Home Second Lead ৭ মার্চ জাতীয় জীবনে অবিস্মরণীয় দিন: রেজাউল

৭ মার্চ জাতীয় জীবনে অবিস্মরণীয় দিন: রেজাউল

যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গণাদের কথা শুনে হাসে, তারা সবচেয়ে বড় হারামজাদা:অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদ ও নাগরিক সমাজের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত অমর একুশে বই মেলায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলছেন, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বাঙ্গালির জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল এক দক্ষ কৌশলীর সুনিপুণ বক্তব্য। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিক। তিনি জনগণ ও শাসকশ্রেণির নাড়ি বুঝতেন। জনগণের সাথে তার যোগাযোগের ক্ষমতা ছিল অনবদ্য। সহজ-সাবলীলভাবে তার কথাগুলো জনগণকে বুঝিয়ে দিতে পারতেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষনে ছিল প্রথমদিকে ইতিহাস, মাঝের দিকে অত্যাচার ও অন্যায়ের কথা এবং হুঁশিয়ারির সাথে সাথে আলোচনার আহ্বান আর শেষের দিকে জনগণের প্রতি দিক-নির্দেশনামূলক কথাবার্তা। শেষের কথাটি ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” ভাষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডায়লগ যেটি শোনার জন্যেই শ্রোতারা মুখিয়ে ছিলেন। সবশেষে ‘জয় বাংলা’ বলে ভাষণটি শেষ করেছেন বঙ্গবন্ধু, যে স্লোগানটি পরবর্তীতে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের রণধ্বনিতে পরিণত হয়েছিল। আমাদের আনন্দের বিষয় হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ‘জয় বাংলা ‘ স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইমেলা কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু।

প্রধান আলোচক বঙ্গবন্ধু চেয়ার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাসবিদ ও গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। আলোচক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা.মাহফুজুর রহমান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ’র উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো.জসিম উদ্দীন, সচিব খালেদ মাহমুদ, সাংবাদিক ওমর কায়সার।
প্রধান আলোচক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের সূচারুভাবে ব্যবচ্ছেদ করলে এর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিকটি সমান্তরালভাবে চোখে পড়ে। শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু সে ভাষণটি দেননি। বাঙালি সেদিন তার মাধ্যমে তাকে কেন্দ্র করে মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিল। তাই, তার প্রতিটি পদক্ষেপ ও বাণী ছিল বাঙালির আশা-আকাঙ্খার নিয়ন্ত্রক। ভাষণে মূলত চারটি দাবি তোলা হয় মার্শাল ল প্রত্যাহার, সেনাদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া, রাজনৈতিক হত্যাকা-গুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর।

তিনি বলেন, ‘দাবি পূরণের পরে আমরা ভেবে দেখবো অ্যাসেম্বলিতে বসব কিনা’। এ ধরনের কথা উচ্চারণ করে একদিকে বঙ্গবন্ধু আলোচনার পথ খোলা রাখলেন এবং ভাষণ পরবর্তী সৃষ্ট স্বায়ত্তশাসন দাবির আন্দোলনের দায়ভার থেকে নিজেকে এবং তার দলকে বাঁচিয়ে নিলেন। বিশ্ব দরবারে বঙ্গবন্ধু একজন উদারপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিতি পান। ভাষণের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চেতনার দিকটি খুব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে এই উক্তিতে ‘এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি-অবাঙালি যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপর’। সরাসরি না বলেও তিনি বাঙালিদের বুঝিয়ে দিলেন তার মনের কথা। পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিরোধের নির্দেশনামা। বাঙালির মনের জোর গেল বেড়ে। বাঙালি বুঝে গেল কী করতে হবে সামনের দিনগুলোতে। পাকিস্তানিরাও হতভম্ব হয়ে রইল কিছুক্ষণ। বঙ্গবন্ধুর চাতুর্যময় রাজনৈতিক চালের বিপরীতে তারা চালল নগ্ন একটি চাল। নিরীহ এবং নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হল। শুরু হল প্রত্যক্ষ মুক্তিসংগ্রাম।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গণাদের কথা শুনে হাসে তারা সবচেয়ে বড় হারামজাদা।
বইমেলায় আগামীকালের অনুষ্ঠানসূচি হলো ‘নারী উৎসব’।-সংবাদ বিজ্ঞপ্তি