প্রস্তাবে বলা হয়, গত দুই বছরে করপোরেট করহার ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কমানো হলেও প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় তা অনেক বেশি। ভারতে উৎপাদনমুখী শিল্প খাতের জন্য বেশি কর প্রণোদনা দেওয়া হয়। ভিয়েতনামেও একই সুবিধা দেওয়া আছে। বাংলাদেশে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ভারত এবং ভিয়েতনামের মতো কর কাঠামো নির্ধারণ করা যেতে পারে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আমাদের দেশে অননুমোদিত ব্যয় এবং উৎসে কর কর্তন (টিডিএস) এত বেশি যে, আমরা এ করপোরেট করহারের ৫ শতাংশ কমানোর সুবিধা ভোগ করতে পারছি না। বাস্তবে এ করপোরেট করহার পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে আর নির্দিষ্ট থাকে না, তা ক্ষেত্রবিশেষে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে যায়। সুতরাং বিষয়টি আবারও বিবেচনার আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা।
এমসিসিআইর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, পরপর দুই অর্থবছর করপোরেট কর কমানো হয়েছে। বর্তমানে করপোরেট কর ৩০ শতাংশ। আমি মনে করি, করপোরেট কর আরও কমানোর যৌক্তিকতা আছে, কিন্তু একটা ঝুঁকি আছে। রাজস্ব কমে যেতে পারে। কর আরও কমালে যে অভিঘাত আসবে, তা সইবার মতো ক্ষমতা আছে কি না, ভেবে দেখতে হবে।
করহার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষার জন্য যা যা করা দরকার, তাই করা হবে। মেইড ইন বাংলাদেশের ধারণা আগামী বাজেটও অব্যাহত থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা রাজস্ব প্রশাসন সহজ করতে চাই। একমাত্র অটোমেশনই পারে এ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে। আমরা সেদিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও জানান, রাজস্ব আদায় করবে মেশিন। আর কর্মকর্তারা গবেষণা কাজ করবে। এনবিআরের নতুন সম্প্রসারণের প্রস্তাবে গবেষণা বিভাগকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আসবে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এর জন্য কর নেট বাড়াতে হবে। কারণ নেট যত বাড়বে, রেট তত কমবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করপোরেট করহার এখনো বেশি। শিল্প খাতকে প্রতিযোগিতা করতে হলে এ হার কমাতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর দেশের করকাঠামো কেমন হবে, তা নিয়ে এখন থেকে কাজ শুরু করতে হবে। সৎ ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য এনবিআরের চেয়ারম্যানকে বিশেষ অনুরোধ করেন নিহাদ কবির। তিনি বলেন, লেবু বেশি চিপলে তিতা হয়ে যায়। যারা ট্যাক্স ফাঁকি দেয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এমসিসিআইয়ের নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে উৎপাদনমুখী যেসব শিল্প খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, তাদের জন্য কম হারে কর নির্ধারণ করা আছে। ভারত এবং ভিয়েতনামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশে কর কাঠামো নির্ধারণের প্রস্তাব করেন তিনি।
অন্যদের মধ্যে এনবিআরের সদস্য (শুল্কনীতি) মাসুদ সাদিক, সদস্য (ভ্যাটনীতি) জাকিয়া সুলতানা ও সদস্য (আয়করনীতি) সামসুদ্দিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন।