Home Second Lead বগুড়ায় সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ

বগুড়ায় সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

বগুড়া: লাভজনক ফসল হিসাবে বগুড়ায় কৃষকরা সরিষা আবাদের দিকে ব্যাপকভাবে ঝুঁকেছে। গত দশ বছরর মধ্যে এবার বগুড়ায় সবচেয়ে বেশি পরিমান সরিষার আবাদ হয়েছে। গ্রামের পর গ্রামের মাঠ এখন সরিষার হলুদ ফুলে ভরা। আর কিছুদিন পরেই কৃষকরা আবাদ মাঠ থেকে ঘরে তুলতে শুরু করবেন। গত বছর সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এখন এনিয়ে নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন। তাদের আশা এবারও তারা ভালো দাম পাবেন। সরিষা আবাদে ভালো ফলনের আশায় এবার পতিত জমি গুলোও আবাদে ভরে উঠেছে। কৃষি বিভাগ বলছে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে সরিষা আবাদে কৃষকদের উৎসাহ ও প্রনোদনামুলক সার এবং বীজ দেয়ায় জেলার কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

বগুড়ার কাহালু উপজেলা কানাড় এলাকার ক্ষুদ্র কৃষক আরিফুল জানালেন, গত বছর তিনি ২ বিঘা জমি পত্তনি নিয়ে সরিষার আবাদ করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে সরিষা বিক্রি করে ৩১ হাজার টাকা লাভ করেছিলেন। এবার তিনি পত্তনি নিতে গিয়ে আর জমি পেয়েছেন সামান্য। সরিষা নিয়ে আগ্রহের কারণে পতিত জমি গুলো আগে থেকেই পত্তন হয়ে গেছে। জমি পত্তনির টাকাও বেড়েছে বিঘা প্রতি২/৩ হাজার টাকা করে। আগ্রহ থাকার পরেও পত্তনি জমি না পাওয়ার কারণে এবার আরিফুল বেশি জমিতে সরিষা আবাদ করতে পারেননি। বগুড়া সদরের কৈচরের কাড়াল গ্রামের ইশহাক জানালেন, গত বছর তিনি ১৬ শতক জমিতে সরিষা আবাদ করেছিলেন। প্রতিমন সরিষার দাম পেয়েছিলেন ৩৮শ’ টাকা পর্যন্ত । এবার আবাদ করছেন ২ বিঘা জমিতে। একই এলাকার মোজাম্মেল গত বছর সরিষায় ভালো লাভ করায় এবার আবাদের পরিমান বাড়ানোর কথা জানিয়ে বললেন প্রতি বিঘায় অন্ততঃ ৬মন ফলন পাওয়ার আশা করছেন। শহরদিঘী গ্রামের রফিকুল শুধু নিজেই ৫০ শতক জমিতে আবাদ করেননি। মেয়ে রুবি বেগম ও জামাই আরো ৩০ শতক জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। ফাঁপোেেরর নজরুল ইসলাম গত বছর ২ বিঘা জমিতে আবাদ করলেও এবার সরিষা আবাদ করেছেন প্রায় পৌনে চার বিঘা জমিতে। কৃষকদের কথা- সরিষা আবাদে পরিশ্রম ও খরচ দুটোই কম। আবাদ ঘরে তোলা যায় স্বল্প সময়ের মধ্যে। উপরন্তু লাভ অন্য ফসলের তুলনায় বেশি। এছাড়া সরিষা আবাদের পর বোরো আবাদে সারের খরচ কমে যায়।

বগুড়া কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার জেলায় সরিষার আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ৩১ হাজার ৫শ’ মেট্রিক হেক্টর জমি থাকলেও তা বেড়ে ৩৭ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এটি প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি বেশি। গত বছরে আবাদ হয়েছিলো ২৭ হাজার৬১৭ হেত্টর জমিতে। কৃষি বিভাগ আরো জানায় এবার যে পরিমান জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে তা গত ১০ বছরে হয়নি। ২০১৪ সালে জেলায় সরিষার আবাদ হয়েছিলো ২২ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে। ২০১৬ সালে আবাদ হয় ২৮ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে। এর পরের ৫ বছর আবাদ না বেড়ে কিছু কমে। গত বছর থেকে সরিষা আবাদ আবার বাড়তে শুরু করে এবং এবছর এটি গত ১০ বছরের মধ্যে জেলায় সর্বোচ্চ আবাদে গিয়ে পৌঁছে। বগুড়া কৃষি সম্প্রসরাণ অধিদপ্তর জানিয়েছে ভোজ্য তেলে স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জনে সরকার সরিষা আবাদে প্রতি বছর ২০ শতাংশ করে বেশি জমিতে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। এটি অর্জন হলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভোজ্য তেল সরিষার ক্ষেত্রে দেশ স্বয়ং সম্পুর্ণতা অর্জন করবে এবং একই সঙ্গে অন্য ভোজ্য তেলের আমদানী কমে যাবে। এজন্য কৃষি মন্ত্রনায় সরিষা চাষে উদ্ধুদ্ধকরণে প্রনোদনা দিচ্ছে। বগুড়া কৃষি সম্প্রসরাণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক মোঃ এনামুল হক ভোজ্য তেলে স্বয়ংসম্পুর্ণতা অজর্নে প্রনোদনা দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, এবার বগুড়ায় ৩০ হাজার কৃষককে সরিষা আবাদে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। একারণে কৃষকরা উৎসাহিত হয়ে বেশি জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন।