Home কলকাতা ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভোরের কলকাতা

১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভোরের কলকাতা

১৪ আগস্ট, ১৯৪৭

পরাধীন ভারতের অন্তিম ভোরের ঠান্ডা বাতাস ঘুরে বেড়াচ্ছিল কলকাতার অলিতে গলিতে। গত রাতে ঠিক মতো ঘুমোতে পারেনি কলকাতা। দোলাচলে ছিল। তিল্লোত্তমা কলকাতা ভাবছিল, সত্যিই কি আসতে চলেছে হাজার হাজার তরুণের তাজা রক্ত ও মায়েদের চোখের জলে ধোয়া স্বাধীনতা! ইংরেজদের বিশ্বাস নেই। বিশ্বাস করেই হয়েছিল সর্বনাশ। তবুও রাত জেগে মিষ্টি বানিয়েছিলেন ময়রা। তেরঙ্গা বানিয়েছিলেন ওস্তাগর। ফুলচাষিদের বাড়িতে হত্যে দিয়ে পড়েছিলেন ফুল ব্যবসায়ীরা। বাঁশ ও কাপড় নিয়ে রাতভর ছোটাছুটি করেছিল ডেকরেটার্সের লরি।

তবুও ভোরের পরিবেশ ছিল থমথমে

চাপা আতঙ্কের মেঘ ছড়িয়েছিল শহর জুড়ে। কারণ ঠিক এক বছর আগে, ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট, কলকাতা দেখেছিল তার ইতিহাসের সবথেকে নারকীয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় চার হাজার মানুষ। তবে এবার যেকোনও মূল্যে দাঙ্গা রুখবার জন্য প্রস্তুত ছিলেন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন হিন্দু ও মুসলমানেরা।

সূর্যের তেজ যত বাড়ছিল, আতঙ্ক বদলে যেতে শুরু করেছিল বিশ্বাসে। রাস্তায় নামতে শুরু করেছিলেন শহরবাসী। ধর্মীয় বিভেদ ভুলে, একজোট হয়ে নিজেদের এলাকা সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শহরের সব থেকে উঁচু জায়গাগুলিতে জাতীয় পতাকা স্থাপনের আগাম ব্যবস্থা করে রাখছিলেন ক্ষুদিরাম বাঘাযতীনের যোগ্য উত্তরসূরীরা। রাজপথের বিভিন্ন জায়গায় ও চৌমাথাগুলিতে মাথা তুলেছিল অসংখ্য অতিকায় তোরণ। কাপড় ও বাঁশপাতায় মোড়া তোরণগুলির ওপরে ছিল ফুল দিয়ে সাজানো গান্ধীজি ও নেতাজির ছবি। মাঝখানে ছিল অতিকায় জাতীয় পতাকা।

কলকাতার মুসলিম অধ্যুষিত কিছু এলাকায় উড়ছিল পাকিস্তানি পতাকা। তবে সংখ্যায় হাতে গোনা। তবে তা নিয়ে শহরবাসীর মাথা ব্যথা ছিল না। কারণ কলকাতা পাকিস্তানে যাচ্ছে না। থাকছে ভারতেই। তবে বেশকিছু যুবককে ভারত ও পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে দলবেঁধে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল। বেলা যত বাড়ছিল, নামিয়ে নেওয়া হচ্ছিল পাকিস্তানি পতাকাগুলি। হয়ত দাঙ্গা লাগার আশঙ্কাতেই।

দুপুর গড়িয়ে হয়েছিল বিকেল

নরম সূর্যের আলো গায়ে মেখে বিকেলে আবার রাস্তায় নেমে পড়েছিল শহরবাসী। শোভাযাত্রাগুলি থেকে ভেসে আসছিল “হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই”, “হিন্দু মুসলিম এক হো”, “জয় হিন্দ” স্লোগান। উদাত্ত কণ্ঠে দেশাত্মবোধক গান গাইছিল ছাত্র ছাত্রীরা। এরই মধ্যে চলছিল রাস্তার এপার থেকে ওপার পর্যন্ত চলে যাওয়া জাতীয় পতাকা টাঙানো।

Calcutta _ 1947

মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে লরিতে করে ঘুরছিলেন কিছু মুসলিম যুবক। তাঁদের হাতে ছিল পাকিস্তানি পতাকা। শান্তির স্বপক্ষে স্লোগান দিচ্ছিলেন তাঁরাও। তবে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রচুর মুসলিম যুবক। যাঁদের বুকে লাগানো ছিল ভারতের জাতীয় পতাকা। এলাকার শান্তি শৃঙ্গলার ওপর কড়া নজর রাখছিলেন তাঁরা। হিন্দু ভাইদের আলিঙ্গন করছিলেন। শরবত বিলি করছিলেন। একে অপরকে পান খাওয়াচ্ছিলেন। শহরের এলাকায় এলাকায় দেখে গেছিল জটলা। একজন কিছু বলছিলেন। তাঁকে ঘিরে ধরে তাঁর কথা শুনছিলেন বন্ধুরা। দাঁড়িয়ে পড়ছিল পথচলতি জনতা। জটলাগুলি পরিণত হয়ে যাচ্ছিল পথসভায়।

কলকাতার বুকে নেমেছিল পরাধীন ভারতের শেষ সন্ধ্যা

সময় যেন আর কাটতে চাইছিল না। শহরবাসী চাইছিলেন, দ্রুত বিদায় নিক সন্ধ্যা। এগিয়ে আসুক মধ্যরাত্রির সেই শুভক্ষণ। বিনিদ্র রাত কাটানোর জন্য তৈরি কলকাতা। সন্ধ্যার কলকাতায় শুরু হয়েছিল অকাল দীপাবলি। আলোর মালায় সেজে উঠেছিল কলকাতা। বাড়িতে বাড়িতে জ্বলছিল প্রদীপ। দোকানগুলিতে টাঙানো নেতাজি ও গান্ধীজির ছবিতে পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল গোড়ের মালা। আতসবাজিগুলিকে সারাদিন রোদ খাইয়ে আবার ছাদে তুলতে শুরু করেছিল বালক এবং কিশোরের দল।

রেডিও তখন সহজলভ্য ছিল না। রেডিও শোনার সুযোগ ছিল না বেশিরভাগ শহরবাসীর। তাই অনেকে চলে গিয়েছিলেন আত্মীয়ের বাড়ি। রেডিও শোনার জন্য এপাড়ায় ওপাড়ায় ঘোরাঘুরি শুরু করেছিলেন অনেকে। তাঁদের জন্যেই অনেক সহৃদয় ব্যক্তি রেডিও চালিয়ে দিয়েছিলেন বারান্দায় বা পাড়ার রোয়াকে। সন্ধ্যা থেকেই বেতারে ভেসে আসছিল বরেণ্য নেতাদের কণ্ঠস্বর।

মৌলানা আবুল কালাম আজাদ বলেছিলেন, “নতুন পাওয়া স্বাধীনতাকে এমন ভাবে ব্যবহার করতে হবে, যাতে এই স্বাধীনতা আমাদের আশাকে ছুঁতে পারে।” সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বলেছিলেন, “দেশের সবাই যেন সমান মর্যাদা পান সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে।” রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেছিলেন,”আমাদের কাজ এখানেই শেষ নয়, স্বাধীন ভারতকে গড়ে তোলার মত কঠিন কাজে, দেশবাসীর শক্তি ও উৎসাহকে ব্যবহার করতে হবে।” কংগ্রেসের সভাপতি জেবি কৃপালনি বলেছিলেন, “যুগ যুগ ধরে অগণিত বীর শহিদের ঘাম, রক্ত ও আত্মত্যাগের ফলে এসেছে এই স্বাধীনতা। আজ আমরা শ্রদ্ধার সাথে শহিদদের প্রণাম জানাই।”

অবশেষে এসেছিল সেই শুভক্ষণ

১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছিল ভারতের নিজস্ব টাইম-জোন (ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইম)। ঠিক হয়েছিল ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইম অনুযায়ী রাত বারোটায় স্বাধীন ভারতের সংসদে ঘোষিত হবে স্বাধীনতা। যদিও সরকারিভাবে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছিল নতুন সময়ের রাত এগারোটায়। ‘বন্দেমাতরম’ গাওয়ার পর শুরু হয়েছিল বক্তৃতা পর্ব। প্রধান বক্তা ছিলেন তিনজন। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ, চৌধুরী খালিকাতুল্লা ও তৃতীয় বক্তা ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু।

নতুন সময়ের ঠিক রাত বারোটায় ভাষণ দেবেন পণ্ডিত নেহেরু। কিন্তু তিনি যখন ভাষণ দেবেন, পুরোনো সময়ে অনুসারে কলকাতায় তখন বাজবে রাত একটা বেজে পাঁচ মিনিট। কিন্তু কেন দেরিতে স্বাধীনতা পাবে, স্বাধীনতার যুদ্ধে সর্বদা অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া বাংলা! এটা হতে দেওয়া যাবে না। তাই বাংলার সময় অনুযায়ী রাত বারোটার আগেই শহরবাসীরা ভিড় করেছিলেন নারকেলডাঙায়। সারা দেশ যখন দিল্লির নেতাদের দিকে তাকিয়ে ছিল, তখন কলকাতাতেই ছিলেন জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী। বিহার ও বাংলায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হিংসার প্রতিবাদে ১২ আগস্ট থেকে অনশনে বসেছিলেন হায়দরি মঞ্জিলে। যা আজ গান্ধী ভবন নামে পরিচিত। বাংলার সময় অনুসারে রাত বারোটাতেই হায়দরি মঞ্জিলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে শহরবাসী ঘোষণা করে দিয়েছিল কলকাতার স্বাধীনতা।

কলকাতায় অনশনে বসেছেন গান্ধীজি

উত্তেজনায় ফুটছিল দেশ। কিন্তু গান্ধীজির মনে সামান্যতম আনন্দও ছিল না। তিনি বলেছিলেন, “আমি ১৫ আগস্ট আনন্দ করতে পারব না। কারণ আমি তোমাদের সঙ্গে প্রতারণা করতে চাই না। কিন্তু একই সঙ্গে আমি তোমাদের আনন্দ করতে বারণও করব না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমরা আজ যে ধরনের স্বাধীনতা পেলাম, সেটির মধ্যে লুকিয়ে আছে ভারত ও পাকিস্তানের ভবিষ্যতের অশান্তির বীজ। আমরা কেমন করে প্রদীপ জ্বালাব!” কিন্তু সেদিন শহরবাসী গান্ধীজির সুরে সুর মেলায়নি।

ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইম অনুযায়ী কাঁটায় কাঁটায় রাত বারোটায় পণ্ডিত নেহেরু শুরু করেছিলেন ঐতিহাসিক ভাষণ ‘ট্রিস্ট উইথ ডেসটিনি’। যখন তিনি বলছিলেন “At the stroke of the midnight hour, when the world sleeps, India will awake to life and freedom।”  কলকাতার আকাশ কাঁপানো উল্লাস বুঝি সাগর পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল রানি এলিজাবেথ ও রাজা ষষ্ঠ জর্জের কানে। রাতের আকাশকে দিনে পরিণত করেছিল আতসবাজির রোশনাই। শহর জুড়ে বাজতে শুরু করেছিল বিউগল, ঢাক, কাঁসর, সানাই ও শঙ্খ। প্রতিটি বাড়ি থেকে ভেসে আসছিল উলুধ্বনির আওয়াজ। সে রাত ঘুমায়নি কলকাতা।

পণ্ডিত নেহেরুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ

স্বাধীন ভারতের প্রথম ভোর

১৫ আগস্ট, ১৯৪৭। সকাল হওয়ার আগেই শহরের রাজপথ ভেসে গিয়েছিল জনজোয়ারে। গঙ্গায় ভাসছিল তেরঙ্গা লাগানো সারি সারি নৌকা। শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন শহরবাসীরা। স্থানে স্থানে চলছিল প্রভাতফেরি ও পতাকা উত্তোলন। প্রভাতফেরিগুলিতে গাওয়া হচ্ছিল দেশাত্মবোধক গান। জনতার হাতে ছিল বিপ্লবীদের ছবি। মুহুর্মুহু জয়ধ্বনি উঠছিল বিপ্লবী ও দেশ নায়কদের নামে। ময়দান চত্ত্বরেও দেখা দিয়েছিল জনপ্লাবন। এরই মধ্যে খবর এসেছিল সকাল আটটায় রাজভবনে জাতীয় পতাকা তুলবেন স্বাধীন বাংলার প্রথম রাজ্যপাল চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী। ভিড়ের অভিমুখ ঘুরেছিল রাজভবনের দিকে।

রাজভবনে তখন উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী রাজ্যপাল স্যার ফ্রেডরিক বারো, নতুন রাজ্যপাল চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, সরকারি ও বেসরকারি অতিথিরা। তাঁদের গার্ড অফ অনার দিয়েছিল ভারতীয় সেনা, ইউটিসি আরবান ইনফ্যান্ট্রি, কলকাতা ও বেঙ্গল পুলিশ। কাঁটায় কাঁটায় সকাল আটটায় রাজভবনের মাঠে জাতীয় পতাকা তোলা হয়েছিল। পতাকাটি দণ্ডের মাথায় এসে হঠাৎ প্রবল বাতাস পেয়ে প্রায় অলৌকিক ভাবে উড়তে শুরু করেছিল। উত্তেজিত জনতা চিৎকার করে বলে উঠেছিল “জয় হিন্দ”, “বন্দেমাতরম”। ঠিক সেই মুহূর্তে ফোর্ট উইলিয়াম থেকে ভেসে এসেছিল ১৭ বার তোপ দাগার আওয়াজ।

রাজভবনে নতুন রাজ্যপাল চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী

শুরু হয়েছিল রাজ্যপালের ভাষণ। রাজাগোপালাচারী সেই ভাষণে জাতীয় পতাকায় থাকা তিনটি রঙ ও চক্রের ব্যাখ্যা করেছিলেন। কিন্তু আনন্দে দিশেহারা জনতার সে ভাষণ শোনার ধৈর্য ছিল না। হাজার হাজার মানুষ ঘুরে বেড়াতে শুরু করেছিলেন রাজভবন চত্ত্বরে। একসময় রাজভবন কার্যত চলে গিয়েছিল জনতার হাতে।ভেস্তে গিয়েছিল সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া রাজ্যপাল স্যার ফ্রেডরিক বারোর বিদায়কালীন অনুষ্ঠান। তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা কোনও মতে স্যার বারোকে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন রাজভবনের ভেতরে। কয়েক মিনিট পরেই স্যার ফ্রেডরিক বারো ও তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে গাড়ি ছুটেছিল দমদম বিমানবন্দরের দিকে। বিদায় বেলায় তাঁকে একটা ফুলও দেয়নি কোলকাতা। দিয়েছিল একবুক ঘৃণা থেকে উঠে আসা এক সাগর উপেক্ষা।

নতুন রাজ্যপাল সকাল ৮-৫৫ মিনিটে গিয়েছিলেন বিধানসভায়। সেখানে ছিল সংক্ষিপ্ত একটি অনুষ্ঠান। বক্তব্য রেখেছিলেন রাজ্যপাল ও স্বাধীন বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ। ৯-১৫ মিনিটে বিধানসভায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রায় একই সময় কলকাতা পুলিশের সদর সফতর লালবাজারে পতাকা তুলেছিলেন ডেপুটি কমিশনার হরিমাধব ঘোষ চৌধুরি। ব্যাঙ্কশাল কোর্টে পতাকা তুলেছিলেন চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট আলি রেজা। হাইকোর্টে পতাকা তুলেছিলেন স্যার ট্রেভর হ্যারিথ।

দিনটাকে উদ্দামভাবে উপভোগ করা চেষ্টা করছিলেন শহরবাসীরা

কেউ গেয়ে, কেউ নেচে, কেউ খেয়ে, কেউ খাইয়ে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চাইছিলেন। ময়দানে কাবুলিওয়ালারা দুহাতে আখরোট, পেস্তা বিলিয়ে চলেছিল। শিখেরা গুরুদ্বার থেকে পুরি,‌ হালুয়া, মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন। চিৎপুর, পার্কসার্কাস, খিদিরপুরের মসজিদ থেকে মিষ্টি ও সরবত বিতরণ করা হয়েছিল। শোনা যায় সেদিন অনেক মিষ্টির দোকান ও হোটেল বিনা পয়সায় দুপুরে ভরপেট খাইয়েছিল। পান দোকানি বিনা পয়সায় জোগান দিয়েছিলেন একের পর এক পান। বাস, লরি এমনকি ট্রামের মাথায় চেপে ঘুরছিল জনতা। দুর্ঘটনার ভয়ে আতঙ্কিত ছিলেন পুলিশেরা। কিন্তু সেদিন কাউকে কোনও কাজে বাধা দেওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ বাধা দিলে স্বাধীনতা পাওয়ার আনন্দ নিমেষে বদলে যেতে পারত গণরোষে। তাই তাঁরা অত্যন্ত সুকৌশলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে চলেছিলেন।

সেদিন এই অবস্থাই ছিল ট্রামগুলির

১৫ আগস্ট সন্ধ্যা ছিল আগের সন্ধ্যার থেকেও মনোরম। কারণ মানুষের মন থেকে দাঙ্গার আতঙ্ক উধাও হয়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যা নামতেই তাসা, ঢাক, ঢোল সহকারে আবার শুরু হয়েছিল শোভাযাত্রা। পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়েছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শহর সেজেছিল প্রদীপ ও আলোর মালায়। আতসবাজীর ছোঁয়ায় এদিনও উজ্বল হয়ে উঠেছিল রাতের আকাশ। যা দেখে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন প্রাক্তন হয়ে যাওয়া বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হুসেইন শহিদ সোহরাওয়ার্দী। তিনি বলেছিলেন, কলকাতার হিন্দু ও মুসলমানেরা যেভাবে একসাথে উৎসবে মেতেছিল, সে সৌভ্রাতৃত্ব অনেক সময় রক্তের সম্পর্কের ভাইদের মধ্যেও দেখা যায় না।

১৫ আগস্ট রাতও না ঘুমিয়ে কাটিয়েছিল কোলকাতা। তবে দিনের বেলা ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা উল্লেখ না করলেই নয়। সেদিন দুপুরে পাড়ার ছেলেদের ডেকে প্রাণভরে ইলিশ ও পায়েস খাইয়েছিলেন আপাদমস্তক ব্রিটিশ বিরোধী এবং কিংবদন্তি ফুটবলার গোষ্ঠ পাল। যাঁদের ফরিদপুরের বাড়িতে দু’বার গিয়েছিলেন স্বয়ং গান্ধীজি।

-দি ওয়াল