- মজুদ পর্যাপ্ত : আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
দিনাজপুর: ভারতে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় হিলি স্থল বন্দর দিয়েও আমদানি হ্রাস পেয়েছে।
এখন প্রতিদিন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ ট্রাক। কয়েকদিন আগেও আমদানি হতো ৩০থেকে ৩৫ ট্রাক।
আমদানি কমে যাওয়ায়
হিলি স্থলবন্দরে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে (ট্রাক সেল) কেজি প্রতি বেড়েছে ৫ টাকা।
সোমবার প্রতি কেজি ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ ২০/২১ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। বৃহস্পতিবার তা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ২৬ টাকা । এ ছাড়া নতুন নাসিক জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৭ টাকা কেজিতে।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক হারুন উর রশীদ ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে সড়ক ও রেলপথে ভারত থেকে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কারণে কোরবানির ঈদে দেশের বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় প্রতিবছর দাম বাড়লেও এবার আরো কমেছিল। বন্দর দিয়ে সড়ক ও রেলপথ দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকায় বেশ কিছুদিন ধরেই বাজার স্থিতিশীল ছিল।
সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বন্যায় পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সে দেশের বাজারেই দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। বন্দর দিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে শুধু ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ আমদানি হলেও সম্প্রতি নাসিক জাতের পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। আর আমাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে বলে দেশের বাজারেও পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়ছে।
গতবারের অভিজ্ঞতা আমলে নিয়ে এবার বাংলাদেশ সরকার ভারতের পেঁয়াজের দামের বিষয়ে সতর্ক। কোনো কারণে যদি ভারত পণ্যটি রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তাতেও যেন দেশে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে সে নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থাও ভাবছে সরকার। যদিও এই মুহূর্তে দেশে পেঁয়াজের মজুদ পর্যাপ্ত এবং দামও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বগতি সমলাতে দেশটি রপ্তানি বন্ধ করলে অন্যান্য বারের মতো এবারও বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়বে কি না এমন প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওখানকার (ভারত) বাজার আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা সতর্ক আছি। দেশটির সরকার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ রাখছি। মূলত বন্যা ও বৃষ্টির কারণে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে শিগগিরই দেশটিতে নতুন পেঁয়াজ আসতে যাচ্ছে। আশা করি তখন দামও কমবে। তাই গত বছরের মতো কোনো সংকট সৃষ্টি হবে না বলেই আমরা মনে করছি। এ ছাড়া আমাদের মজুদও পর্যাপ্ত রয়েছে। ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
ভারতের দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার ১৮ আগস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরবরাহ সংকটের কারণে গত এক সপ্তাহে দেশটির পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম ৫১ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহ ব্যবধানে গত ১৭ আগস্ট প্রতি ১০০ কেজি পেঁয়াজ ৭৫০ রুপি থেকে বেড়ে ১ হাজার ১৫০ রুপিতে বিক্রি হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ আগস্ট দেশটির সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারে দুই হাজার টন পেঁয়াজের সরবরাহ ছিল। সপ্তাহ ব্যবধানে তা কমে এক হাজার টনে দাঁড়ায়। হঠাৎ সরবরাহ কমার কারণ হিসেবে অতিবৃষ্টিকে উল্লেখ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বাংলাদেশে মোট পেঁয়াজের চাহিদা ২৫-২৬ লাখ টন। এর প্রায় ৩০ ভাগ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। তবে গত বছর দেশ পেঁয়াজ সংকটে পড়ায় উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এজন্য কৃষকদের প্রণোদনা ও উন্নতমানের বীজ সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া গত বছর থেকেই পণ্যটির উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংকট এড়াতে এ বছর ব্যবসায়ী ও সরকার একটি বিকল্প উদ্যোগ নিয়েছে। এবার আগে থেকেই পেঁয়াজের মজুদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এছাড়া বাজারে দেশি পেঁয়াজের চেয়ে আমদানি পেঁয়াজ বিক্রিতে ব্যবসায়ীরা জোর দিয়েছেন। কারণ, দেশি পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। আবার কৃষকরা গত বছর দাম বৃদ্ধির কারণে বেশি লাভ করায় এবার সংরক্ষণের বিষয়েও জোর দিয়েছেন। সব মিলিয়ে এবার দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। এরপরও যদি কোনো কারণে ভারতে পেঁয়াজের সংকট দীর্ঘায়িত হয় তার বিকল্প হিসেবে মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিসরের বিষয়টি আগে থেকেই সবাই ভেবে রেখেছেন।
তাই এবার কোনোভাবেই পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা হবে না বলে মনে করছেন তারা।