আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিট (১০ শতাংশের নিচে) কার্যকর হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
বুধবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয়ক এবং সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো প্রজ্ঞাপন ইস্যু করা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দিয়েছিলাম, সেই কমিটি কাজ শেষ করেছে। ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করার চেষ্টা করছি, সে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে। সে প্রজ্ঞাপনে সবকিছু থাকবে, আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কাজ করতে হবে। আর প্রজ্ঞাপন হলে এর ফলাফল দেখা যাবে।’
কমিটি কী সুপারিশ করেছে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিটি যেহেতু সুপারিশ করেছে সেহেতু এটি পাবলিক হয়নি, পাবলিক হলে জানতে পারবেন, গোপন রাখব না কিছু। সারা বিশ্বে কোথাও এত বেশি ঋণের সুদ হার নেই, সামঞ্জস্য করে চলতে হবে।’
প্রসঙ্গত, ১ ডিসেম্বর সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার কৌশল ঠিক করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়ন হলে অনেক কাজ করতে সহজ হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন- তারা বলেছেন সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে হবে। যারা ভালো ঋণগ্রহীতা তাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করতে এ প্রচেষ্টা। যারা টাকা নিয়ে শোধ করেনি তাদের জন্য নয়।’
সুদের হার সবার জন্য এক হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২ শতাংশ দিয়ে যারা রেজিস্ট্রেশন করছে তাদের জন্য একরকম, আবার যারা ভালো তাদের জন্য আলাদা প্রক্রিয়া থাকবে; যারা ঋণখেলাপি তাদের বলা হতে পারে তোমরা অর্ধেক টাকা দিয়ে স্বাভাবিক হও।’
সরকারের আমানত ৪০ শতাংশ ব্যাংকগুলোতে দেবে বলে আগেই সিদ্ধান্ত রয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এখন এটা বাড়ানো হবে কিনা, আবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে দেখব ৫০ ভাগ করা যায় কি-না।’
উল্লেখ্য, বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ ও আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী মহলের দাবি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একাধিকবার এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।
গত আগস্টে ঋণ ও আমানতের সুদহার যথাক্রমে ৯ ও ৬ শতাংশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে তাগাদা দেয়া হলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রায় দেড় বছরে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে সরকারি-বেসরকারি মিলে মাত্র ১১টি ব্যাংক। এখনও বেসরকারি খাতের ৩৭ ব্যাংকের ঋণের সুদহার ১২-২০ শতাংশের ঘরে।
ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানো হবে না
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেছেন, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানো হবে না। সরকারের কারেন্সি ডিভ্যালিউশন করার কোনো পরিকল্পনা নেই। চলতি বাজেটে এটি ছিল না, আগামী বজেটেও এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত থাকবে না। কারণ বাংলাদেশ আমদানি নির্ভরশীল দেশ। টাকার মান কমালে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রয়োজনে ভিন্ন খাতকে প্রণোদনা দেয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সবাই চেয়েছিল আমাদের কারেন্সি ডিভ্যালিউশন (টাকার মান ডলারের বিপরীতে কমানো) করা হোক। তাদের যুক্তি ছিল কারেন্সি ডিভ্যালিউশন হলে রফতানি বাণিজ্য থেকে শুরু করে রেমিটেন্স অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু আমরা বলেছি অন্য যেসব দেশ কারেন্সি ডিভ্যালিউশন করেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে চাই না। আমরা আমাদের স্পেসিফিক খাতে প্রণোদনা দেব। তাহলে ওই খাতটি বেগবান হবে। তেমনিভাবে রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে আমরা তৈরি পোশাক খাতকে প্রণোদনা দিয়েছি। আরও দিতে হলে দেব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এটা বারবার বলা হয়, কারেন্সি ডিভ্যালিউশন কেন করা হচ্ছে না? আমরা মনে করি, কারেন্সি ডিভ্যালিউশন করলে আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য খারাপ হবে। কারণ আমরা এত পরিমাণ অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করেছি, এখন অবকাঠামোতে বিনিয়োগে আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আশা করছি। কারেন্সি ডিভ্যালিউশন করা হলে এ খাতে বিনিয়োগ আসবে না।’
ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আজকেও একটি পত্রিকায় দেখলাম পুঁজিবাজার থেকে সব বিদেশি বিনিয়োগ তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। কারণ তারা ধারণা করছেন এখানে কারেন্সি ডিভ্যালিউশন করা হবে। প্রতিদিন যে পুঁজিবাজারের সূচক নিম্নমুখী হচ্ছে এটাও একটা রিউমার (গুজব)।পুঁজিবাজারে একেকটা রিউমার আসে, এটা বহুদিন চলে। আবার স্টেবল (স্থির) হয়, এবার এ রিউমার কতদিন পর স্টেবল হবে তা জানি না।’