বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রবীণ অভিনেতা, একুশে পদক বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধা আলী যাকের-এর মরদেহ শনিবার বাদ আসর নামাজে জানাজাশেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
মৃত্যুর আগে করোনা পজিটিভ আসায় করোনা নীতিমালা মেনেই দাফন করা হয় এ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে।
ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রবীণ অভিনেতা আলী যাকের। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই সন্তান এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
শুক্রবার সকাল ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে আলী যাকেরের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। সেখানে গার্ড অব অনার জানানো হয় তাকে। পরে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। বাদ আসর জানাজা শেষে দাফন করা হয় তাকে।
১৯৭২ সালে মঞ্চনাটকে আবির্ভাবের মধ্যে দিয়ে আলী যাকের নাট্যাঙ্গনে প্রবেশ করেন।
টেলিভিশন নাটক এবং মঞ্চনাটকে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন আলী যাকের। ১৯৮০ এবং ৯০’র দশকে আলী যাকের অভিনীত বেশ কিছু নাটক দর্শকদের মনে স্থান করে নিয়েছিল।
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পেছনে আলী যাকেরের অবদান রয়েছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি।
শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
আলী যাকের ক্যান্সারে ভুগছিলেন কয়েক বছর ধরে। সেই সঙ্গে বয়সজনিত আরও বিভিন্ন সমস্যা। গত সপ্তাহে শারীরিক সমস্যা বেড়ে গেলে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। কিছুটা সুস্থ হলে বাসায় নেয়া হয় শনিবার। পরদিন আবার ভর্তি করা হয়। করোনা টেস্ট করা হলে ফলাফল পজিটিভ আসে।
১৯৪৪ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এ নাট্য ব্যক্তিত্ব। আলী যাকের ছিলেন চার ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয়। তার বাবা মোহাম্মদ তাহের ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। বাবার চাকরির বদলি সূত্রে অল্পবয়সে কুষ্টিয়া ও মাদারিপুরে কাটান আলী যাকের।
আলী যাকের ৮ নং সেক্টরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন।
নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর বিখ্যাত ‘কবর’ নাটকের মধ্য দিয়ে তিনি প্রথম মঞ্চে উঠেন। পরবর্তীতে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে যোগদান করেন। সেখানে তার অভিনীত ‘দেওয়ান গাজির কিসসা’, ‘নুরুল দিনের সারাজীবন’ দেশের মঞ্চনাটকের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।
টেলিভিশন নাটকে ‘আজ রবিবার’ ও ‘বহুব্রীহি’ দিয়ে তিনি পরিচিত লাভ করেন।
১৯৭৫ সালে নাট্য অভিনেত্রী সারা যাকেরকে বিয়ে করেন। তাদের ছেলে ইরেশ যাকের ও মেয়ে শ্রেয়া সর্বজয়া।
আলী যাকের বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পদক, বঙ্গবন্ধু পদক, মুনির চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ একাধিক সম্মাননা পান।