বিশেষ প্রতিনিধি
ঢাকা: সরকারি খাতে আমদানি করা পণ্য সমুদ্রপথে পরিবহণে জাতীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ( বিএসসি ) কে নিয়োগ দিতে হবে। সংস্থাটি তাদের নিজস্ব জাহাজে অথবা ভাড়া করা জাহাজে পরিবহণ করবে।
এ সিদ্ধান্ত হয়েছে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায়। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন আইন-২০১৭ এবং বাংলাদেশ পতাকাবাহী জাহাজ ( স্বার্থরক্ষা) আইন-২০১৯ অনুযায়ী সরকারি তহবিলের অর্থে পরিবাহিত পণ্য বিএসসির জাহাজ অথবা বিএসসি কর্তৃক ভাড়া করা জাহাজে পরিবহণ করতে হবে।’
সরকারি কর্মকর্তাদের বাংলাদেশে বিমানে ভ্রমণে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সরকারি অফিসের জন্য গাড়ি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে নেয়া বাধ্যতামূলক। সরকারি সম্পত্ত্বি বিমা করার ক্ষেত্রে সাধারণ বিমা কর্পোরেশনের মাধ্যমে কভারেজ গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিএসসি অনুরূপ সুবিধা নিতে পারছে না।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন ( বিসিআইসি ), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ( বিপিসি), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ( বিএডিসি ), খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা প্রচুর আমদানি করে। এক্ষেত্রে বিশেষত বিসিআইসি কর্তৃক সার আমদানিতে বিএসসি’র সহযোগিতা পুরোপুরি নেয়া হচ্ছে না।
বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠানটির সহযোগিতা নেয়ার জন্য জন্য দফায় দফায় অনুরোধ জানানো হয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন ( বিসিআইসি)কে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকেও শিল্প মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে দেয়া হয় পত্র। তারপরও বিসিআইসি গড়িমসি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক আহূত আন্তঃ মন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সরকারি খাতে আমদানি করা পণ্য সমুদ্রপথে পরিবহণে বিএসসি’কে নিয়োগ দিতে হবে। সংস্থাটি তাদের নিজস্ব জাহাজে অথবা ভাড়া করা জাহাজে পরিবহণ করবে পণ্য।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আশংকা
অবশ্য আন্তঃ মন্ত্রণালয় সভায় শিল্প মন্ত্রণালয় প্রতিনিধি আশংকা করেন যে আমদানিকৃত সার বিএসসি’র সহযোগিতায় পরিবহন করা হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কৃষক পর্যায়ে যথাসময়ে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। আরও উল্লেখ করা হয় যে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বিসিআইসি’র কাজ সার উৎপাদন করা, আমদানি করা নয়। তা সত্ত্বেও সরকারের চাহিদা মোতাবেক প্রতি বছর প্রায় ১৩ লাখ টন সার আমদানি, পরিবহণ ও কৃষক পর্যায়ে বিতরণ করা হচ্ছে।
বিসিআইসি’র পক্ষ থেকে সভাকে জানানো হয় যে স্পর্শকাতর পণ্য বিবেচনায় সার আমদানিতে লোড পোর্ট হতে বিসিআইসির গুদাম পর্যন্ত প্যাকেজ ভিত্তিতে পরিবহণের দরপত্র, জাহাজ ভাড়া করা হয়। এ কারণে বিদ্যমান সরবরাহ চেইনের কোন ধরনের জটিলতা ছাড়া সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে।
বিএডিসি কর্তৃক বিএসসি’র মাধ্যমে ভাড়া করা দু’টি জাহাজের মূল মালিকের ভাড়া অনাদায়ী থাকায় দায়ের করা মামলায় একতরফা রায় হয়েছিল বিএডিসির বিরুদ্ধে। বিদেশের বন্দরে জাহাজ আটকের ঘটনাও উল্লেখ করা হয় সভায়।
বাংলাদেশ পতাকাবাহী জাহাজের ( স্বার্থরক্ষা ) আইন-২০১৯ ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। সরকারি তহবিলের অর্থে সমুদ্রপথের পণ্য বিএসসি’র মাধ্যমে পরিবহণে বাধ্যবাধকতা রয়েছে এই আইন অনুসারে। আন্তঃ মন্ত্রণালয় চার্টারিং কমিটির গ্রাউন্ড রুল, সরকারি নির্দেশনা এবং পিপিআর ২০০৮ অনুসারে বিএসসি কর্তৃক দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাহাজ চার্টারিং কার্যক্রম সম্পাদন হওয়া আবশ্যক।
বিএসসি’র পরিকল্পনা
সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিএসসি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্পের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেশ কিছু সংখ্যক জাহাজ ক্রয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা ও অন্যান্য কাঁচামাল পরিবহনের জন্য জাহাজ কেনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তাছাড়া গৃহস্থালি ও শিল্পের জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকার কর্তৃক এলএনজি আমদানির যে কর্মসূচি তাতে সহায়তার জন্য এলএনজি ক্যারিয়ার সংগ্রহের প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে।
২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বিএসসি’র মুনাফা ছিল ১২ কোটি ৫২ লাখ টাকা । ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে মোট আয় ছিল ২২২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং মোট ব্যয় ছিল ১৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। নীট মুনাফা হয়েছে ৫৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা।