শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বীচ হ্যাচারির উৎপাদন গত কয়েকবছর ধরে বন্ধ রয়েছে। কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট চেষ্টা করেও তা শুরু করতে পারেনি। ফলে ব্যবসায় লোকসানসহ নানা সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছে বীচ হ্যাচারি। যে কোম্পানির ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনা করার সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিরীক্ষক।
বীচ হ্যাচারির ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় এই শঙ্কার কথা জানিয়েছেন নিরীক্ষক। সরকার মেরিন ড্রাইভ রোড তৈরি করতে বীচ হ্যাচারির কারখানার ভবন ও হ্যাচারি ইক্যুইপমেন্ট ভেঙ্গে ফেলেছে। এছাড়া হ্যাচারি প্লান্টের কিছু জমি অধিগ্রহণ করেছে। ফলে কোম্পানির পুরো বাণিজ্যিক কার্যক্রম ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে। কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট পদক্ষেপ নিয়েও চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত উৎপাদন শুরু করতে পারেনি। এর ফলে কোম্পানিটি কয়েকবছর ধরে বড় লোকসান গুণছে। যাতে সংরক্ষিত আয় ১ কোটি ৫ লাখ টাকা ঋণাত্মক হয়ে গেছে। এসব বিষয়াদিসহ অন্যান্য বিষয়গুলো কোম্পানির ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনা করার সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ফাইন্যান্সিং প্রজেক্টের জন্য ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ও ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য ৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে বীচ হ্যাচারি। এই ঋণের বিপরীতে ৪৯ লাখ টাকা সুদজনিত ব্যয় হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। তবে এই ঋণ ছাড়পত্রের অপর্যাপ্ত অডিট দলিলাদি, ব্যাংক ঋণের স্টেটমেন্ট, ঋণ পরিশোধ সিডিউল ও বিদ্যমান ঋণের সনদ না থাকায়, আর্থিক হিসাবে পদত্ত ঋণের তথ্যের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। আর কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আইএএস-১ অনুযায়ী, ওই ঋণের চলতি ও দীর্ঘমেয়াদী অংশ আলাদা করে দেখায় না।
বীচ হ্যাচারির ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে পাওনাবাবদ ২৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। গত কয়েকবছর ধরে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ সত্ত্বেও ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই পাওনা রয়েছে। যা আদায়ের অতি ঝুঁকিতে রয়েছে। তারপরেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এর বিপরীতে কোন সঞ্চিতি গঠন করে না। এর মাধ্যমে ৩০ জুন কোম্পানির সম্পদ বেশি দেখানো হয়েছে। একইসঙ্গে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নীট লোকসানের পরিমাণ কম দেখানো হয়েছে।
বীচ হ্যাচারি স্থায়ী সম্পদ বাবদ আর্থিক হিসাবে ২১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নীরিক্ষককে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেনি। ওই সম্পদের আইটেম, চিহ্নিত কোড, সম্পদের লোকেসন, বর্তমান অবস্থা, ক্রয় তারিখ ও ক্রয় মূল্য দেখাতে পারেনি। এর ফলে নিরীক্ষক ওই সম্পদের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
আয়কর কর্তৃপক্ষ ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা দাবি করে বীচ হ্যাচারিকে চিঠি দেয়। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই দাবি মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত সঞ্চিতি গঠন করেনি। তারা ওই দাবির বিপরীতে আপীল করেছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ্যাডভান্স, ডিপোজিট ও অগ্রিম প্রদান হিসাবে ৩২ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। যা আদায়যোগ্য হিসাবে ভাল অবস্থানে রয়েছে বলে কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের দাবি।