বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
না, আশা পূরণ হয়নি। ২৮ তম বিয়ের আগে তিনি ধরা খেয়ে গেলেন। তিনি বিয়ে করেছেন ২৭টি। দেখতে তেমন কোন আকর্ষণীয় চেহারার না, একেবারে সাদামাঠা। তার স্ত্রীদের তালিকায় পুলিশ, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, স্কুলশিক্ষিকা, ডাক্তার, সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের দুই আইনজীবী।
কী দেখে ৫ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার বিভুপ্রকাশকে বিয়ে করলেন এত মহিলা! নিজেকে অধ্যাপক হিসেবে পরিচয় দিতেন। নিজের যোগ্যতা ও পদমর্যাদা বলতেন আকাশছোঁয়া। এমনকি নিজের বার্ষিক আয়ও ৫০-৭০ লাখ টাকা বলে দাবি করতেন বিভু।
সম্প্রতি তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন ভারতের ওড়িশা থেকে। পুলিশ তদন্তে করে জানতে পারে, অভিযুক্ত বিভু প্রকাশ সোয়াইন মূলত মধ্যবয়সী ডিভোর্সি মহিলাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেন।তাঁর শিকারের মধ্যে ছিলেন উচ্চশিক্ষিত মহিলারা। তিনি দিল্লি, পাঞ্জাব, অসম, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার মহিলাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন।
নিজের একটি বায়ো বানিয়েছিলেন, যাতে তিনি ছিলেন ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট-এর প্রধান কন্ট্রোলার! আসল বয়স প্রায় সত্তর হলেও তিনি বলতেন ৫১। তাই দেখতে বৃদ্ধই হলেও তাঁর বিশাল বেতন ও চাকরির কথা জেনেই দেশের নানা প্রান্তের পাত্রীরা বিভুকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যেতেন!এর পরেই নিজের চাল চালতেন বিভু। নানা ছুতোয় টাকা আদায় করতেন ‘স্ত্রী’দের কাছ থেকে। কখনও এক লাখ, কখনও পাঁচ লাখ, কখনও বা দশ লাখ! স্বামীর যখন তার কয়েকগুণ বেশি রোজগার, তখন কোনও না কোনও যুক্তিতে ওই টাকা দিয়ে দিতেন অনেক স্ত্রীই। দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারতেন না, পুরোটাই আসলে টোপ।
এইভাবেই দেশের ১০টি রাজ্যে ২৭ জনকে বিয়ে করেছেন বিভু। শুধু তাই নয়, কেরলের ১৩টি ব্যাঙ্কের সঙ্গেও জালিয়াতি করেছেন তিনি। তৈরি করেছেন ১২৮টি ভুয়ো ক্রেডিট কার্ড! আবার হায়দরাবাদে ডাক্তারিতে ভর্তির নামেও ২ কোটি টাকার প্রতারণা করেছেন বিভু।
এভাবেই চলছিল দিব্যি। বাধ সাধল গত বছর। এক ‘স্ত্রী’ দ্বারস্থ হন পুলিশের। দিল্লির বাসিন্দা সেই মহিলার সঙ্গে বিভুর বিয়ে হয়েছিল ২০১৮ সালে। তিনি পুলিশকে জানান, ম্যাট্রিমনি সাইটে তিনি প্রোফাইল খোলার পরেই বিভু তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ওড়িশার বাসিন্দা বিভুর প্রস্তাবে তিনি রাজি হয়ে যান, কারণ নিজে দীর্ঘদিন ওড়িশায় ছিলেন বলে ওড়িয়াদের প্রতি বিশ্বাস ছিল তাঁর।
বিয়ের পরে ওড়িশায় থাকতেও শুরু করেন তাঁরা। ওই মহিলা জানিয়েছেন, আচমকাই বিভু একদিন কাজের কথা বলে বেঙ্গালুরু চলে যান। ফিরে আসার পরেও আরও কয়েক বার চলে যান। এমনও হতে থাকে, একটানা কয়েক মাস কোনও যোগাযোগই করা গেল না তাঁর সঙ্গে। এই সব ঘটনায় সন্দেহ হয় স্ত্রীর। তিনি ২০২১ সালের মে মাসে পুলিশে অভিযোগ করেন। এর পরেই পুলিশ বিভুকে গ্রেফতার করে।
জানা গেছে, জীবনসাথী ডটকম, শাদি ডটকম, ভারত ম্যাট্রিমনির মতো বিভিন্ন সাইটে বিভু ‘শিকার’ ধরতেন। চল্লিশ বছরের বেশি বয়সি, ডিভোর্সি মহিলাদেরই তার করতেন তিনি। তার পরেই শুরু মিথ্যে কথার জাল এবং প্রতারণা। এখনও পর্যন্ত মোট কত কোটি টাকার প্রতারণা তিনি করেছেন ২৭ জন স্ত্রীর সঙ্গে, তা হিসেব করছে পুলিশ।