জাতে সে হোয়াইট ডোয়ার্ফ। বামন তারা। আকারে ছোট কিন্তু তেজ মারাত্মক। ঘন, গাঢ় ভরের এই বামন তারার ঘনত্ব সূর্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কিন্তু এই তারার মৃত্যু হয়েছে অনেক আগেই। তাও মায়া কাটাতে পারেনি এর আশপাশে থাকা গ্রহ। মৃত তারার শরীর ঘিরেই পাক খেয়ে চলেছে সে। পৃথিবীর খুব কাছেই ঘটে চলেছে এমন ঘটনা।
গ্রহ ও তারার প্রেম নতুন কিছু নয়। আগুনের তারার অংশ ছিটকে গ্রহ তৈরি হতে দেখা যায়। তারাদের ঘিরেই গ্রহদের সংসার। যেমন সূর্যের মতো নক্ষত্রকে ঘিরে একটা আস্ত সৌরমণ্ডল তৈরি হয়েছে। পৃথিবী থেকে ওই বামন তারা ও তার সঙ্গী গ্রহের দূরত্বে মাত্র ৮০ আলোকবর্ষ। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, গ্রহটির নিজের অক্ষের চারপাশে পাক খেতে সময় লাগে ১.৪ দিন।
পৃথিবীর ধারে কাছে এমন বিচিত্র ঘটনা যে ঘটছে তার আভাস আগেই পেয়েছিলেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। ভিন্ গ্রহের খোঁজ করতে গিয়ে এই গ্রহ-তারার জুটিকে আবিষ্কার করেছে নাসার ‘ট্রানসিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট’ (TESS) । তবে টেস একা নয়, পুরনো আমলের স্পিৎজার স্পেস টেলিস্কোপেও ধরা পড়েছে এই বামন তারা ও গ্রহের জুটি। ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিকাল জার্নাল লেটার্স’ বিজ্ঞানপত্রিকায় এই জুটির কথা ছাপা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই হোয়াইট ডোয়ার্ফের নাম WD 1856+534 । আর বৃহস্পতির মতো পেল্লায় ওই গ্রহের নাম WD 1856b। বিজ্ঞানীদের দাবি, ওই গ্রহটিকে দেখতে যতই বৃহস্পতির মতো হোক, আকারে ও ভরে বৃহস্পতির থেকেও প্রায় ১৪ গুণ বড়। বুধের থেকেও বেশি গতি।
সাদা বামন তারারা এমনিতে খুব উত্তপ্ত হয়। প্রচণ্ড শক্তির বিকিরণ হয় তাদের শরীর থেকে। পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা এমন বামন তারা হল সিরিয়াস বি। ৮.৬ আলোকবর্ষ দূরেই আছে এই তারা। মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলছেন, সূর্যের কাছাকাছি এমন শতাধিক তারার ভিড়ে মিশে আছে অন্তত আটটি সাদা বামন তারা বা হোয়াইট ডোয়ার্ফ।
এই সাদা বামন তারাদের তেজ এত বেশি হয় যে এদের চারপাশে ঘুরতে হিমশিম খেতে হয় গ্রহদের। তুলনায় লাল বামন তারারা অনেক শান্তশিষ্ট, যেমন প্রক্সিমা সেনটাওরি, আমাদের সূর্যের মতো অতটা গনগনে আঁচে ফুটছে না। অনেকটাই শান্তশিষ্ট নক্ষত্র প্রক্সিমা সেনটাওরি। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে ‘রেড ডোয়ার্ফ স্টার’ বা লাল বামন নক্ষত্র। ফলে, তার চার পাশে পাক মারতে গিয়ে গ্রহের শরীর জ্বলে পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
নাসার ‘নিয়ার-আর্থ অবজেক্ট ওয়াইড-ফিল্ড ইনফ্রারেড সার্ভে এক্সপ্লোরার’ (NEOWISE) স্যাটেলাইট মহাশূন্যে ভিন গ্রহদের খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে আগেও দুই লালচে বামন গ্রহের খোঁজ পেয়েছিল নাসা। ওই দুই বামন হল ‘টি-টাইপ সাবডুয়ার্ফ’ । গ্রহের মতো স্বভাব নয় তাদের, আবার নক্ষত্রদের মতোও চরিত্র নয়। তারা অনেকটাই আলাদা। আমাদের ছায়াপথের যে প্রবীণ নক্ষত্ররা রয়েছে তাদের থেকে আলাদা এই দুই বুড়ো বামন। বৃহস্পতি গ্রহের চেয়ে এরা ভরে ৭৫ গুণ বেশি। বয়স কম করেও ১০০০ কোটি বছর। লালচে-বাদামি রঙা শরীর তৈরি হয়েছে গ্যাস দিয়ে। তারার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেসব গ্রহ বা মহাজাগতিক বস্তু তৈরি হয় তাদের দেহে যে পরিমাণ লোহা থাকে, এই দুই বামনের শরীরে তেমনটা নেই। লোহার পরিমাণ খুবই কম। তাই তাদের জন্মরহস্য এখনও আঁধারেই রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেদিন এই দুই বামনের জীবনবৃত্তান্ত বার করে ফেলা যাবে, সেইদিনই অন্যান্য ভিন গ্রহদের জন্মরহস্যও সামনে চলে আসবে। পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা বামন তারা ও তাদের চারপাশে প্রদক্ষিণরত গ্রহদের চরিত্র বোঝাও সম্ভব হবে।
-the wall