Home আইন-আদালত সাজা বাতিল: ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবেন কামরুল

সাজা বাতিল: ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবেন কামরুল

এসএসসি পরীক্ষার সনদ জালিয়াতির ঘটনায় নামের মিল থাকায় ১৫ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত
নোয়াখালীর নিরপরাধ কামরুল ইসলামের সাজা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। কামরুল ইসলাম চাইলে দুদকের কাছে ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় প্রদান করেন।

এছাড়াও আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভুল তদন্তে নোয়াখালীর নিরপরাধ কামরুল ইসলামের ১৫ বছরের সাজার রায় বাতিল করেন। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেছে দালত।

কামরুল ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী। আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।

এর আগে দুদকের ভুল তদন্তে নোয়াখালীর নিরপরাধ কামরুল ইসলাম ১৫ বছরের সাজা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। এদিকে, হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে ভুলের কথা স্বীকার করেছে ক্ষমা চেয়েছে দুদক।

নথি থেকে জানা যায়, কামরুল ইসলাম এসএসসির মার্কসিট ও সনদপত্রে জালিয়াতি করে নোয়াখালীর মাইজদী কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন। পরে জালিয়াতির ঘটনা নজরে আসায় কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগে ২০০৩ সালে মামলা করেন শহীদুল ইসলাম। মামলার এজাহারে আসামির ঠিকানা ‘পশ্চিম রাজারামপুর’ থেকে হয়ে যায় ‘পূর্ব রাজারামপুর’। এই ব্যাপারে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরোর তদন্ত কর্মকর্তা (দুদকের উপপরিচালক) মাহফুজ ইকবাল এ মামলার তদন্ত করেন এবং ভুল আসামির বিরুদ্ধেই নোয়াখালীর বিচারিক আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তিনি।

প্রায় ১০ বছর পর ২০১৩ সালে দুদক ওই চার্জশিট দাখিল করে। পরে আসামিকে পলাতক দেখিয়ে নোয়াখালীর বিচারক আদালতে শুরু হয় এর বিচার কার্যক্রম। এ মামলার চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালে রায় দেন আদালত। জালিয়াতির অপরাধে মোট ৩টি ধারায় ভুল আসামিকে (পূর্ব রাজারামপুরের মো. কামরুল ইসলাম) পাঁচ বছর করে মোট ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।

আদালতের রায়ের পর আসামিকে ধরতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন নোয়াখালীর আদালত। নামের মিল এবং ঠিকানার ভুলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পৌঁছায় পূর্ব রাজারামপুরে। এরপর দিশেহারা কামরুল দ্বারস্থ হন আইনজীবীর। আইনজীবীর পরামর্শে মামলা ও পরোয়ানা থেকে বাঁচতে হাইকোর্টে রিট দাখিল করেন। গেল বছর ৫ নভেম্বর হাইকোর্ট দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ঘটনার ব্যাখ্যা চান এবং এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে রুল জারি করেন।

একজন নির্দোষ মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলের ঘটনা ‘সরল বিশ্বাসে’ ঘটেছে বলে আদালতে দুদকের বয়ান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ভুল তদন্তের মাধ্যমে জালিয়াতি মামলায় মোহাম্মাদ কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল ও সাজার ঘটনায় উচ্চ আদালতে দুদকের ভুল স্বীকার এবং ‘মামলার এজাহার থেকে তদন্তের সব পর্যায়ে ভুল হয়েছে’ মর্মে দুদকের আইনজীবীর স্বীকারোক্তিই প্রমাণ করে যে, প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদকের পেশাদারিত্ব দুর্বল ও অদক্ষতায় ভরা।’