Home ইতিহাস ও ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে সাত ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর ভাষা

হারিয়ে যাচ্ছে সাত ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর ভাষা

ছবি সংগৃহীত
শাহরিয়ার শাকির
শেরপুর: হারিয়ে যাচ্ছে শেরপুরের সাত ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি। গারো, কোচ, হাজং, বানাই, বর্মণ, হদি ও ডালু সম্প্রদায়ের মাতৃভাষা আজ বিলুপ্তির পথে।
এদের মধ্যে গারো ও কোচরা তাদের পরিবারে টিকিয়ে রেখেছে মাতৃভাষা। কিন্তু তাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে বাংলা ভাষায়। কেননা, বিদ্যালয়গুলোতে এদের নিজ ভাষার দুয়েকটি পাঠ্যবই থাকলেও তা পড়ানোর জন্য নেই কোনো শিক্ষক। নিজস্ব ভাষা রক্ষার্থে তাদের দরকার প্রতিটি স্কুলে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিক্ষক ও একটি সাংস্কৃতিক একাডেমি।

বেসরকারি সংস্থা আইইডির আদিবাসী সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পের পরিসংখ্যানে উল্লেখ আছে, বর্তমানে শেরপুর জেলায় গারো ২৬ হাজার, বর্মণ ২২ হাজার, কোচ ৪ হাজার, হাজং ৩ হাজার, হদি ৩ হাজার ৫০০, ডালু ১৫০০, বানাই ১৫০ জনের বসবাস। শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তজুড়ে সাতটি সম্প্রদায়ের ৬০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। এরমধ্যে গারো, বর্মণ, কোচ ও হদি সম্প্রদায়ের সংখ্যাই বেশি।

এক সময় সমৃদ্ধ ভাষা ও সংস্কৃতি থাকলেও, সময়ের সঙ্গে ভিন্ন এক সংস্কৃতিতে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে চর্চা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ভুলতে বসেছে নিজস্ব মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি। এদের একটি অংশ শিক্ষিত হচ্ছে আধুনিক শিক্ষায়; আর অল্প কিছু স্কুলে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ধরে রাখার চেষ্টা করা হলেও শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিনের।

স্থানীয় ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর ক্লোডিয়া নকরেক কেয়া বলেন, ‘আমরা এক সময় আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলতাম। কিন্তু এখন বাংলাভাষায় কথা বলি। আমাদের আগের ঐতিহ্যগুলো আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। স্কুল, কলেজে আমাদের ভাষার কোনো চর্চাই নাই। আমরা শুনেছি, স্কুলে আমাদের ভাষার বই দেওয়া হয়েছে; কিন্তু কোনো শিক্ষক দেওয়া হয়নি। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই আমাদের ভাষার শিক্ষক দেওয়ার জন্য।’

শিউলি মারাক বলেন, আমাদের ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের ভাষায় কথা বলতে চাই।

সুকেশ বলেন, ‘আমরা বর্মণ। অথচ আমরা বর্মণ ভাষায় কথা বলার পারি না। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি। সরকার আমাদের ভাষার বই চালু করলে আমাদের ভাষাটা টিকে থাকত।’

শেরপুর আইইডি আদিবাসী সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পর আদিবাসী নেতা সুমন্ত বর্মণ বলেন, এক সময় শেরপুর জেলায় সব আদিবাসীদের নিজস্ব মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি ছিল। এদের জন্য একটি সাংস্কৃতিক একাডেমি না থাকায় জেলায় আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার পথে। তবে ইতোমধ্যে গারো ভাষা পাঠ্যবইয়ে লিপিবদ্ধ হয়েছে; কিন্তু স্কুলে বইয়ের পাশাপাশি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এতে শিক্ষক সংকটের কারণে গারো ভাষার বইটা পড়ানো হচ্ছে না। আমরা শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের সঙ্গে নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।

শিক্ষক সংকটের কথা স্বীকার করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ভাষাভিত্তিক শিক্ষক তৈরি প্রচেষ্টা আছে সরকারের। আপাতত আমরা একটু সংকটে আছি।’

আর ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, শেরপুর জেলার সাত ধরনের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর জন্য ইতোমধ্যেই সাংস্কৃতিক একাডেমি স্থাপনের প্রস্তাব সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাদের ভাষা সংরক্ষণের জন্য আমরা আমাদের যে জাতীয় গণ গন্থাগার আছে সেটির মাধ্যমে উদ্যোগ নিচ্ছি।