বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
কক্সবাজার: বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। রায়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত এবং কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব, কক্সবাজারের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
রায়ে এপিবিএন-এর তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহসহ সাতজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
আজ এ রায় ঘোষণা করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল। রায়ের পর্যবেক্ষণে এই হত্যাকাণ্ডকে পূর্বপরিকল্পিত বলে আখ্যায়িত করেছেন বিচারক। এরআগে দুপুর ২টার দিকে ওসি প্রদীপসহ মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে কক্সবাজার কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। এরপর তাদের আদালতের এজলাসে তোলা হয়। বেলা আড়াইটার দিকে আলোচিত এই মামলার ৩০০ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন বিচারক।
আলোচিত এ মামলার আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
রায় ঘোষণার সময় সিনহার বোন, মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস ও তার স্বামী আদালতের এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।
পৌনে ২টার দিকে ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপসহ ১৫ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
গত ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে রায় ঘোষণার জন্য আজ সোমবার (৩১ জানুয়ারি) দিন ধার্য করেন।
সকাল ৭টা থেকেই আদালত এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। পুলিশের পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তৎপর রয়েছে।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করে। আর ঘটনার পাঁচ দিন পর ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ পুলিশের ৯ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। মামলাগুলো তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
২০২০ সালের ৬ আগস্ট ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য, প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর ২০২০ সালের ২৪ জুন চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেব আত্মসমর্পণ করলে এ মামলার ১৫ আসামিই আইনের আওতায় আসেন।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম। এতে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সর্বশেষ ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলায় উভয়পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেন। যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের শেষ দিনে আদালত ৩১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।