Home চট্টগ্রাম ২৯তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান

২৯তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান

 

দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি আয়োজিত ২৯তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২২ এ অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে এ্যাওয়ার্ড প্রদান ও সমাপনী অনুষ্ঠান ৭ জুলাই বিকেলে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়। চিটাগাং চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম’র সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর এবং চেম্বার পরিচালক ও সিআইটিএফ-২০২২ কমিটির চেয়ারম্যান এ. কে. এম. আক্তার হোসেন বক্তব্য রাখেন। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে চেম্বার পরিচালকবৃন্দ মোঃ অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), অঞ্জন শেখর দাশ, মোঃ ওমর ফারুক, ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন, এস. এম. তাহসিন জোনায়েদ, তানভীর মোস্তফা চৌধুরী ও মোহাম্মদ নাসিরুল আলম (ফাহিম), সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন ট্রেডবডি নেতৃবৃন্দ এবং অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিসহ নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন-বর্তমান বিশ্বে খাদ্য ও জ্বালানী সংকট চলছে। এক্ষেত্রে আগামী দিনের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী ব্যবহারে আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। রপ্তানি বহুমূখীকরণ সম্ভব না হলে বৈদেশিক মুদ্রার উপর চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের রিজার্ভ সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। ছয় মাসের অধিক আমদানি ব্যয় নির্বাহ করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। দেশের অর্থনীতির বেশির ভাগ নির্দেশক সন্তোষজনক। তবে ভবিষ্যতের চাহিদা বিবেচনায় আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিবর্তনের মাধ্যমে শিল্প ও সেবা খাতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। তিনি শিল্পোদ্যোক্তাদের আঠার বছরের উর্ধ্বে ছাত্র-ছাত্রীদের ইন্টার্ন হিসেবে নিয়োগ প্রদান এবং নিজেদের কর্মীদের দক্ষ করার লক্ষ্যে বিনিয়োগের আহবান জানান।

বিশেষ অতিথি চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন-শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন চিটাগাং চেম্বার ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অর্থনৈতিক গতিধারাকে সহায়তা করতে সরকার বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বে-টার্মিনাল নির্মাণ, চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করা এবং মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর বাস্তবায়ন করছে। তিনি সেবা খাতে পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের সক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগানো এবং ডিজিটালাইজেশনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিশেষ অতিথি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন-করোনা অভিঘাতের পরেও সরকারি ইনসেনটিভসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৫-৬% প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে উন্নত বিশ্বও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। সরকার ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে প্রায় বত্রিশ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। তিনি জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি জায়গায় বিশেষায়িত হাসপাতাল, স্পোর্টস ভিলেজ, ইকো পার্ক এবং গ্রীণ ইন্ডাষ্ট্রি নির্মাণে সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন-পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশ যোগাযোগের ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে গেছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে টানেল, গভীর সমুদ্র বন্দর, কক্সবাজার রেললাইন, বে-টার্মিনাল ইত্যাদি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে দশ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখতে বন্দর সচল রাখা এবং চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক নির্বিঘেœ চালু রাখার ক্ষেত্রে চেম্বার সবসময় সরকারের সাথে কাজ করে থাকে। দেশীয় বিভিন্ন পণ্যের পরিচিতির লক্ষ্যে প্রতিবছর চেম্বার এই মেলা আয়োজন করে। তিনি অগ্রাধিকারভিত্তিতে বে-টার্মিনালের কাজ সম্পন্ন করা, মেলার জন্য একটি স্থায়ী ভেন্যু প্রদান, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সরকারি দপ্তরসমূহের ক্ষমতায়ন, আইসিডিসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ব্লু-ইকনোমির সম্ভাবনার সদ্ব্যবহারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি আহবান জানান।

চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর দেশে শিল্পায়নের প্রসার, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন, নিম্নবিত্তের জনগণের অবস্থার উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিশাল অবদান রয়েছে উল্লেখ করে এসব শিল্পে উৎপাদিত পণ্যসমূহের প্রচার, বিপণন ও প্রসারের লক্ষ্যে বেসরকারী পর্যায়ে চেম্বারের অন্যতম আয়োজন “চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা” ২৯তম বারের মত অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানান।

চেম্বার পরিচালক ও সিআইটিএফ-২০২২ এর চেয়ারম্যান এ. কে. এম. আক্তার হোসেন মেলা সফলভাবে আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকল দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানসমূহ, আগত দর্শনার্থী, জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব), মেট্রোপলিটন পুলিশ, নগর বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, এনএসআই, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পিডিবি কর্তৃপক্ষ ও সম্মানিত এ্যাওয়ার্ড কমিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠান শেষে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে জুরি বোর্ড কর্তৃক শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্যাভিলিয়ন এবং স্টলকে এ্যাওয়ার্ড ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এবারের মেলায় প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন ক্যাটাগরীতে প্রথম আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিঃ, দ্বিতীয় বিআরবি ক্যাবল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ এবং তৃতীয় প্রাণ আরএফএল গ্রুপের মিঠাই; স্টলসমূহের মধ্যে মিল্কভিক বাংলাদেশ লিঃ, গোল্ডেন ইনফিনিটি লিঃ ও শার্টবাজার যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেরা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। উল্লেখ্য, মেলা ০৮ জুলাই’২২ ইং শুক্রবার রাত ১১.০০ টা পর্যন্ত চলবে।

-সংবাদ বিজ্ঞপ্তি