স্থানীয় ১০টি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই অনুমোদনের ফলে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৪ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করেছে দেশীয় মালিকানাধীন নয়টি কোম্পানি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে আকিজ জুট মিলস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ও ডিবিএল গ্রুপ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিদেশে বিনিয়োগ করা দেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত শীর্ষে রয়েছে আকিজ গ্রুপ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আকিজ গ্রুপকে এখন পর্যন্ত দুই কোটি মার্কিন ডলার মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার পুরোটাই ইতিমধ্যে বিনিয়োগ হয়ে গেছে।
প্রথমবার বাংলাদেশি গ্রুপ হিসেবে ২০১৮ সালে বিদেশে কোনো কোম্পানি অধিগ্রহণ করে আকিজ গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আকিজ জুট মিলসের মালিকানাধীন মালয় ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি আকিজ রিসোর্সেস এসডিএন বিএইচডি মালয়েশিয়ার রবিন রিসোর্সেস এসডিএন বিএইচডি ও এর সাবসিডিয়ারি রবিনা ফ্লোরিং এসডিএনবিএইচডি ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারে কিনে নেয়।
মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান দুটি সেখানকার ইন্ডাস্ট্রিতে তাদের অবস্থান ৩ নম্বরে। রপ্তানি থেকে বছরে ২০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী আকিজ গ্রুপকে মালয়েশিয়ায় ২ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় অবশিষ্ট অর্থ জার্মানির ঋণদাতা ডিইজি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি এই ঋণের সুদের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে কোম্পানিটি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের আকিজ জুট মিলস মালয়েশিয়ায় কেনা কোম্পানিতে স্থানান্তরের জন্য সহযোগী কোম্পানি শেখ আকিজুদ্দিন লিমিটেড থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ৩২ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে চায়। ইক্যুইটি স্থানান্তরের রেওয়াজ থাকলেও বাংলাদেশ থেকে এভাবে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নেওয়ার বিধান নেই বলে আকিজ গ্রুপকে জানিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসকে কেনিয়ায় ওষুধ কারখানা স্থাপনের জন্য ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখ ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে কেনিয়ায় কারখানার জন্য ১ কোটি ৫ হাজার ডলার বিনিয়োগ করেছে স্কয়ার। তবে ২০১৬ সালে বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত এই কারখানায় বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়নি।
আফ্রিকার ইথিওপিয়ায় ডিবিএল গ্রুপ কারখানা স্থাপনের জন্য ৯৫ লাখ ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন পায়। সেখানে ডিবিএল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি, ইথিওপিয়া নামে একটি পোশাক কারখানা স্থাপন করে, যেখানে ২০১৫ সাল থেকে ধাপে ধাপে বিনিয়োগ করেছে। অনুমোদিত অর্থের পুরোটা বিনিয়োগ করলেও উৎপাদন সক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করা যায়নি। ফলে ওই বিনিয়োগ থেকে এখনো কোনো লাভের মুখ দেখেনি ডিবিএল গ্রুপ।
মিয়ানমার ও সিঙ্গাপুরে দুটি সাবসিডিয়ারিতে বিনিয়োগ করেছে এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেড, যেখানে ৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করেছে তারা। এর মধ্যে মিয়ানমারের কোম্পানি থেকে মুনাফা পেলেও সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগে পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে লোকসানে রয়েছে।
স্থানীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগ রয়েছে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম (প্রা.) লিমিটেড, সার্ভিস ইঞ্জিন লিমিটেড, এসিআই হেলথ কেয়ার ও বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের। এর বাইরে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় কারিগরি পরামর্শ ও অন্যান্য সেবার মাধ্যমে বিনিয়োগের অনুমোদন রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের। সৌদি আরবের জুবেইল ফার্মা কোম্পানি লিমিটেড ও মালয়েশিয়ার বায়োকেয়ার ম্যানুফাকচারিং এসডিএন কোম্পানিতে কারিগরি ও পরামর্শ সেবার মাধ্যমে যথাক্রমে ৪২ ও ৩০ শতাংশ শেয়ার পেয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা। এর মধ্যে জুবেইল ফার্মা কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে ১১ লাখ ২৪ হাজার ডলার দেশে প্রত্যাবাসন করেছে বেক্সিমকো ফার্মা। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার স্টেট ফার্মাসিউটিক্যালস ম্যানুফাকচারিং করপোরেশন অব শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস সিলন (প্রা.) লিমিটেডের যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্পে ৬০ লাখ ডলার বিনিয়োগের অনুুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এখনো এ অর্থ স্থানান্তর করেনি বেক্সিমকো ফার্মা।
-বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক