এ যেন ছিল রুমাল, হয়ে গেল বিড়াল।
ছিলেন ঘোড়াওয়ালা। হয়ে গেলেন ওষুধ নির্মাতা। এখন বিশ্বজোড়া করোনা ভ্যাকসিনের আকাশে নক্ষত্রের উজ্জ্বল উপস্থিতি যেন।
আদর পুনাওয়ালাকে এছাড়া আর কী বলবেন! স্বপ্ন যে আকাশ ছুঁতে চলেছে মাত্র ৩৯ বছরের এই যুবকের হাত ধরে। শুধু উচ্চাকাঙ্ক্ষা নয়, উদ্ভাবনের স্বপ্ন তাঁর চোখে। তাঁর মালিকানাধীন সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া এখন করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতিতে প্রায় অর্ধেক এগিয়ে গিয়েছে। বিস্ময়কর উত্থান পুনের এই সংস্থার। একেবারে পারিবারিক ব্যবসা। বাবা-ছেলেই ব্যবসার প্রধান। আদরের বাবা সাইরাস পুনাওয়ালা।
পারিবারিক ঘোড়া প্রজননের ব্যবসা থেকে ভ্যাকসিন উৎপাদনের স্বপ্নটা তিনিই প্রথম দেখেছিলেন। আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে ঘোড়া রাখার শেডেই সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার গোড়াপত্তন করেছিলেন সাইরাস।
তাঁদের ফার্ম থেকে বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ঘোড়ার সিরাম সংগ্রহ করত ভ্যাকসিন তৈরির উদ্দেশ্যে। ভ্যাকসিনের পরীক্ষা করা হত পুনাওয়ালাদের ফার্মের ঘোড়াদের ওপর। সাইরাস ভেবেছিলেন, তিনি নিজেই তো ঘোড়ার সিরাম থেকে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করতে পারেন। সেই স্বপ্নের অঙ্কুর বিকশিত হতে হতে পুনের সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া আজ মহীরুহের চেহারা নিয়েছে। ভ্যাকসিন উৎপাদনে এই সংস্থার বিশাল নাম রয়েছে গোটা বিশ্বে। ১৯৬৭ সালে শুরু করেছিলেন টিটেনাস অর্থাৎ ধনুষ্টংকারের প্রতিষেধক তৈরি দিয়ে তারপর প্রথমে সাপের কামড়ের ইনজেকশন, একে একে যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস, পোলিও, ফ্লু ইত্যাদি নানা দুরারোগ্য ব্যাধির প্রতিষেধক তৈরি করতে করতে পুনাওয়ালারা এখন ভ্যাকসিন সম্রাট।
সৌভাগ্যের সেই চাকায় নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন সাইরাস পুনাওয়ালার একমাত্র সন্তান আদর। ৩৯ বছরের মধ্যে প্রমাণ করেছেন নিজের দক্ষতা, বিচক্ষণতা ও স্বপ্ন দেখার দূরদর্শিতাকে। উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়েছেন বিপুল খরচে। কিন্তু পুষিয়ে গিয়েছে ভারতে তুলনায় কম খরচের শ্রমশক্তিতে। ইউনিসেফ তো বটেই, শতাধিক দেশ পুনাওয়ালাদের সংস্থায় ভরসা রেখে বরাত দিয়েছে, চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে কম খরচে তৈরি ভ্যাকসিন গরিব দেশগুলিতে পাঠিয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে উঠেছে পুনের সিরাম। এই কোম্পানির দৌলতে পুনাওয়ালা পরিবার এখন ভারতে ধনী শিল্পপতি গোষ্ঠীগুলির অন্যতম। ৩৭,৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। আদর এই কোম্পানির দায়িত্ব পান ২০১১ সালে। বাবার কাছ থেকে সংস্থার মুখ্য নির্বাহী আধিকারিকের পদ আসে তাঁর হাতে।
তাঁর যোগ্য পরিচালনায় এরপর ব্যবসা কার্যত ঝড়ের গতিতে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকে ভ্যাকসিন দুনিয়ায়। বছরে ৬,০০০ কোটি টাকা উপার্জন হয় আদরের তত্ত্বাবধানে। পুনাওয়ালাদের গ্যারাজে রোলস রয়েস আর ফেরারি গাড়ি এখন গুনে শেষ করা যায় না। আদর হাসতে হাসতে জানাতে পারেন, লোকে যত না তাঁদের পরিবারকে ভ্যাকসিন উৎপাদক হিসাবে চেনেন, তার চেয়ে বেশি জানেন দামি গাড়ির মালিক হিসেবে। ঘোড়ার ফার্মের মালিকের স্বপ্নের উড়ান ঘটেছে প্রায় নিঃশব্দে।
-বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক