সিরাজগঞ্জ থেকে আব্দুল কুদ্দুস: শীতের আগমনের সাথে সাথে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে কম্বল পল্লী সরগরম হয়ে উঠেছে। জেলার কাজিপুরের চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের শিমুলদাইড় বাজারসহ আশপাশের প্রায় ১৩ গ্রামের ১০ সহস্রাধিক কারিগর ও তাদের পরিজনরা এখন ব্যাস্ত সময় পার করছেন। প্রতি বছরই এইসব গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে শীত যেন বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে আসে।
সরেজমিন দেখা গেছে, শিমুলদাইড় বাজার, কুনকুনিয়া, বরশিভাঙ্গা, শ্যামপুর, গাড়াবেড়, মাইজবাড়ি, চালিতাডাঙ্গা, মেঘাইসহ অত্র এলাকার ১৩টি গ্রামের ১০ হাজারের বেশি কারিগর মেশীন দিয়ে কম্বল তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেন দম ফেলার সময় নেই । গার্মেন্টসের ঝুট কাপর বা টুকরো কাপড় দিয়ে সেলাই করে এসব কম্বল তৈরি করা হয়। প্রতিদিন একজন শ্রমিক ২ থেকে ৩টা কম্বল তৈরি করে থাকেন। একেকটি কম্বল তৈরিতে মজুরি বাবদ ৭০-৮০ টাকা করে মজুরি পেয়ে থাকেন।
বাড়ির অন্যান্য কাজের ফাঁকে শীত মৌসুমে পরিবারের মেয়ে-ছেলে সকলেই মিলেমিশে কম্বল তৈরি করে থাকেন। এভাবে পরিবারের সকলে মিলে শীত মৌসুমে সংসারে বাড়তি আয় করে থাকেন।
কম্বল তৈরির কারিগর শিমুলদাইড় গ্রামের বিউটি বেগম বলেন, করোনাকালে হাতে কাজ না থাকায় সংসারে অভাব অনটন দেখা দিয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবারো কম্বল সেলাইয়ের কাজ শুরু করেছি। ফলে দুই ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে ভালই সংসার চলছে। তিনি জানান, দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলা হয়েছে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ায় ব্যস্ত হয়ে পরেছে। তবুও তারা পড়ালেখার ফাঁকে মায়েদের কম্বল তৈরির কাজে সহযোগিতা করছে ।
বিউটি বেগমের স্বামী মোতাহার হোসেন শিমুলদাইড় বাজারে পাওয়ার মেশিনে কাজ করেন। সেখানে তিনি প্রতিদিন ৭-৮শ টাকা মজুরি পান। আর এভাবেই এসেছে তাদের পরিবারে সচ্ছলতা। শীতের শুরুতে কম্বলের কাজ করে শুধু বিউটি-মোতাহারের পরিবারেই নয়, আরো অনেকের পরিবারেই এসেছে সচ্ছলতা ।
জানা গেছে, অত্র এলাকায় ১০ সহস্রাধিক পা মেশিন ছাড়াও শিমুলদাইড় বাজারে রয়েছে দেড় শতাধিক যন্ত্রচালিত পাওয়ার মেশিন। পাওয়ার মেশিনের কর্মরত আবুল হোসেন জানান, পাওয়ার মেশিনে প্রতিদিন ৪ জন কারিগর কাজ করে থকেন। প্রতিদিন ৪ কারিগর মিলে একটি পাওয়ার মেশিনের আওতায় ৯শ থেকে ১ হাজার পিস কম্বল তৈরি করে থাকেন । এক্ষেত্রে কারিগররা প্রতিজন ৮-৯শ টাকা আয় করে থাকেন।
শিমুলদাইড় বাজার এলাকায় তৈরি কম্বল দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকার এসে কিনে নিয়ে যায়। বিশেষ করে রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগা থেকে ব্যাপারী মহাজনরা এসে কম্বল ক্রয় করে থাকেন।
শিমুলদাইড় বাজার কমিটির সভাপতি আবু তাহের বলেন, এক সময় এই ব্যবসাটি স্থানীয় পর্যায়ে হলেও সময়ের ব্যবধানে এর পরিধি বেড়ে সারাদেশব্যাপী বিস্তার লাভ করেছে। বেপারী মহাজনদের জন্য সরকার স্বল্প সুদে ঋনের ব্যবস্থা করলে অনেক সুবিধা হতো।
চালিতাডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান মুকুল জানান, শীতের মৌসুমে শিমুলদাইড় বাজারে শত কোটি টাকার কম্বল ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। তবে হাতের কাছে ব্যাংক ব্যবস্থা না থাকায় ব্যাপারী মহাজনদের টাকা লেনদেন নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয়। তিনি শিমুলদাইড় বাজারে একটি ব্যাংকের শাখা খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান সরকারে কাছে।