Home রকমারি সংবাদ ১ লক্ষ ২০ বছর আগের মানুষের পায়ের ছাপ

১ লক্ষ ২০ বছর আগের মানুষের পায়ের ছাপ

১ লক্ষ ২০ হাজার বছরের পুরনো মানুষের পায়ের ছাপ! তেমনই প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করলেন ঐতিহাসিক ও গবেষকরা। এই পায়ের ছাপ ধরেই খোঁজ মিলতে পারে বিবর্তনের নয়া ইতিহাসের, জানা যেতে পারে অসংখ্য নতুন তথ্য।

সৌদি আরবের উত্তরে নেফুদ মরুভূমি অঞ্চলের তাবুক এলাকায় এই চাঞ্চল্যকর ইতিহাসের খোঁজ মিলেছে। সৌদির আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ টিমের ঐতিহাসিকরা প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছেন, যেখানে পায়ের ছাপটি মিলেছে, তা দেখে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার একটি অগভীর হ্রদে মানুষেরা দল বেঁধে নামত জল খেতে।

বুধবার ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যাতে দাবি করা হয়েছে, আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বিভিন্ন প্রান্তে পূর্বপুরুষদের ছড়িয়ে পড়ার পথের নতুন খোঁজ পাওয়া যাবে গবেষণায়।

Human footprints dating back 120,000 years found in Saudi Arabia | Daily Mail Online

ওই প্রতিবেদনে আরও বলে হয়েছে, পায়ের ছাপটির চারপাশ ভাল করে খতিয়ে দেখে জানা গেছে, ওই মানুষেরা বড় বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী শিকার করত। তারা এক জায়গায় বেশি দিন থাকত না। গবাদি পশু সঙ্গে ছিল না তাদের। জলের ধারে থাকত তারা। কিন্তু ওই মরু এলাকায় জলের হ্রদ কোথা থেকে এল!

বহু দিন ধরেই ইতিহাস-গবেষকেরা বলে আসছেন, সৌদি আরবের পরিস্থিতি প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক পরিস্থিতি বারবার পরিবর্তিত হয়েছে। একসময় সবুজ এবং আর্দ্র অবস্থায় থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আচমকা শুষ্ক ও রুক্ষ দেশ হয়ে ওঠে সৌদি আরব। এই আচমকা পরিবর্তনের কারণেই এত বছর আঘের পায়ের ছাপটি রয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটির সহ-লেখক রিচার্ড ক্লার্ক-উইলসন ব্যাখ্যা করেছেন, “যে মরুভূমি এখন আরব উপদ্বীপে বিস্তৃত, সেখানে আগে স্থায়ী মিষ্টি জলের হ্রদ এবং নদী ছিল। ছিল বিস্তীর্ণ তৃণভূমি।”

এলাকাটিতে মোট সাত জন মানুষের পায়ের ছাপের সঙ্গে ১০৭টি উটের পায়ের ছাপও রেকর্ড করা হয়েছে। ৪৩টি হাতির চিহ্নও খুঁজে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রেকর্ডে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রাণীর চিহ্ন পাওয়া গেছে।

Saudi Arabia discovers new archaeological site that dates back 120,000 years - The National

জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল ইকোলজির গবেষক ম্যাথু স্টুয়ার্ট এ বিষয়ে জানিয়েছেন, তিনি যখন ২০১৭ সালে ওই এলাকায় গবেষণার কাজ করছিলেন, তখন ওই পায়ের ছাপের খোঁজ পান। আলাথার নামের প্রাচীন এক হ্রদে ওই ছাপ পাওয়া যায়। তখন থেকেই ইতিহাসবিদরা উৎসাহ দেখিয়েছিলেন। এতদিনে নিশ্চিত হওয়া গেছে সে ছাপের ব্যাপারে।

ইতিহাস বলে, পায়ের ছাপ আসলে সময়ের প্রমাণের একটি অনন্য রূপ, যা সঠিক তথ্য দিতে পারে। পায়ের ছাপ যে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারে, তা অন্য কোনও রেকর্ডে পাওয়া যায় না।

গবেষকেরা বলছেন, তাঁরা যে পায়ের ছাপ পেয়েছেন, তা অপেক্ষাকৃত আধুনিক মানুষের। কারণ নিয়ানডারথলদের সঙ্গে এর পার্থক্য রয়েছে। ওই সময়ে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে নিয়ানডারথলদের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।

গবেষক স্টুয়ার্ট বলেন, ওই হ্রদে মানুষের পাশাপাশি প্রাণীরাও আসত। তিনি আরও বলেন, “আগে ধারণা করা হত, আদি যুগে মানুষ দক্ষিণ গ্রিস এবং লেভান্ট হয়ে ইউরেশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময়ে তারা উপকূল ধরে চলত। কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, অভ্যন্তরীণ পথ, হ্রদ এবং নদী অনুসরণ করে তাদের ছড়িয়ে পড়ার দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ। সে সময়ে উত্তর আরবের বিস্তীর্ণ তৃণভূমি, জলের উৎস এবং শিকার করার মতো প্রাণীর উপস্থিতির কারণে এই এলাকায় থাকত তারা।”

সৌদি আরবের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এক প্রধান ডক্টর জাসির আল হারবাস এ বিষয়ে বলেন, “প্রাচীন যুগে আরব উপদ্বীপে মানব বসতি থাকার সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক নির্দশন এটিই। আবিষ্কারটি বিশ্বের ইতিহাসেও গুরুত্বপূর্ণ। ওই অঞ্চলে যে অনুকূল জৈবিক পরিবেশ ছিল, তার সপক্ষে প্রমাণ বহন করছে এই পায়ের ছাপ।-দি ওয়াল