মাছ চাষ নির্ভর করে ব্যবস্থাপনার ওপর। পুকুরের পানির রং দেখে ও মাছের গতিবিধি দেখে মাছের সমস্যা নির্ণয় করা সম্ভব। শীতকালে মাছের ক্ষতরোগ, লেজ ও পাখনা পচা রোগ ও ফুলকা পচা রোগ প্রতিরোধে করণীয়।
পানির ওপর সবুজ স্তর : পুকুরের পানির রঙ ঘন সবুজ হয়ে গেলে বা পানির ওপর শ্যাওলা জন্মালে খাদ্য ও সার প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। প্রতি শতাংশে ১২ থেকে ১৫ গ্রাম তুঁতে বা কপার সালফেট অনেক ভাগ করে ছোট ছোট পোটলায় বেঁধে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পানির নিচে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখতে হবে। প্রতি শতাংশ পুকুরে ৮০০ থেকে ১২০০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে।
পানির ওপর লাল স্তর : পুকুরের পানির ওপর লাল স্তর পড়লে ধানের খড়ের বিচালি বা কলাগাছের শুকনো পাতা পেঁচিয়ে দড়ি তৈরি করে পানির ওপর দিয়ে ভাসিয়ে নিলে পরিষ্কার হয়।
পানির ঘোলাত্ব : পানি ঘোলা হলে মাছ খাদ্য কম খায়, চোখে দেখে না, প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয় না, প্রজননে সমস্যা হয় ও রোগবালাই বেশি হয়। প্রতি শতাংশে ৮০ থেকে ১৬০ গ্রাম ফিটকিরি দিতে হবে। পুকুর তৈরির সময় জৈবসার বেশি দিলে স্থায়ীভাবে ঘোলা দূর হয়। পানিতে কলাপাতা ও কচুরিপানা রাখলেও ঘোলা কমে।
পানির ক্ষারত্ব : পানি ক্ষারীয় হলে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি কম হয়। মাছের দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়। মাছের দেহে পিচ্ছিল পদার্থ কমে যায়। পুকুর তৈরির সময় ওপরে শতাংশ প্রতি ১ থেকে ২ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হয়। লেবু কেটে দিলেও ক্ষারত্ব কমে। ছাই প্রয়োগেও ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ হয়।
জলজ উদ্ভিদ : কচুরিপানা, কলমিলতা, চেচরা, পাতাঝাঝি, শাপলা, হেলেঞ্চা, মালঞ্চ এসব জলজ উদ্ভিদ জলাশয়ে রোদ পড়তে বাধা দেয়, মাছের চলাচল, খাদ্য গ্রহণ, প্রজননে সমস্যা করে। এসব ক্ষতিকর জলজ উদ্ভিদ কাঁচি দিয়ে কেটে সব সময় পুকুরের পানি ও পুকুর পরিষ্কার রাখতে হয়।
রোগ প্রতিরোধের জন্য যেসব ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন তাহলো-
১. পুকুরের পরিবেশ ও পানির গুণাগুণ ঠিক রাখা;
২. জলজ আগাছামুক্ত রাখা;
৩. পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ার ব্যবস্থা করা;
৪. অনাকাঙ্খিত জলজ প্রাণী অপসারণ করা;
৫. অতিরিক্ত কাদা সরানো;
৬. দুই তিন বছর পর পর পুকুর শুকানো;
৭. নিয়মিত ও পরিমিত চুন প্রয়োগ করা;
৮. মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা;
৯. প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি পরীক্ষা করা;
১০. হররা টানা;
১১. পাখি বসতে না দেয়া;
১২. জাল শোধন করে ব্যবহার করা;
১৩. রোগাক্রান্ত মাছ অপসারণ করা;
১৪. সব সময় ঢেউয়ের ব্যবস্থা রাখা;
১৫. পানি কমে গেলে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা;
১৬. ভাসমান খাদ্য প্রয়োগ করা;
১৭. পানি বেশি দূষিত হলে পানি পরিবর্তন করা;
১৮. পুকুরে বিভিন্ন স্থানে একটু গভীর বা গর্ত করা যাতে পানি কমে গেলে মাছ সেখানে আশ্রয় নিতে পারে।
রোগের লক্ষণ ও কারণ:
১.প্রাথমিক ভাবে পিঠের পাখনা এবং ক্রমান্বয়ে অন্যান্য পাখনা আক্রান্ত হয়। এ্যারোমোনাড্স ও মিক্সোব্যাকটার গ্রুপের ব্যাকটেরিযা দ্ধারা এ রোগের সৃষ্টি হয়।
২. পানির পি-এইচ ও ক্ষরতার স্বল্পতা দেখা দিলে এ রোগ দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা ও ঔষধ প্রয়োগ:
১.০৫ পিপিএম পটাশযুক্ত পানিতে আক্রান্ত মাছকে ৩-৫ মিনিট গোসল করাতে হবে।
২. পুকুরে সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।
প্রতিকার:
১. রোগজীবানু ধ্বংসের পর মজুদকৃত মাছের সংখ্যা কমাবেন।
২. প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করুন।
এছাড়া মাছ সংক্রান্ত যে কোন পরামর্শের জন্য উপজেলা মৎস অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
– কৃষি তথ্য সার্ভিস