Home কৃষি যমুনার চরাঞ্চলে নারীদের সংসার চলে শাক বেচে

যমুনার চরাঞ্চলে নারীদের সংসার চলে শাক বেচে

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জ: সারাদিন যমুনার চরাঞ্চলের বিভিন্ন মাঠ থেকে শাক তুলে বিক্রি করেই চলে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের কোবদাসপাড়া ও একডালা মহল্লার সাজেদা, আলেয়া, ছোরা, রমেচা, সোমেনা, আমেনা খাতুনদের সংসার। সুবিধা বঞ্চিত এই হতদরিদ্র বয়োবৃদ্ধ নারীরা শাক বিক্রির সামান্য আয়ে চালায় তাদের সংসার।

সিরাজগঞ্জ পৌর কাঁচা বাজার আড়াতের সামনে প্রতিদিন ভোরে দেখা মিলবে একদল বয়োবৃদ্ধ সহ বিভিন্ন বয়সী নারী বস্তায় সাক নিয়ে বিক্রির জন্য বসে আছেন। আড়তে আসা সবজির ক্রেতা এবং সাধারন মানুষ তাদের কাছ থেকে দরদাম করে শাক কিনছেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা এখানে এই শাক বিক্রি করে আসছেন। জীবন এবং জিবিকার তাগিদে হত দরিদ্র নারীরা কেবল একবেলা খেয়ে পরে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন কঠিন সংগ্রম করে চলেছেন।

শাক বিক্রি করতে আসা সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের কোবদাসপাড়া মহল্লার বয়োবৃদ্ধ ছোরা খাতুন জানান, স্বামী মারা গেছে অনন্ত ৪০ বছর আগে। ২ ছেলে থাকতেও তার কপালে তিন বেলা ভাত জোটেনা। এক সন্তান অসুস্থ। সন্তানদের পরিবারের ৬ সদস্যর জন্য তাকে এই বয়সেও এমন কাজ করতে হচ্ছে।

এই কাজ করেই তিনি সন্তানদের বড় করেছেন। একডালা মহল্লার আলেয়া খাতুন নামে আরেক বৃদ্ধ নারী জানান, তিনি প্রায় এক যুগ ধরে যমুনার চরাঞ্চল থেকে শাক তুলে বিক্রি করি। এর মাধ্যমে যা আয় হয় তাই দিয়ে কোন মতে সংসার চালান।

এই নারীদের মতো এসব মহল্লার অনেক বয়োবৃদ্ধ সহ বিভিন্ন বয়সী নারীর বেঁেচ থাকার একমাত্র আয়ের পথ চরাঞ্চল থেকে শাক তুলে তা বাজারে বিক্রি। নিজের কোন জায়গা জমি না থাকায়। তারা মহল্লার সরকারি জায়গায় অস্থায়ী ঝুঁপড়ী ঘর তুলে যুগ যুগ ধরে বসবাস করছেন।

প্রতিদিন শাক বিক্রি শেষে দলবেঁধে সিরাজগঞ্জ যমুনা নদীর হার্ডপয়েন্টের কাজিপুর ঘাট থেকে নৌকায় চড়ে দূর্গম যমুনানদী পাড়ি দিয়ে চরাঞ্চলের রুপসা, মেছড়া, কাওয়াকোলা, দোগাছি, বড় বয়ড়া, ছোট কয়ড়া, বয়ড়ার চর, কাটাংগার মাঠে মাঠে গিয়ে অন্যের জমি থেকে শাক তোলেন।

সারদিন শাক তুলে বস্তায় ভরে সন্ধার আগেই বাড়ি ফেরেন তারা। জীবনের ঝঁকি নিয়ে উত্তাল যমুনা পাড়ি দিয়ে এই নৌকায় আসা যাওয়া করতে তাদের ৬০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। দিনভর সংগ্রহ করা শাক রাতে আঁটি বেঁধে সকালে তা বিক্রি জন্য বাজারের আড়াতে নিয়ে আসেন। প্রতিদিন দেড় থেকে দু’শ টাকায় শাক বিক্রি করে করেন। এই সামান্য টাকা দিয়েই চলে  তাদের সংসার। এভাবেই বছরের পর বছর চলছে তাদের জীবন।

সিরাজগঞ্জ কোবদাস পাড়ার বয়োবৃদ্ধ রমেচা খাতুন, সোমেলা খাতুন জানান, ঝর-বৃষ্টি উপক্ষো করে তাদের প্রতিদিন শাক তুলতে যেতেই হয়। শাক সংগ্রহ না হলে তাদের সংসারে সেদিন খাবার জোটেনা। সংসারের অভাব মেটানোর জন্য বছরের পর বছর তারা এই কাজ করে যাচ্ছেন।