বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
সাতক্ষীরা: খাদ্যের সন্ধানে সাতক্ষীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিরল প্রজাতির কালোমুখ হনুমান। বেশ কয়েকটি হনুমান একসঙ্গে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। উৎসুক জনতা হনুমানগুলো দেখার জন্য ভিড় করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, সম্প্রতি এমন দুটি হনুমান দেখা গেছে সেগুলো কিছুটা দুর্বল ও বিমর্ষ। হনুমানগুলো তালা ও পাটকেলঘাটা এলাকার বিভিন্ন গাছে, বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাচীরের ওপর চলাচল করতে দেখা যায়। উৎসুক জনতার মধ্যে অনেকে হনুমানগুলোকে কলা, বিস্কুট, লেবু, পাউরুটি খেতে দিচ্ছে। অনেকে আবার হনুমানকে নানাভাবে বিরক্তও করছে।
জানা গেছে, কেশবপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা বালিয়াডাঙ্গা, ব্রহ্মকাঠি, রামচন্দ্রপুর, দুর্গাপুর, সাবদিয়া, মজিদপুর এলাকায় সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০টি হনুমান বসবাস করছে। তবে কেশবপুর পশু হাসপাতাল ও খাদ্যগুদাম এলাকায় এগুলোকে বেশি দেখা যায়। কবি মাইকেল মধুসূদনের স্মৃতি বিজড়িত সাগরদাঁড়ি দেখতে সারাবছর কমবেশী পর্যটক আসেন। তাদের দেওয়া খাবারেই এসব হনুমানের জীবন চলত।
স্থানীয়রা জানান, যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার হনুমানগুলোকে প্রাণী বিভাগের তত্ত্বাবধানে খাবার সরবরাহ করা হয়। তবে কোনো কারণে খাদ্য সংকট দেখা দিলে মাঝে-মধ্যেই কিছু হনুমান লোকালয়ের দিকে চলে আসে। কখনো কখনো অধিক খাদ্য ও ভালো আবাসের সন্ধানে মাইলের পর মাইল অতিক্রম করে এসব কালোমুখো হনুমান।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. এ বি এম আব্দুর রউফ জানান, কালোমুখ হনুমান বনের বাইরে বাস করা হনুমানের একটি প্রজাতি। বৈশ্বিক বিরূপ আবহাওয়া, মানুষের উৎপাত, খাদ্য সংকটি এবং প্রতিকূল পরিবেশের কারণে হনুমানগুলো দলে দলে এলাকা ত্যাগ করে থাকে।
তিনি আরও জানান, লোকালয়ে আসা কোনো কোনো হনুমান বনে ফিরে যায়, অনেক হনুমান মারাও যায়। লোকালয়ে এলে হনুমানগুলোকে বিরক্ত না করে সম্ভব হলে প্রয়োজনীয় খাবার দিয়ে তাদের প্রাণ বাঁচানোর আহ্বান জানান এই প্রাণিসম্পদ অফিসার।
ব্রিটিশ আমলে দক্ষিণ ভারতের কয়েকজন মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী ব্যবসার উদ্দেশ্যে কেশবপুরে আসেন। তারা কয়েকটি কালোমুখ হনুমান সঙ্গে নিয়ে আসেন। সেগুলোই বংশবৃদ্ধি করে এ অঞ্চলে নিজেদের ‘হনুমান সম্রাজ্য’ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে এখানে দুই হাজারের মতো কালোমুখ হনুমান ছিল বলেও জানান তারা। তবে বন উজাড়করণ, গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, খাদ্যাভাব এবং মানুষের অত্যাচারে তাদের সংখ্যা কমতে থাকে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
প্রায় ২০০ বছর ধরে যশোরের কেশবপুর এবং মনিরামপুরে বসবাস করছে এই কালো মুখ হনুমান। এই হনুমান সাধারণত লম্বায় ২৪ ইঞ্চি থেকে ৩০ ইঞ্চি এবং উচ্চতায় ১২ ইঞ্চি থেকে ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের গড় আয়ু ২০-২৫ বছর। শারীরিক ওজন ৫-২৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। মুখের ন্যায় হাত ও পায়ের পাতা কালো। চলাফেরা করার সময় এরা লেজ উঁচু করে চলে। তবে গাছে বসলে তারা লেজ ঝুলিয়ে দেয়। কলা, পেঁপে, আম, আমড়া, সফেদা, জাম্বুরা, মূলা, বেগুন ইত্যাদি ফলমূল, শাক-সবজি গাছের মুকুল, কচিপাতা, বাদাম এবং বিস্কুট এদের প্রিয় খাদ্য।