Home Second Lead সুদিন ফিরছে রপ্তানিতে

সুদিন ফিরছে রপ্তানিতে

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

ঢাকা: রপ্তানিতে সুদিন ফিরতে শুরু করেছে।

জুন-জুলাই থেকে আবার ধীরে ধীরে রপ্তানি আয় বাড়ছে।  আগস্টে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৩২ শতাংশে। এ সময় রপ্তানিতে বড় ভূমিকা রাখে পোশাক খাত। গত তিন মাসে রপ্তানি আয়ের ৮২ শতাংশই এসেছে পোশাক খাত থেকে। এ সময় লক্ষ্যমাত্রার থেকে প্রায় ২ শতাংশ অধিক আয় হয়েছে পোশাক খাতে।

রপ্তানিতে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে গত এপ্রিলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় তলানিতে নেমে যায়। ওই মাসে সব মিলিয়ে মাত্র ৫২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল মাত্র ৩৬ কোটি ডলার। বিধি-নিষেধ শিথিলে কারখানা খোলার পর মে মাসে রপ্তানি আয় কিছুটা বৃদ্ধি পায়। জুনে বৃদ্ধি পায় তার চেয়ে বেশি। এরপর নতুন অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল দশমিক ৫৯ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। জুলাই মাসের ওই আয়ের মধ্য দিয়ে সাত মাস পর রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় মাস আগস্টে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই- সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তনি করে বাংলাদেশ ৯৮৯ কোটি ৬৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার আয় করেছে। এই তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৯৬৬ কোটি (৯.৬৬ বিলিয়ন) ডলার। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে এই আয়ের পরিমাণ ছিল ৯৬৪ কোটি ৭৯ লাখ ৯০ হাজার (৯.৬৪ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবেই জুলাই-আগস্ট সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে ৩০১ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে আরও বেশি, প্রায় ৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮৫ কোটি ডলার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে আয় হয়েছিল ২৯১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।

তবে রপ্তানি আয়ে এখনও অনিশ্চতয়তা কাটেনি বলে জানিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবি মির্জা মো. আজিজুল ইসলাম।

বলেন, ‘রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কয়েক মাস ধরে। তবে এই প্রবৃদ্ধি দেখে নিশ্চিত করে বলা যাবে না আমরা করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছি। কারণ এখনও যে আয় আসছে তা আগের ক্রয়াদেশগুলোর। এখন দেখতে হবে নতুন ক্রয়াদেশ কেমন আসছে। আরেকটি বিষয় হলো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যদি প্রকৃট আকার ধারণ করে এবং ইউরোপ আমেরিকার অবস্থা আবার খারাপ হয়ে যায় তখন রপ্তানি আয় আবার কমে যাবে। তাই বলা যায়, রপ্তানি আয় বাড়লেও নিশ্চিত প্রবৃদ্ধি বলা যাবে না। এটার জন্য আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রায় ১০ বিলিয়ন (এক হাজার কোটি) ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে আরও বেশি, ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। সদ্য শেষ হওয়া সেপ্টেম্বর মাসে গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে আয় বেড়েছে সাড়ে ৩ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি হয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ শতাংশের মতো। লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি। এই তিন মাসে ৮০৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৮১২ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৭৯৬ কোটি ডলার। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে তৈরি পোশাকের মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪৪৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। অপরদিকে উভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৩৬৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার। এই তিন মাসে নিট পোশাক রপ্তানিতে ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও উভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের ৮২ দশমিক ১১ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।

এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান, গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘রপ্তানি আয় এখনও স্থীতিশিল জায়গায় গেছে কিনা তা বলা যাবে না। সে জন্য আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। তবে প্রতি মাসই যে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এটাও বড় ব্যাপার। আমরা অনেক দেশের চেয়ে ভালো করেছি।’

করোনা সংকটের মধ্যেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির বড় প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৩০ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১২ শতাংশের মতো। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার আয় করেছে, যা ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। মহামারীকালে ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ২১ শতাংশ। কৃষি পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। হ্যান্ডিক্রাফট রপ্তানি বেড়েছে ৫১ দশমিক ২৩ শতাংশ। হিমায়িত মাছ রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ১১ শতাংশ।