নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: ঋতু্বদলের পালাক্রমে চলে এসেছে শীত। দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলাগুলো মতো কুড়িগ্রামেও আগে-ভাগেই জেঁকে বসেছে শীত। হিম বাতাস শরীরকে ঠাণ্ডা করে দিচ্ছে বাইরে বেরোলেই। রাতের বেলায় টুপটাপ শব্দে ঝরছে শিশির।
এই শীতকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে জয়তন (৬০)-এর জীবিকা নির্বাহের প্রচেষ্টা। স্বামীহারা জয়তনের বাড়ী কুড়িগ্রাম পৌরসভার সওদাগর পাড়া গ্রামের বাঁধের পাড় এলাকায়। এই সময়টাতে প্রতি রাতে তিনি চাল ভিজিয়ে রাখেন। ঘুম থেকে উঠে পড়েন খুব ভোরে। এরপর ভিজিয়ে রাখা চাল থেকে পানি আলাদা করে গুঁড়া করার কাজ শুরু করেন। এই গুঁড়া করা চালের সঙ্গে আখের গুড় মিশিয়ে তিনি বানান সুস্বাদু ভাপা পিঠা।
কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার ধরলা নদী সংলগ্ন বাঁধের পাড়ে বসে ভাপা পিঠা বিক্রি করেন তিনি। পিঠা বিক্রি করেই শীতের সময়টাতে চলে তার সংসারের খরচ। শুক্রবার (৬ নভেম্বর) সকাল ৭টার দিকে সেখানে গিয়ে কথা হয় জয়তনের সঙ্গে। এই নারীর ২ ছেলে আর ১ মেয়ে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরাও বিয়ে করে সংসার নিয়ে আলাদা হয়ে গেছে। তাই রোজগারের জন্য বার্ধক্য নিয়েই লড়ছেন তিনি জীবনযুদ্ধে।
তিনি বলেন, ‘আমি ভূমিহীন। বসবাস করি খাস জমিতে। ছেলে-মেয়েরা যে যার মতো করে আলাদা হয় গেছে। তারা কেউ আমার খোঁজ নেয় না। প্রতিদিন ২ কেজি চালের গুড়ার পিঠা বানাই। ২ কেজি চাল কিনতে লাগে ১০০ টাকা। গুড় লাগে ২০ টাকার। লাকড়ি কিনতে হয় ৫০ টাকার। একটা পিঠা ৫ টাকায় বিক্রি হয়। মোট খরচ হয় ১৭০ টাকা। মোট বিক্রি হয় ২৫০ টাকা। সব শেষে দৈনিক আয় হয় মাত্র ৮০-৯০ টাকা।’ এই নারী জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার চালের দাম বেশি। চালের পাশাপাশি গুড় আর খড়িও কিনতে হয়। ‘বেশি দাম দিয়ে কেনা কাঁচামালের পাশাপাশি অনেক পরিশ্রম করে পিঠা বানিয়ে বিক্রি করতে হয় মাত্র ৫ টাকায়। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই গরিব ও দিনমজুর। তারা ৫ টাকার বেশি পিঠার দাম দিতে চায় না। এবার চালের দাম বেশি হওয়ায় লাভবান হতে পারছি না। এই সামান্য আয় দিয়ে পেট চালাতে পারছি না।’
স্থানীয় বাসিন্দা নয়ন মনি প্রতিদিন পিঠা কেনেন জয়তনের কাছ থেকে। তিনি বলেন, ‘এলাকার মানুষ সবাই দরিদ্র। ৫ টাকার বেশি কেউ পিঠার দাম দিতে চান না। এ বছর চালের দাম বেশি হওয়ায় পিঠা বিক্রেতারা ভালো নেই।’
আরেক ক্রেতা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে এই বৃদ্ধার কাছ থেকে গরম পিঠা কিনে নেই। কিন্তু এবার জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় ওনার খুব একটা লাভ হচ্ছে না। এখানকার সব মানুষই নিম্ন আয়ের হওয়ায় ৫ টাকার বেশি দামও পাওয়া সম্ভব না।’ বিভিন্ন প্রতিকূলতায় গ্রামাঞ্চলে এ পেশা টিকিয়ে রাখা জয়তনের মতো মানুষদের পক্ষে ধীরে ধীরে অসম্ভব হয়ে উঠছে। তাই তিনি সর্বস্তরের মানুষের সহায়তা কামনা করছেন।