মো. আল আমিন, কিশোরগঞ্জ: প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। ঐতিহ্য ও রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে পরপর তিনবার বন্দুকের ফাঁকা গুলি ছোড়া হবে।
এবার ১৯৮তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে শোলাকিয়া ঈদগাহে। জামাতে ইমামতি করবেন ঈদগাহের মুতাওয়াল্লি ও ঈদগাহ কমিটির নিযুক্ত ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি। ঈদের দিন ঈদগাহে আসার প্রতিটি রাস্তায় থাকবে তল্লাশি চৌকি। মোতায়েন থাকবে বিপুল সংখ্যক র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার। সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। থাকবে সেনা সদস্যদের বিশেষ টহল।
নজরদারির জন্য মাঠে ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়াও ঈদ জামাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্যামেরাযুক্ত শক্তিশালী চারটি ড্রোন মুসল্লিদের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করবে। তিনটি আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে মেটাল ডিটেক্টরের তল্লাশির মাধ্যমে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করানো হবে। ঈদগাহে মুসল্লিরা শুধু জায়নামাজ ও জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে ছাতা, ব্যাগ ও অন্যান্য ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
র্যাব-১৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি নাইমুল হাসান বলেন, ‘নিরাপত্তা জোরদার করতে পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও র্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নাশকতাকারী, ছিনতানকারী, চাঁদাবাজ, পকেটমার ও মলমপার্টিসহ অন্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা কন্ট্রোল রুম স্থাপন করবো। ওয়াচ টাওয়ার থাকবে, এর মাধ্যমে আমরা সার্ভিলেন্স করব। সন্দেহভাজন ব্যাক্তিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করব। ড্রোন ও বায়নোকুলার থাকবে। ওয়াচ টাওয়ারে স্বয়ংক্রিয় স্নাইপার রাইফেল থাকবে যেন যেকোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধ করতে পারা যায়। বেশকিছু প্যাট্রোল কার থাকবে, যেগুলো শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল দেবে।’
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহে মুসল্লিদের আসার সুবিধার্থে সরকারের পক্ষ থেকে ‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’ নামে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুসল্লিদের স্বাগত জানাতে জেলা শহরের মোড়ে মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে শৈল্পিক তোড়ন।
উল্লেখ্য, শোলাকিয়া মাঠ নিয়ে দুটি জনশ্রুতির বর্ণনা আছে। এর একটি হলো, মোগল আমলে এখানকার পরগনার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল শ’ লাখ টাকা। মানে এক কোটি টাকা। কালের বিবর্তনে শ’ লাখ থেকে বর্তমান শোলাকিয়া হয়েছে। আরেকটি জনশ্রুতি হলো, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহে সোয়া লাখ মুসল্লি একসাথে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এটি শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।