সালেহ নোমান :
বাংলাদেশে বসবাসকারি বলপূর্বক বাস্তুচ্যূত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা এবং রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় অধিবাসীদের চলতি ২০২০ সালে জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য ৮৭.৭ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ইন্টার সেক্টর কো- অডিনেশন গ্রুপ আইএসসিজি।
আইএসসিজি হচ্ছে জাতিসংঘের আটটি অংগ প্রতিষ্ঠানসহ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানকারি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর একটি সমন্বিত প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি আইএসসিজি ২০২০সালের যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনা অর্থাৎ জয়েন্ট রেসপন্স প্লান জেআরপির খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এই পরিকল্পনার আওতায় প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষকে খাদ্য, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সুরক্ষার মত জরুরী মানবিক সহায়তা প্রদান করা হবে। যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৭.৭ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমান দাঁড়াচ্ছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত জেআরপি শীঘ্রই বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রোহিঙ্গা সংক্রান্ত ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সে পাঠানো হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে সেটি আগামী মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ কর্তৃক আহূত দাতাদের সম্মেলনে পেশ করা হবে।
কক্সবাজারে আইএসসিজি’র মুখপাত্র সৈকত বিশ্বাস জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত জেআরপিতে ক্যাম্পে বসবাস করা ১০ লাখ রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় প্রায় তিন লাখ মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এখন এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টাস্ক ফোর্সে উপস্থাপন করা হবে। এরপর এটি উপস্থাপন করা হবে আন্তর্জাতিক দাতাদের সভায়।
প্রস্তাবিত জেআরপিতে মানবিক সহায়তার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার প্রত্যাবাসন এবং ভাসান চরে স্থানান্তরের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
২০১৭ সালে মিয়ানমারে দমন-পীড়ন অভিযানের কারণে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারও আগ থেকে আড়াই লাখের মত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছিলো। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা দশ লাখের মত। যারা কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার ৩১ ক্যাম্পে বসবাস করছে। রোহিঙ্গাদের কারণে এই দুই জেলার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ।
২০১৭ সালে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম ছড়িয়ে পড়া মানবিক সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘের আটটি সংস্থা ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে আইএসসিজি গঠন করা হয়েছিলো। এই সংগঠনটি সরকারের ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের অধীনে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আরআরআরসির সাথে যৌথভাবে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিশ্চিতকরণে কাজ করছে।
আইএসসিজি ২০১৮ সালের জন্য প্রথম বারের মত ৯৫ কোটি মার্কিন ডলারের যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনা তৈরী করেছিলো। এরপর ২০১৯ সালে ৯২ কোটি মার্কিন ডলারের সাড়াদান পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলো।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আরআরআরসি মাহবুবুল আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, “২০১৯ সালে সাড়া দান পরিকল্পনার আওতায় প্রত্যাশিত ৯২ কোটি মার্কিন ডলারের মধ্যে দাতারা সরবরাহ করেছিলো ৬২ কোটি ডলার, অর্থাৎ চাহিদার ৬৭ শতাংশ।”
২০২০ সালের পরিকল্পনার পুরোটায় তার আগের বছরের পরিকল্পনার অনুরূপ। তবে, এবার নতুন করে ভাসান চরে স্থান্তরের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে, জানান তিনি।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো থেকে মানুষের চাপ কমানোর জন্য বাংলাদেশে সরকার প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে বঙ্গোপসাগরে জেগে উঠা হাতিয়া উপজেলার অধীন ভাসান চরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় ২০১৭সালে। কিন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দ্বীপটি বসবাসের উপযোগি নয় বলে স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় সম্মত হয়নি।
বর্তমানে ভাসান চরে এক লাখ বাসিন্দার জন্য প্রয়োজনীয় আশ্রয় নির্মাণসহ, দ্বীপটিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।
আরআরআরসি মাহবুবুল আলম জানান, স্থানান্তরের বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সাড়া দান পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্ত হওয়াতে তা বাস্তবায়ন এখন সহজ হবে।