বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:
আগামীকাল রবিবার থেকে সারা দেশে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি (ডিশ) সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এবং ক্যাবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)। রাজধানীর সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ঝুলে থাকা তারের জঞ্জাল কাটার প্রতিবাদে এমন সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠন দুটি।
সংগঠন দুটির নেতাদের দাবি, তার কাটার ফলে তারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাদের কোনো ধরনের সময় না দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ইন্টারনেট ও ডিশ-সংযোগের ঝুলন্ত তার বা ওভারহেড ক্যাবল কেটে ফেলছে। এরই মধ্যে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্যাবল কাটা হয়েছে বলে তারা দাবি করছেন, যা নতুন করে আর ব্যবহারযোগ্য নয়। ভূগর্ভস্থ ক্যাবল সেবা (এনটিটিএন) সব জায়গায় না থাকার কারণে তাদের ঝুলন্ত তারের মাধ্যমে সেবা দিতে হচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থা পরিপূর্ণভাবে চালু হলে সংগঠন দুটি নিজেরাই তার নামিয়ে মাটির নিচ দিয়ে সেবাদান অব্যাহত রাখবে।
সংগঠন দুটি বলছে, আর ক্যাবল কাটা হবে না এবং বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যৌক্তিক সময় দেওয়া হবে—এমন লিখিত আশ্বাস পেলেই সংগঠন দুটি তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে। তবে আজ শনিবার তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকার অথবা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন এক নেতা।
ডিএসসিসি বলছে, বিদ্যুতের খুঁটিতে তার ঝুলিয়ে সংগঠন দুটি সেবা দিচ্ছে। সংগঠন দুটি এভাবে সেবা দেওয়ার বিষয়ে সিটি করপোরেশন থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। উচ্চমাত্রার বিদ্যুত্ পরিবাহী তারের সঙ্গে ইন্টারনেট, টেলিফোন ও ক্যাবল টিভির এসব তার অপসারণে সরকার দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে আসছে। যদিও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ক্যাবল সরানোর জন্য দুই মাসের বেশি সময় দিয়েছে আইএসপিএবি ও কোয়াবকে। এছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ, এনটিটিএনগুলোকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য নির্দেশনা, ডাক্ট সার্ভিস তৈরি, রোড ক্রসিং ও পয়েন্ট তৈরির মতো উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের গ্রাহক সংখ্যা ৮৫ লাখ ৭১ হাজার। যদিও আইএসপিএবি বলছে সংখ্যা কোটির বেশি। বর্তমানে দেশে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৭৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হয়। এরমধ্যে ৯৫০ থেকে ১ হাজার জিবিপিএস ব্যবহার হয় ফিক্সড ব্রডব্যান্ডে। অবশিষ্ট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করেন মোবাইল অপারেটররা।
এদিকে ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, শেয়ারবাজার, ব্যাংক, এটিএম বুথ, করপোরেট হাউজসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সব খাতেই ব্রডব্যান্ডনির্ভর অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। সারা দেশে ক্যাবল টিভির সেবাও বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের অনলাইন স্কুল কার্যক্রমও বাধার মুখে পড়বে। এ ধর্মঘটে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ। ইন্টারনেটের তার কাটা পড়ায় অনেক এলাকার ব্যাংকের শাখা ও এটিএম বুথগুলোতে সেবা দিতে সমস্যায় পড়তে হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা।
দুই সিটির মেয়র বলছেন, সম্প্রতি সড়কে মাথার ওপর ঝুলে থাকা বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে বিপজ্জনকভাবে পেঁচিয়ে থাকা তারের জঙ্গল অপসারণে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা সিটি করপোরেশন। মাটির নিচ দিয়ে এসব সংযোগ থাকার কথা থাকলেও যত্রতত্র মাথার ওপর দিয়ে ক্যাব?ল টানা হচ্ছে। এতে নগরীর সৌন্দর্য বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি জনজীবনে ঝুঁকি বাড়ছে। বাড়ছে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা। ঝুলতে ঝুলতে অনেক স্থানে তারগুলো মাটি পর্যন্ত স্পর্শ করছে। এ কারণে অনেক পথচারী ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে পারেন না। এগুলো থেকে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। এছাড়া ঝুলে থাকা ডিশ বা ইন্টারনেটের ক্যাবল থেকে অগ্নিকাণ্ডও ঘটছে। কখনো দেখা যায়, পুরোনো তারে ত্রুটি দেখা দিলে সেগুলো না কেটেই নতুন তার লাগিয়ে দেয় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে তারের জঞ্জাল দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, উন্নত বিশ্বে বিদ্যুত্ সংযোগের মতো ইন্টারনেট বা স্যাটেলাইট সংযোগও রাস্তার নিচে লাইন টেনে বাড়িতে বা অফিসে সরবরাহ করা হয়। এজন্য তাদের কোনো তার বাইরে থেকে দৃশ্যমান থাকে না। মাথার ওপর দিয়ে এভাবে তার নেওয়াটা এমনিতেই অবৈধ। অনেক বছর ধরে এটা চলে আসছে। আর এখন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও উলটো সেটার পক্ষেই সাফাই আসছে। ইন্টারনেট বন্ধ করলে বিকল্প কী ব্যবস্থা হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে আবু নাছের বলেন, ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের পরিবর্তে অভিভাবকরা মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন।
আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, আমাদের মৌখিকভাবে বলা হচ্ছে, আন্দোলনে না যেতে। কিন্তু আমাদের কোনো উপায় নেই। ক্যাবল কাটা বন্ধ করা এবং বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত সময় দেওয়া হলো-এমন লিখিত ঘোষণা পেলেই কেবল আমরা সিদ্ধান্ত বদলাব। আইএসপিএবির পরিচালক নাজমুল করিম ভূঁইয়া বলেন, আমরা ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে নই। তবে সিটি করপোরেশন বলছে যে বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের করে নিতে হবে। তবে ঢাকা শহরে এই ধরনের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। যার কারণে আমরা ধর্মঘটে যাচ্ছি।
কোয়াবের সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, আমাদের হাতে কোনো বিকল্প নেই। আমাদের কর্মসূচিতে যেতেই হচ্ছে। ক্যাবল কাটার কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আমাদের ৩৫-৪০ শতাংশ নেটওয়ার্ক বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিকল্প উপায় বের না করে এসব যেন কাটা না হয়, সে বিষয়ে মেয়রদের সঙ্গে কথা বলেছি। আইএসপি, এনটিটিএনগুলোর সঙ্গেও কথা বলে সমাধানের জায়গায় পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সবার সঙ্গে বসে এর একটা সমাধান করা প্রয়োজন। রবিবার থেকে ইন্টারনেট-ক্যাবল বন্ধ হলে সেটা ভালো কিছু হবে না। এনটিটিএন, আইএসপি ও কোয়াবকে সঙ্গে নিয়ে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে শুধু ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরাই নয়, ক্যাবল অপারেটররাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে বিষয়টি দেখতে এবং সুরাহার জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন বলেও জানান।
দক্ষিণ সিটি ৪৮টি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৮৫টি বিদ্যুতের খুঁটি থেকে ঝুলন্ত ক্যাবল অপসারণ করা হয়েছে। উত্তরে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের কয়েকটি সড়ক ও গুলশান অ্যাভিনিউ সড়কের দুই পাশের ঝুলন্ত তারের জট অপসারণ করা হয়েছে। আরো কয়েকটি সড়কে অভিযান চালানো হয়েছে।