বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: বিকাশ হ্যাকার চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছেঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একটি টিম ।
মঙ্গলবার রাজধানীসহ ফরিদপুরের মধুখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম।
বুধবার বেলা ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. রানা খান, মো. লিটন, মো. নয়ন শেখ, মো. টিটু মোল্লা, মো. সালমান মোল্লা, আকাশ শেখ, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, মো. রহিম ও মো. তানজিল। গ্রেপ্তারকৃতদের হেফাজত হতে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২টি আইফোনসহ ১০টি মোবাইল ফোন, ৩৭টি সিম ও ১টি প্রোভক্স গাড়ি উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডিবি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন বিভিন্ন বিকাশের দোকানে ক্যাশ ইন রেজিস্ট্রারের নম্বর লেখা পাতাটির ছবি সু-কৌশলে তুলতেন। এরপর হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে ফরিদপুরের মধুখালী থানার ডুমাইন গ্রামে থাকা মূল হ্যাকারদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এ জন্য নম্বর লেখা প্রতিটি পাতা ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করতেন। মূল হ্যাকাররা ছবির নম্বর দেখে বিকাশের দোকানদার সেজে ভিকটিমকে বিভিন্ন অপারেটরের সিম থেকে কল দিতেন এবং বলতেন তার দোকান থেকে ভুলে কিছু টাকা ভিকটিমের নম্বরে চলে গেছে। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভিকটিমের একাউন্টটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং বিকাশ অফিস থেকে তাকে কল দেওয়া হবে। একটু পর মূল হ্যাকার বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে বিকাশ অফিসের নাম করে বিকাশ সেন্টারের মূল নম্বরের সদৃশ নম্বর হতে ভিকটিমকে কল দিতেন।
ভিকটিমের নম্বরে তখন +০১৬২৪৭ থেকে কল আসে। কলসেন্টারের উক্ত ব্যক্তি ভিকটিমের নম্বরে একটি OTP (one time password) প্রেরণ করতেন এবং কৌশলে প্রেরিত OTP ভিকটিমের কাছে জানতে চায়। ভিকটিম প্রতারিত হয়ে তার কাছে প্রেরিত OTP এবং PIN নম্বর বলে দেয়। ভিকটিম অনেক সময় পিন নম্বর বলতে না চাইলে হ্যাকার ভিকটিমকে একটি অঙ্ক করার জন্য বলতেন এবং অঙ্ক করার ছলে ভিকটিমের কাছ থেকে সু-কৌশলে পিন নম্বর জেনে নিতেন। OTP এবং PIN জানার পর হ্যাকাররা ভিকটিমের অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতেন।
হ্যাকার ভিকটিমের অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ভিকটিমের অ্যাকাউন্টের টাকা বিভিন্ন এজেন্ট পয়েন্টে পাঠিয়ে দিয়ে হ্যাকারদের মনোনীত ব্যক্তির মাধ্যমে টাকা ক্যাশ আউট করে নিতেন।
এ জন্য উক্ত ব্যক্তিকে প্রতি ১০ হাজারে ১০০০ টাকা প্রদান করা হতো। টাকা ক্যাশ আউট করার পর উক্ত ব্যক্তি পুনরায় হ্যাকারদের পার্সোনাল বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে দিতেন। হ্যাকাররা উক্ত টাকা মধুখালী ফরিদপুরের বিভিন্ন ব্যক্তি, যারা প্রতি হাজারে ৪০০ টাকা করে কমিশন গ্রহণ করে ক্যাশ টাকা হ্যাকারদের নিকট প্রদান করতেন।
হ্যাকাররা বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রিকৃত বিকাশ পার্সোনাল অ্যাকাউন্টের প্রতিটি সিম ৩০০০-৪০০০ টাকায় ক্রয় করতেন। হ্যাকাররা প্রতারণার কাজে আইফোন ব্যবহার করতেন।
তারা সকলেই বিকাশের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বর্তমান পেশা হিসেবে এই প্রতারণার ব্যবসা করে আসছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার আরও বলেন, বিকাশ হ্যাকার চক্র থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিকাশ এজেন্ট সেজে কেউ ফোন করে পিন নাম্বার অথবা পাসওয়ার্ড চাইলে না দেয়ার জন্যও তিনি অনুরোধ জানান।
উল্লেখ্য যে, বিকাশ প্রতারণার ঘটনায় ভাটারা থানায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর একটি মামলা হয়।