে আমাকে সবাই বাঙালি কুরা হাকাম মোহাম্মদ শেখ আলী নামে চেনেন। কুরা অর্থ ফুটবল, হাকাম অর্থ রেফারি। এ পরিচয়েই চার হাজার ফুটবল ম্যাচ পরিচালনা করি। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংখ্যা ছিল ১৫০টি।
শিয়াকত বলেন, ভবিষ্যতেও রেফারির কাজটা চালিয়ে যেতে চাই। দিন দিন রেফারিতে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব দেশকে তুলে ধরার জন্য, এটা আমার একমাত্র লক্ষ্য। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও রেফারি বিভাগ কোনো সহযোগিতা চাইলে আমি যেকোনো মুহূর্তে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত এবং চেষ্টাও থাকবে। ভবিষ্যতে দেশে একটি ফুটবল একাডেমি করতে চাই। ইউরোপ একাডেমির মাধ্যমে যেখানে একটি মেধাবীদের প্রজেক্ট হয়। যেখানে খেলোয়াড়দের সঙ্গে রেফারিদের মেধাগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে।
চট্টগ্রামে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে ফুটবল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন জানিয়ে বলেন, চট্টগ্রামে থাকাকালীন সময়ে স্কুল ও কলেজের হয়ে ফুটবল খেলাগুলো খেলেছি। স্কুল ও কলেজে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িত ছিলাম। যদিও জাতীয় পর্যায়ে আমার কোন অর্জন নেই। কিন্তু বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত।
পরবর্তীতে শিয়াকত আলী মনিয়মনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রাঙ্গুনিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। পরে খেলোয়াড় কোটায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগেও ভর্তি হয়েছিলেন। বর্তমানে শিয়াকত স্ত্রী ও এক সন্তানের জনক। তারা গ্রামেই বসবাস করে। শিয়াকত বর্তমানে পারিবারিক কারণে অল্প দিনের জন্য দেশের বাড়িতে থেকে কাতার বিশ্বকাপে যোগ দিতে এ মাসেই দেশ ত্যাগ করবেন বলে জানান।