বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন (ক্রিস্টমাস) আজ। দুই হাজার বছর আগে এই শুভদিনে পৃথিবীকে আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট। বেথেলহেমের এক গোয়াল ঘরে কুমারীমাতা মেরির কোলে জন্ম হয়েছিল যিশুর।
খ্রিস্ট ধর্মানুসারিরা বিশ্বাস করেন, যিশু ঈশ্বরের পুত্র। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও উৎসবমুখর পরিবেশে দিনটি উদযাপন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা দিবসটি উৎসব ও ধর্মীয় উদ্দীপনার মধ্যে উদযাপন করবেন। তবে করোনা মহামারীর কারণে এই দিনটি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সর্বত্র মুখোশ পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে সীমিত আকারে উদযাপিত হবে।
আজ সরকারি ছুটির দিন। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ পৃথক বার্তায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তারা বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশকে মারাত্মক রোগ করোনভাইরাস মারাত্মক রোগের দ্বিতীয় স্পেলের প্রাদুর্ভাবের কারণে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে পবিত্র দিনটি পালনের জন্য খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বড়দিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. হামিদ তার বাণীতে বলেন, সুখী-সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ‘বড়দিন’ উপলক্ষে দেশের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা সারাবিশ্বে যীশু খ্রিস্টের শুভ জন্মদিন উপলক্ষে ‘বড়দিন’ যথাযথ মর্যাদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে উদযাপন করে থাকেন। যীশু খ্রিস্ট ছিলেন সত্যান্বেষী, মানবজাতির মুক্তির দূত এবং আলোর দিশারি। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি পৃথিবীকে শান্তির আবাসভূমিতে পরিণত করতে তিনি বহু ত্যাগের বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার মহিমা ও খ্রিস্টধর্মের সুমহান বাণী প্রচার করেন।
তিনি পথভ্রষ্ট মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে আহ্বান জানান। মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, সেবা, ক্ষমা, মমত্ববোধ, সহানুভূতি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠাসহ শান্তিপূর্ণ অবস্থানের শিক্ষা দেন। তিনি বলেন, জাগতিক সুখের পরিবর্তে যীশু খ্রিস্ট ত্যাগ, সংযম ও দানের মাধ্যমে পরমার্থিক সুখ অর্জনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। জাতিতে জাতিতে সম্প্রীতি ও ঐক্য স্থাপনসহ অশান্ত বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যীশু খ্রিস্টের শিক্ষা ও আদর্শ খুবই প্রাসঙ্গিক বলে রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন ।
আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানে সব ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম ও আচার ও অনুষ্ঠানাদি স্বাধীনভাবে পালন করে আসছে। বিদ্যমান সম্প্রীতির এই সুমহান ঐতিহ্যকে আরও সুদৃঢ় করতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি।
তিনি বলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার- এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে সবাই একসঙ্গে উৎসব পালন করব। আমাদের সংবিধানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। সবাই মিলে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। তাই এই দেশ আমাদের সবার। বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি।
বড়দিন উপলক্ষে তিনি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক যীশু খ্রিস্ট এ দিনে বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেন। পৃথিবীতে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তনই ছিল যীশু খ্রিস্টের অন্যতম ব্রত। বিপন্ন ও অনাহারক্লিষ্ট মানুষের জন্য মহামতি যীশু নিজেকে উৎসর্গ করেন। তার জীবনাচরণ ও দৃঢ় চারিত্রিক গুণাবলীর জন্য মানব ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে আছেন।
শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সব সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান। করোনাভাইরাসের প্রেক্ষাপটে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সবাইকে এবারের বড়দিন পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণে বর্তমানে বিশ্ব বিপর্যস্ত। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে মহামারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের দেশ ও জাতি তথা বিশ্ববাসীকে এই মহামারী হতে যেন মুক্তি দেন-এ প্রার্থণা করি।’ বড়দিনে প্রধানমন্ত্রী খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীসহ সব নাগরিকের শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।