বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: চলমান করোনাভাইরাস সংকটের জেরে দেশে স্টিল শিল্পে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা লোকসান হতে পারে।
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন (বিএসএমএ) এই আশংকা করছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়: এ শিল্পে একদিন উৎপাদন বন্ধ রাখলে যে লোকসান হয়, তা পুরো মাসের মুনাফার সমান। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসেই এই শিল্পে সম্ভাব্য লোকসানের পরিমাণ হবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। সহজেই অনুমান করা যায়, বাংলাদেশের সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত সেক্টরের অন্যতম হবে এ খাত। দুর্ভাগ্যবশত, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসতেও শিল্পটির দীর্ঘ সময় লাগবে।
স্টিল উচ্চ বিনিয়োগ, উচ্চ চলতি মূলধন, উচ্চ ব্যয়বহুল একটি শিল্প। এই শিল্পের বিক্রি বেশি কিন্তু মুনাফা কম। শতভাগ কাঁচামাল আমদানি নির্ভর উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বের স্টিল স্ক্র্যাপ সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। গ্রীষ্মকালীন সংগ্রহ নির্ভর এই কাঁচামাল এ বছর আর সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। বিশ্বের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং সম্মিলিত ইউরোপে অনেক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। কন্টেইনারের অভাবে শিপমেন্ট হচ্ছে না, ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে জাহাজের অভাবে কন্টেইনারের স্তুপ জমাট বাঁধছে। শুধু চায়নাতেই আটকে আছে ৮০ লাখের বেশি খালি কন্টেইনার। অর্থাৎ বিশ্ববাজারে আগামী বছর পর্যন্ত স্টিল শিল্পের প্রধান কাঁচামাল সরবরাহে ভয়াবহ সঙ্কট থাকবে। বাংলাদেশে এ সেক্টরকে স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে অন্ততপক্ষে দেড় বছর সময় লাগবে। আর আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে লাগবে অন্তত ৫-৬ বছর। ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।
১. স্টিল শিল্প সরকারের কাছে প্রণোদনা চায় না, শুধু এর সম্ভাব্য লোকসান এবং জিডিপিতে স্টিল শিল্পের অবদানের ভিত্তিতে ৩০ হাজার কোটি টাকার সরকারি প্যাকেজ থেকে স্টিল শিল্পকে স্বল্পসুদে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেয়ার অনুরোধ।
২. দেশের দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার যেমন সবক্ষেত্রে সংকোচনমূলক নয়, সম্প্রসারণমূলক ভূমিকার প্রতি জোর দিচ্ছে, অর্থনৈতিক অবকাঠামো ঠিক রাখতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকেও তেমনি সম্প্রসারণমূলক, ব্যবসা-বান্ধব এবং তড়িৎ-সিদ্ধান্তে অগ্রসরমান ভূমিকা পালনের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া দরকার। এক্ষেত্রে স্টিল শিল্পের জন্য ৪ মাসের সমপরিমাণ অতিরিক্ত এলসি লিমিটের অনুমোদন দেয়া দরকার। অর্থাৎ নন-ফান্ডেড সুবিধা দেয়া। প্রত্যেক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী এবং শ্রমিকদের ৪ মাসের বেতন-ভাতা ঋণ আকারে অন্তত ১২টি কিস্তিতে পরিশোধের অনুমোদন দেয়া। আগামী এক বছরের জন্য সব ধরনের অতিরিক্ত সুদ বা পেনাল্টি চার্জ মুক্ত রাখা। সব ব্যাংকের সব গ্রাহকের জন্য ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ হার নিশ্চিত করা। লোকসানের চাপ কমাতে অন্ততপক্ষে ১০ বছরের জন্য ১২ মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ সব দীর্ঘমেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় বাড়াতে হবে।
৩. ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিদ্যুৎ-গ্যাস বিল পরিশোধের সময়সীমা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো। এবং তা অক্টোবর থেকে ৫ কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেয়া। এই সময়ে বিল পরিশোধে বিলম্বের কারণে কোন প্রকার জরিমানা/ অতিরিক্ত অর্থ/ সারচার্জ আদায় না করা।
৪. যেহেতু স্টিল শিল্প নগদ অর্থ সংকটে ভুগছে, এমতাবস্থায় আগাম আয় কর, আমদানি ক্ষেত্রে আগাম কর এবং টিডিএস সম্পূর্ণভাবে রোহিত করা।
৫. আগামী অর্থবছরের বাজেটে স্টিল শিল্পের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।
৬. ব্যক্তি মালিকানাধীন বন্দরগুলোতে উচ্চহারে পোর্ট চার্জ অব্যাহত আছে, এক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই সংকটময় মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণ এবং ব্যবসায়ীদের পুনরুদ্ধার ও প্রত্যার্পনে যে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তা অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং প্রশংসনীয়। এখন প্রয়োজন নির্দেশনার আলোকে সেক্টরভিত্তিক কাস্টমাইজড সমাধান। স্টিল খাতের বর্তমান বাস্তবচিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। সরকারের সময়োচিত ব্যবস্থা গ্রহণের উপর নির্ভর করছে এ খাতে কর্মরত ৩ লাখের বেশি মানুষের ভবিষ্যৎ। ৫০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ী সমাজ এবং বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ স্টিল কাঁচামাল আমদানিকারী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।