বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
বেনাপোল: ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আমদানি পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৫ হাজারেরও অধিক ট্রাক। এর ফলে দু’দেশের আমদানি রপ্তানি ও রাজস্ব আদায়ে বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
গেল দু’ বছর আগেও এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতো। তবে বর্তমানে ভারতের বনগাঁ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ আমদানি রপ্তানি পণ্য কবে কখন বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করবে তা নিয়ন্ত্রণ করছে। যে কাজগুলো বন্দর কর্তৃপক্ষের করার কথা সে কাজগুলো এখন পৌর কর্তৃপক্ষ করছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নানা জটিলতা।
অভিযোগ রয়েছে যে, পেট্রাপোল বন্দরে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পণ্যবাহী ট্রাকের সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ করছে। আর এসব কারণে একদিকে যেমন আমদানি কম হচ্ছে অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের কালিতলা পার্কিং এ পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশের পর সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। পণ্যবাহী ট্রাকগুলি বনগাঁ পৌরসভার এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে ১ মাসের বেশি সময় লাগছে। আর ট্রাক প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা দিলে সময় লাগছে ৩ থেকে ৪ দিন। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য চলছে ধীর গতিতে। আগে যেখানে প্রতিদিন ৪/৫ শত পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতো এখন সেখানে ২০০ থেকে ২২০ টি ট্রাক প্রবেশ করছে।
আমদানি বাণিজ্য কম হওয়ায় বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায়ও কম হচ্ছে। ইচ্ছাকৃতভাবে জটিলতা তৈরি করে ট্রাক থেকে প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার চাঁদা। আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছে।
জানা যায়, বছরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে বেনাপোল কাস্টমস হাউস। ওপারে বনগাঁ পৌরসভার মেয়র শংকর আঢ্য (ডাকু) কালিতলা পার্কিং নামে একটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন পার্ক তৈরি করে সেখানে আমদানি বোঝাই ট্রাকগুলো জোর করে প্রবেশ করানো হয়ে থাকে। ট্রাক প্রতি সেখান থেকে ডেমারেজ বাবদ ২ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
এসব তথ্য জানান বেনাপোল সি এন্ড এফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মফিজুর রহমান সজন।
এখন ভারত থেকে পণ্যবাহী বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে সময় লাগছে ১ মাসের অধিক। পেট্রাপোল বন্দরে পণ্য আটকে থাকার কারণে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। এখানে বড় সমস্যা হলো বনগাঁ পৌর মেয়রের তৈরি করা সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের কারণে আমদানি পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। জটিলতার কারণে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে ৪ হাজারের অধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকে আছে। দেশের ৭৫ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচা মালামালের পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আসে এই বন্দর দিয়ে। ওপারের পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর এর প্রভাব পড়ছে। এসব কারণে আমদানি কারকরা বেনাপোল বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দর দিয়ে আমদানি করছেন। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ছে।
এমনটা জানিয়েছেন বেনাপোল কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার শামীমুর রহমান।
এসব সিন্ডিকেট থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে ব্যয়সায়ীরা এ বন্দর দিয়ে আমাদানি রপ্তানি বাণিজ্যে আগ্রহী হবেন আর সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। এজন্য দু-দেশের উপর মহলের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।