এমরান হোসেন, জামালপুর থেকে: কৃষির উন্নতির মাধ্যমেই বদলে যেতে শুরু করেছে জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার গ্রামীণ অর্থনীতি। সমৃদ্ধ হচ্ছে বকশীগঞ্জ, ঘুরে যাচ্ছে অর্থনীতির চাকা। ফলে কৃষকরা আগের চেয়ে লাভজনক ফসল উৎপাদন ও অর্থকরী ফসলের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। আর তাতে পাল্টে যাচ্ছে অর্থনীতির গতি প্রকৃতি।
জানা গেছে, বকশীগঞ্জ নানা রকম বৈচিত্রে ঘেরা একটি উপজেলা। উপজেলার বেশির ভাগই নদী-নালা, খাল-বিল ও চরাঞ্চল।তাই প্রতিবছর বন্যা,খরা ও প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষকরা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও মার্কেটিংয়ের অভাব সহ নানা কারণে ৫ বছর আগেও কৃষিতে অনেক পিছিয়ে থাকলেও একমাত্র কৃষির উপর নির্ভর করেই বদলে যেতে শুরু করেছে এই উপজেলার মানুষের ভাগ্য।
এই পরিবর্তনের জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অবদান অসামান্য। তাদের কৌশল, কাজের বাস্তবায়ন ও কৃষকের সাথে নিবিড় সম্পর্কের কারণেই কৃষকরা তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছেন।
কৃষি প্রধান উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে মেরুরচর, সাধুরপাড়া, বগারচর, নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগই চর এলাকা। এছাড়া বকশীগঞ্জ সদর, বাট্টাজোড় ও ধানুয়া কামালপুর এই তিন ইউনিয়ন কৃষি উপযোগী হলেও বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে।
বকশীগঞ্জে কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শের কারণে চলতি মওসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ার পাশাপাশি রোপা আমন চাষের পর বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করা যায় বলে এবার ২ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। যা গত ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের চেয়ে ৬’শ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষার চাষ করা হয়। সরিষা তোলার পর ওই জমিতেই আবার বোরো চাষ করা হবে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটেছে।
উচ্চ লাভজনক হিসেবে ভুট্টা চাষও করা হয়েছে চাহিদার চেয়ে বেশি জমিতে। বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ মণ ভুট্টার ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ। স্বল্প খরচে, অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভ হয় এই ফসলে। ফলে গত মৌসুমের চেয়ে ভুট্টা চাষেও আরো অগ্রগতি হয়েছে এই উপজেলায়। বেশি জমির মালিক ও অল্প জমির মালিকরাও ঝুঁকে পড়েছেন ভুট্টা চাষে। সাধুরপাড়া, বগারচর, মেরুরচর ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এই তিনটি ইউনিয়নের চরাঞ্চল জুড়ে রয়েছে ভুট্টা চাষ। ভুট্টার পাতা গবাদিপশুর জন্য খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায় বলে গবাদি পশু পালনেও ভূমিকা রাখছে ভুট্টার চাষ।
এদিকে এবার কাঁচা সবজি চাষে বিপ্লব ঘটেছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। শীতকালীন সবজি চাষ পাল্টে দিয়েছেন চরের মানুষকে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, আলু, বেগুন, করলা, গাজর চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা, উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের সঠিক তদারকির কারণে আগাম জাতের সবজি হওয়ায় অনেক লাভবান হয়েছেন এই এলাকার সবজি চাষিরা।
বকশীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সূর্যনগর পূর্ব পাড়া গ্রামের নারী চাষি মুসলিমা বেগম জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় আমি আগাম জাতের ফুলকপির চাষ করি। ২৫ শতাংশ জমিতে ফুলকপির চাষ করতে ১০ হাজার টাকা খরচ হলেও এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আরও ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর আজাদ জানান, কৃষিতে অপার সম্ভাবনাময় একটি উপজেলার নাম বকশীগঞ্জ। আগের চেয়ে এখানকার কৃষকরা অর্থকরি ফসল চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এই এলাকার মানুষকে কৃষিতে সমৃদ্ধিশালী করতে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। পাশাপাশি আমরা কৃষককে কৃষির মাধ্যমে উন্নতির দিকে ধাবিত করতে সব সময় পরামর্শ ও সরকারের দেওয়া সকল সুযোগ-সুবিধা কৃষকের কাছে পৌছে দিয়ে তাঁদের পাশে রয়েছি। কৃষি ও কৃষকের উন্নতি ঘটাতে এবং অর্থনীতির উন্নয়নে কৃষিকে প্রাধান্য দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।