Home Third Lead সিআরবিতে কোন স্থাপনা হতে দেব না: মেয়র

সিআরবিতে কোন স্থাপনা হতে দেব না: মেয়র

নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা

শুধু হাসপাতাল নয়, সিআরবিতে কোনভাবেই কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সিআরবি একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য স্মারক। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও বৈভব হানি করে হাসপাতাল তো নয়, ইট-পাথরের কোন স্থাপনা গড়ে তুলতে দেয়া হবে না। চসিক’র বক্তব্য স্পষ্ট- প্রকৃতি ধ্বংস হতে দেব না। সিআরবি রক্ষার আন্দোলনে নিজের একাত্মতা ও সম্পৃক্ততা অঙ্গিকার করে মেয়র বলেন, সিআরবি রক্ষায় যা যা করণীয়, আমি তা করবো।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) সিআরবি রক্ষায় আন্দোলনকারী সংগঠন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে চসিক মেয়র এসব কথা বলেন।

নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের কো চেয়ারম্যান ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব প্রবীণ আইনজীবী ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, কো-চেয়ারম্যান রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক মফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুচ, বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, যুগ্ম সদস্যসচিব রাশেদ হাসান, কার্যকরী সদস্য চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু, স্বপন মজুমদার, সাংবাদিক আসিফ সিরাজ, সংস্কৃতিকর্মী অহিল সিরাজ, আবৃত্তিকার প্রনব চৌধুরী, ন্যাপ নেতা মিঠুল দাশগুপ্ত, শ্রমিক নেতা মো. সাইফুল, সাংবাদিক প্রীতম দাশ, সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল আজিম রনি প্রমুখ।

সভায় উপস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আক্তার সিআরবি রক্ষার আন্দোলনে তিনি নিজে এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে একাত্মতা প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহীদ চাকসু’র তৎকালীন নির্বাচিত জিএস সাবেক ছাত্রনেতা আবদুর রব’র কথা স্মরণ করে চবি উপাচার্য বলেন, শহীদ আবদুর রবসহ মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্যা শহীদের কবর সিআরবিতে রক্ষিত রয়েছে। এই কবরের ওপর কোন বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা শহীদদের প্রতি অবমাননার শামিল। সিআরবিতে কোন স্থাপনা নির্মাণ করতে আমরা দেব না।

সভায় মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর যেখানেই মুক্তিযুদ্ধ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্মৃতিময় স্থান রয়েছে সেগুলো যথাযথ সংরক্ষণ করে সেখানে ইতিহাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সৌধ স্মারক স্থাপনা গড়ে তোলা হবে।

তিনি বলেন, সিআবিতে হাসপাতাল নির্মাণ অশুভ অপতৎপরতারই অংশ। তিনি আরো বলেন, আমরা হাসপাতাল চাই। তবে সিআবিতে কোনভাবেই নয়। হাসপাতালের জন্য সিআরবি ছাড়া আরো অনেক বড় পরিসরের স্থান রয়েছে। চসিকেরও আছে। চাইলে আমরা হাসপাতালের জায়গা দেবো। কিন্তু তার আগেই আমরা নিশ্চয়তা চাই সিআবি-তে কোন হাসপাতাল নয়। তবে এটাও ঠিক হাসপাতাল হতে হবে সাধারণ মানুষের সেবার জন্য, বিত্তবানদের জন্য নয়।
চট্টগ্রাম মহানগরের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপ ও মাষ্টারপ্ল্যানে সিআরবিকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে কোন স্থাপনা নির্মাণ করতে দেয়া হবে না। হেরিটেজ সিআরবি’তে ড্যাপ’র সুপারিশ অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হবে। মেয়র বলেন, রেলওয়ের অনেক জায়গা রয়েছে, সেখানে হাসপাতাল নির্মাণ করা যায়। যদি রেলওয়ে জায়গা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে সিটি কর্পেরেশন জায়গা দিতে প্রস্তুত আছে বলেও জানান মেয়র।

সিআরবি রক্ষার আন্দোলনে জড়িতদের হুমকির বিষয়ে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম বিপ্লবীদের তীর্থভূমি। অনেক প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনা এই চট্টগ্রাম থেকেই হয়েছে। চট্টগ্রামের নানা জায়গায় ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক হীরক খন্ড ছড়িয়ে আছে। এখনে সিপাহী বিদ্রোহ, বৃটিশ বিরোধী সশস্ত্র লড়াইয়ে মাস্টার দা সূর্য সেনের বিপ্লবী কর্মকা-, ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ অনেক কালজয়ী ঘটনা সংঘটিত হয়েছিলো। এই গৌরাব দীপ্ত ঐতিহ্যের স্থানগুলো সনাক্ত করে রক্ষান-বেক্ষণ করা হবে নতুন প্রজন্মের ইতিহাস অন্বেষণ ও জ্ঞান চক্ষু উম্মীলনের স্বার্থেই। চট্টগ্রামের স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের কোন হুমকি-ধমকিতে দমানো যাবে। হুমকিদাতাদের হুশিয়ার করে মেয়র বলেন, বাড়াবাড়ি করবেন না। বাড়াবাড়ির পরিনাম ভালো হবে না।

নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের কো চেয়ারম্যান ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি জমি জনগণের সম্পত্তি। জনগণের সম্পত্তি কোনভাবেই বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় জনস্বার্থ বিরোধী কাজে ব্যবহার করা যায় না। সরকারি কোন জমি বেনিয়া, লুটেরাদের হাতে তুলে দেয়া যায় না। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা হয় না এমন কোন বেসরকারি প্রকল্পে সরকারি জমি ব্যবহার করা যায় না। সিআরবি’তে যে হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনা হয়েছে, সেটি শুধুমাত্র ধনীদের স্বার্থ রক্ষাকারী। এটি জনস্বার্থ পরিপন্থি প্রকল্প। এই প্রকল্পের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বোঝানো হয়েছে। সিআরবি রক্ষা আন্দোলন প্রসঙ্গে খ্যাতিমান এই চিকিৎসক বলেন, চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থ পরিপন্থি প্রকল্পের বিরুদ্ধে চলমান এই আন্দোলনে যারা পিঠ দেখিয়ে, মুখ লুকিয়ে রাখে- চট্টগ্রামবাসী তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।
নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বাংলাদেশ গেজেটভুক্ত প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-চউক’র প্রণিত ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান’এ সিআরবি’কে কালচারাল হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সিআরবি প্রোটেকটেড এরিয়া হিসেবে সংরক্ষনের নির্দেশ দেয়া হয়। সেই হিসেবে সিআরবি’তে কর্মাশিয়াল ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেয়া যাবে না। ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান’এ এটি সংরক্ষণের জন্য রেলওয়ে, চউক, সিটি কর্পোরেশনসহ সেবাদানকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সিআরবিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনা বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ সংবিধান পরিপন্থি কাজের শামিল।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চসিক’র প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, শৈবাল দাশ সুমনসহ অন্যান্য কাউন্সিলরবৃন্দ।- সংবাদ বিজ্ঞপ্তি