আমাদের জীবন আর শেয়ার বাজার অনেক ক্ষেত্রেই সমতুল্য বলা চলে। আমাদের জীবনে ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে সে ব্যাপারে আগে থেকে আমরা যেমন কেউই কিছু ঠাওর করতে পারি না, ঠিক তেমনি যত বড় বিশেষজ্ঞই হোক না কেন, শেয়ার বাজারে আগামীতে আসলে কী হতে চলেছে সেই ব্যাপারে কিন্তু আগে থেকে নিশ্চিত করে কেউ ই কিছু বলতে পারেনা। তাই, জীবনের মতোই শেয়ার বাজার এবং শেয়ার বাজার থেকে পাওয়া রিটার্ন সব সময়ই অনিশ্চিত – এই কথাটা সর্বৈব সত্য এবং বিনিয়োগের আগেই এটা মেনে নেওয়া খুবই জরুরী। কারণ, মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশাই বেশীরভাগ সময়ে এখানে বিপর্যয়ের কারণ হয়। তবে কত সময়ে, কতটা রিটার্ন হবে, সে বিষয়টা অনিশ্চিত হলেও রিটার্ন যে পাওয়া যাবেই না সেটাও কিন্তু নিশ্চিত নয়! পড়াশোনা, চাকরি, সম্পর্ক ইত্যাদি জীবনের অন্য অনেক দিকের মতোই পজিটিভ বা ভালো রিটার্ন পাওয়ার জন্য দরকার জানার, শেখার, একটু ঝুঁকি নেওয়ার, সঠিক সূত্র মেনে চলার, নিজের উপর বিশ্বাস রাখার, লক্ষ্যে অবিচল থাকার আর ধৈর্য বজায় রাখার। ভুলে গেলে চলবে না জীবনের আর ৫টা বড় কাজের মতোই বিনিয়োগটাও লম্বা সময়ের খেলা, এটা করা মানে রাতারাতি বড়লোক হওয়া নয়! আরো একটা কথা হচ্ছে চাহিদা প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা হয়। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে কিংবা ট্রেডিং করে আয়ের রাস্তা অনেক। কিন্তু আয়ের চাহিদা অনুযায়ী ঝুঁকির মান নির্ধারিত হয়। প্রথমেই যদি আমরা আমাদের প্রত্যাশা বা চাহিদাটাকে একটা বাস্তব গন্ডির মধ্যে রেখে বিনিয়োগের কথা ভাবি তাহলেই কিন্তু এথেকে একটা স্ট্যান্ডার্ড রিটার্ন পাওয়ার রাস্তা সুগম হয়ে যায়। তবে শেয়ার বাজারই হোক বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে, বিনিয়গের সাথে যেমন উচ্চ রিটার্নের আশা থাকবে তেমনই সব সময়ই একটা ঝুঁকিও থাকবে। এবং সেটা মাথায় রেখেই আমাদের এগোতে হবে। ঝুঁকি আর পুরস্কার ফেসবুকের স্রষ্টা মার্ক জাকারবার্গ একবার বলেছিলেন, ‘জীবনের সবথেকে বড় ঝুঁকি হচ্ছে কোনো রকম ঝুঁকি না নেওয়া।’ কথাটা জীবনের সব ক্ষেত্রে সত্যি। গড়পরতা জীবনের বাইরে বড় কিছু পেতে হলে বা বড় কিছু করতে হলে নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসে একটু ঝুঁকি তো নিতেই হবে। আর এই কথাটা বিনিয়োগ বা শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রে ভীষণভাবে সত্যি। সব রকমের বিনিয়োগ, মানে যে সমস্ত ক্ষেত্রে টাকা খাটিয়ে আরও টাকা আসে সে ধরনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু ঝুঁকি থাকেই। এমনকি আমরা যেটাকে সব থেকে সুরক্ষিত বিনিয়োগ মনে করি, মানে ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট, সেখানেও কিন্তু একটুখানি ঝুঁকি থাকেই। বিনিয়োগের সমস্ত মাধ্যমের মধ্যে যে ক্ষেত্রে যত বেশি রিটার্ন পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে তত বেশি ঝুঁকি থাকে। আরও পড়ুনঃ শেয়ার বাজারে ইনভেস্টিং-এর বিষয়ে ওয়ারেন বাফেটের সেরা 5 টি পরামর্শ – যেগুলো বিনিয়োগে আপনার পথপ্রদর্শক হবে শুধুমাত্র শেয়ার বাজারেই বিনিয়োগের রাস্তা অনেক। আর যত কম সময়ে যত বেশি রিটার্ন পাওয়ার রাস্তা ধরা হয় ঝুঁকির পরিমাণ ততই বেড়ে যায়। আমরা এখানে যে সূত্র নিয়ে আলোচনা করব সেখানেও কিছুটা ঝুঁকি থাকবেই। তবে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ঝুঁকি যতটা সম্ভব কম নিয়ে রিটার্নের সম্ভাবনা যতটা সম্ভব বাড়ানোর চেষ্টা করা। ঝুঁকি কখন বেশি কখন কম? শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ঝুঁকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কম আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি। যেমন, আলাদা আলাদা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার ঝুঁকি বেশি আর একসাথে অনেকগুলো কোম্পানি বা কোনো একটা সূচক ধরে বিনিয়োগ করার ঝুঁকি কম। যত কম সময়ের জন্য বা কম সময়ে বেশি রিটার্ন পাওয়ার আশায় বিনিয়োগ করা হয় ঝুঁকি তত বেশি হয় আর যত বেশি সময়ের জন্য করা হয় ঝুঁকি তত কম হয়। যত বেশি সেক্টরের বা যত বিভিন্ন রকম কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয় অর্থাৎ পোর্টফোলিও যত বেশি ডাইভারসিফাই করা হয় বা যত বৈচিত্র আনা হয় ঝুঁকি তত কম হয় আর যত বেশি ফোকাসড বিনিয়োগ করা হয় ঝুঁকি তত বেশি হয়। যত বেশি অজানা অচেনা কোম্পানির শেয়ার কেনা হয় ঝুঁকি তত বেশি হয় আর চেনা পরিচিত বিশ্বস্ত কোম্পানির শেয়ার যত বেশি কেনা করা হয় ঝুঁকি তত কম হয়। ছোট ছোট বা স্মল ক্যাপ কোম্পানির শেয়ার যত বেশি কেনা করা হয় ঝুঁকি তত বেশি হয় আর ব্লুচিপ বা লার্জ ক্যাপ কোম্পানির শেয়ার যত বেশি কেনা হয় ঝুঁকি তত কম হয়। একবারে অনেক টাকা বা সব টাকা লাগানোর থেকে যত বেশি ধাপে ধাপে বিনিয়োগ করা হয় ঝুঁকি তত কম হয়। বাজার যখন উর্ধ্বমুখী বা সবাই যখন লোভী (বুল ফেজ) তখন বিনিয়োগ করার থেকে বাজার যখন নিম্নমুখী বা বাজারে যখন ভয় বিরাজ করছে (বিয়ার ফেজ) তখন করলে ঝুঁকি কম হয়।