বেসরকারি সংস্থা আইইডির আদিবাসী সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পের পরিসংখ্যানে উল্লেখ আছে, বর্তমানে শেরপুর জেলায় গারো ২৬ হাজার, বর্মণ ২২ হাজার, কোচ ৪ হাজার, হাজং ৩ হাজার, হদি ৩ হাজার ৫০০, ডালু ১৫০০, বানাই ১৫০ জনের বসবাস। শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তজুড়ে সাতটি সম্প্রদায়ের ৬০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। এরমধ্যে গারো, বর্মণ, কোচ ও হদি সম্প্রদায়ের সংখ্যাই বেশি।
স্থানীয় ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর ক্লোডিয়া নকরেক কেয়া বলেন, ‘আমরা এক সময় আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলতাম। কিন্তু এখন বাংলাভাষায় কথা বলি। আমাদের আগের ঐতিহ্যগুলো আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। স্কুল, কলেজে আমাদের ভাষার কোনো চর্চাই নাই। আমরা শুনেছি, স্কুলে আমাদের ভাষার বই দেওয়া হয়েছে; কিন্তু কোনো শিক্ষক দেওয়া হয়নি। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই আমাদের ভাষার শিক্ষক দেওয়ার জন্য।’
সুকেশ বলেন, ‘আমরা বর্মণ। অথচ আমরা বর্মণ ভাষায় কথা বলার পারি না। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি। সরকার আমাদের ভাষার বই চালু করলে আমাদের ভাষাটা টিকে থাকত।’
শেরপুর আইইডি আদিবাসী সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পর আদিবাসী নেতা সুমন্ত বর্মণ বলেন, এক সময় শেরপুর জেলায় সব আদিবাসীদের নিজস্ব মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি ছিল। এদের জন্য একটি সাংস্কৃতিক একাডেমি না থাকায় জেলায় আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার পথে। তবে ইতোমধ্যে গারো ভাষা পাঠ্যবইয়ে লিপিবদ্ধ হয়েছে; কিন্তু স্কুলে বইয়ের পাশাপাশি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এতে শিক্ষক সংকটের কারণে গারো ভাষার বইটা পড়ানো হচ্ছে না। আমরা শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের সঙ্গে নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।
শিক্ষক সংকটের কথা স্বীকার করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ভাষাভিত্তিক শিক্ষক তৈরি প্রচেষ্টা আছে সরকারের। আপাতত আমরা একটু সংকটে আছি।’
আর ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, শেরপুর জেলার সাত ধরনের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর জন্য ইতোমধ্যেই সাংস্কৃতিক একাডেমি স্থাপনের প্রস্তাব সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাদের ভাষা সংরক্ষণের জন্য আমরা আমাদের যে জাতীয় গণ গন্থাগার আছে সেটির মাধ্যমে উদ্যোগ নিচ্ছি।