সঞ্চিতা চট্টোপাধ্যায়
শীতকালে আমাদের খাবারের লিস্টে বিশেষ কিছু জিনিস রাখা দরকার, কারণ রোজ কী খাচ্ছি, তার উপরেই নির্ভর করে আমাদের স্বাস্থ্য। বাইরের রোগের বিরুদ্ধে আমাদের শরীর কতটা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারবে তাও এই খাবারের উপরেই নির্ভর করে।
কোভিড আবহে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন বদলে গেছে অনেকখানি। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হলে শীতকালের খাওয়াদাওয়ার উপর গুরুত্ব দিতে হবে আলাদা করে। বিশেষ করে যারা আজকাল ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছেন তাদের পেশি, হাড় ও অস্থিসন্ধিকে ফিট রাখতে শীতের মরসুমে খাদ্যতালিকায় কিছু কিছু খাবার অপরিহার্য। আসুন দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকা।
বাঙালির খাদ্য সংস্কৃতি অনুযায়ী শীতকালে উজ্জ্বল ত্বক, ভাল হাড়ের স্বাস্থ্য, শক্তিশালী পেশির জন্যে এই খাবারগুলি জরুরি। এগুলি যেম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এমন মনকেও রাখে ফুরফুরে।
মিলেট
শীতকাল মিলেট জাতীয় খাবারের জন্য আদর্শ সময়। এই সময় বাজরা অথবা পাল মিলেট খাওয়া স্বাস্থ্যকর। বাজরার রুটি, খিচুড়ি, লাড্ডু, পাঁপড় খাওয়া যেতে পারে এসময়, এগুলি ভিটামিন-বি ও ফাইবার সমৃদ্ধ। শীতকালে বাজরার রুটি খেলে চুল হয়ে উঠবে ঘন আর মজবুত।
শীতকালীন সবুজ শাক
পালং, মেথি, সর্ষে, নোটে ইত্যাদি শাক এই সময়ে টাটকা বাজারে আসে। এগুলি পুষ্টি উপাদানে ভরপুর ও সহজলভ্য। এর মধ্যে থাকে ফোলিক অ্যাসিড, ভিটামিন-এ, আয়রন, ভিটামিন-সি আর ফাইবার। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং মেটাবলিক সিন্ড্রোম কমাতে বিশেষভাবে সহায়তা করে এসব শাক-সবজি। রসুন শাক হল একটি শীতকালীন ফসল যা শক্তিশালী ইমিউনিটি বুস্টার। ধনেপাতা বা পুদিনা পাতার সঙ্গে রসুন শাক মিশিয়ে চাটনি বানিয়ে খাওয়া যায় এই শীতে। যাঁদের হাতে-পায়ে জ্বালা ভাব আছে তাঁদের জন্য এগুলি কাজে দেয়।
মটরশুঁটি, শিম, বরবটি, বিনস
মটরশুঁটি, শিম, বরবটি, বিনস শীতকালে প্রচুর পরিমাণে টাটকা পাওয়া যায়। এগুলি প্রোটিনের উৎস। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ও যাঁদের হর্মোনাল ইম্ব্যাল্যান্স আছে তাঁদের জন্য এগুলি অত্যাবশ্যকীয় সবজি।
বিট, গাজর, কুমড়ো, টমেটো
বিটের বিটালিন, কুমড়ো ও গাজরের ক্যারোটিন, টমেটোর লাইকোপিন শক্তিশালী অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি কম্পাউন্ড যা হার্টের জন্য খুব ভাল। ফ্ল্যাট স্টমাক পেতেও সাহায্য করে এগুলি। আজকাল ওয়ার্ক ফ্রম হোমের জন্য আমাদের স্ক্রিনটাইম অনেক বেড়ে গেছে। তাই চোখ ভাল রাখতে এগুলি খেতেই হবে।
মূল ও কন্দ
রাঙালু বা অন্যান্য কন্দজাতীয় খাবার শীতকালেই পাওয়া যায়। এগুলি আমাদের ক্ষুদ্রান্তে ব্যাকটেরিয়ার খাবার অর্থাৎ প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে এবং ভাল ব্যাকটেরিয়া সংখ্যা বাড়ায়। ফলে হরমোনাল ব্যালান্সও ঠিকঠাক থাকে।
টাটকা ফল
শীতের ফল বলতে বোঝায় আমলকি, কমলালেবু, আপেল, সবেদা, আতা, পেয়ারা প্রভৃতি। সিজনাল ফ্লু সর্দি-কাশি থেকে বাঁচতে রোজ একটা করে টাটকা আমলকি খাওয়া ভাল। এছাড়া কমলালেবু, পেয়ারাও ভিটামিন সি-এর ভাণ্ডার। সবেদা, আতাও স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভাল। ওজন, বেলি ফ্যাট, কনস্টিপেশন, কোলেস্টেরল কমাতে ও ইমিউনিটি বাড়াতে শীতকালের এসব ফল অনবদ্য।
তিল
তিলের এসেনশিয়াল ফ্যাট আপনার নখ, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যকে ভাল রাখতে সাহায্য করে। এর ভিটামিন ই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে। তিলের চাটনি, পাটালি, নাড়ু বেশি করে খাওয়া যেতে পারে এই সময়। এছাড়া শুকনো খোলায় ভেজে তিল শুধু শুধুও খাওয়া যায়। তিলের এসেনশিয়াল ফ্যাট অস্থিসন্ধিকে ভাল রাখে।
বাড়িতে বানানো ঘি
শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব থাকলে কোভিডের জটিলতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঘি হল একটি শক্তিশালী এসেনশিয়াল ফ্যাট, যা ফ্যাট দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, ডি, ই আর কে-র শোষণে কাজে লাগে। যাঁদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাটাতে হচ্ছে তাঁরা ঘিয়ের বদলে ভাত বা রুটির সঙ্গে হোয়াইট বাটারও খেতে পারেন।
সজনে ফুল, পাতা, ডাঁটা
শীতের শেষের দিকে বাজারে আসে সজনে। এটি মোরিঙ্গা নামে সারা ভারতে পরিচিত। সজনে গাছের অসাধারণ পুষ্টিমূল্যের জন্য একে ‘মিরাকেল ট্রি’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এটি ফাঙ্গাস বিরোধী, ভাইরাস বিরোধী, প্রদাহ বিরোধী এবং অ্যান্টি-ডিপ্রেশন ফুড হিসেবেও কাজ করে। শীতের খাদ্যতালিকায় রাখতেই হবে সজনে ফুল, পাতা আর ডাঁটাকে।
নিম
নিমের পাতা অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল। তাই সপ্তাহে দু’একদিন নিম পাতা খেলে ইমিউনিটি বাড়বে।
শীতে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এই খাবারগুলিকে অবশ্যই আপনার রোজকার খাদ্যতালিকায় যোগ করুন। তাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়বে তেমনই ত্বকের ঔজ্জ্বল্যও বাড়বে। ভাল হবে চুলের স্বাস্থ্য, পেশি আর অস্থিসন্ধি থাকবে ফিট অ্যান্ড অ্যাকটিভ। শুধু তাই নয়, শীতকালে ঘনঘন সর্দি-কাশি, চুল পড়া, গাঁটের ব্যথারও উপশম হবে এসব খেলে।