Home কৃষি কচুচাষে বদলে গেছে ১১ গ্রামের কৃষকের জীবন

কচুচাষে বদলে গেছে ১১ গ্রামের কৃষকের জীবন

নূরে আলম সিদ্দিকী নূর
বিরামপুর: আজমল হোসেন। বয়স ৩৬ বছর। বাবার অভাবের সংসারে সামনে চলার পথে ছিল অনেক প্রতিকূলতা। এরই সাথে যুদ্ধ করে কোনমতে এইচএসসি পাশের পর পড়াশুনায় আর সামনে এগুতে পারেননি। অবশেষে কৃষি কাজকেই জীবিকার একমাত্র পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। জমিতে প্রতিবছর ধান ও গমের আবাদ করলেও প্রধান আবাদ হিসেবে তালিকার শীর্ষে রয়েছে কচুচাষ। অত্যন্ত লাভজনক ও খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় বিগত ১২ বছরের বেশি সময় ধরে  মুখীকচু আবাদ করছেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক আজমল হোসেন। মা ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেশ কেটে যাচ্ছে তার সংসার। শুধু আজমল হোসেন নয়, ভবানীপুর গ্রাম ছাড়াও আশেপাশের ১০টি গ্রামের অধিকাংশ কৃষকই এখন কচুচাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
এ উপজেলার ভবানীপুর, মুকুন্দপুর, কেশবপুর, ফকিরপাড়া, হরেকৃষ্টপুর, মাহমুদপুর, প্রস্তমপুর, সারাঙ্গপুর, চকবসন্তপুর, মির্জাপুর ও হাবিবপুর গ্রামের মাঠে সবচেয়ে বেশি কচুর চাষ হয়। এসব গ্রামের কৃষকদের কচুচাষে সাফল্য ও লাভের হিসেব দেখে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে কচুচাষের প্রসার ঘটছে। এসব এলাকার উৎপাদিত কচু খাদ্য ও বীজ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। কচুচাষে সফলতার গল্প এখন এসব গ্রামের ঘরেঘরে। একবিঘা থেকে আড়াই বিঘা জমিতে কচুচাষ করে দারিদ্রতাকে জয় করেছেন এরকম কৃষকের সংখ্যা শতাধিক। ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা থেকে শুরু করে তাদের বিয়ে দেয়া, সংসারের বাড়তি চাহিদা মেটানো ও ঘর সাজানোর আসবাবপত্র কেনাকাটাও হচ্ছে কচুচাষের আয়ের টাকায়।
এ বিষয়ে কথা হলে ভবানীপুর গ্রামের কৃষক আজমল হোসেন  বলেন, মুখীকচু আবাদে অন্যান্য ফসলের তুলনায় পরিশ্রম ও খরচ কম কিন্তু উৎপাদন বেশি। ফলে লাভও বেশি। আমি আমার নিজের দেড়বিঘা জমিতে কচু আবাদ করেছি। এখান থেকে যা আয় হবে তা দিয়ে বেশ কেটে যাবে পুরো বছর।
একই গ্রামের প্রবীণ কৃষক আব্দুল হাকিম মেম্বার কচুচাষে সাফল্যের কথায়  বলেন, গ্রামে এবছর প্রায় ১২০ বিঘা জমিতে কচুর আবাদ হয়েছে। আমি আড়াই বিঘা জমিতে হলান্ড জাতের কচুচাষ করেছি। বিঘাপ্রতি ফলন প্রায় ১শ মণ করে হয়েছে। জমি থেকে এ পর্যন্ত ২৩০ মণ কচু তুলে ৮শ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি।
হাকিম মেম্বার বলেন, জমি চাষ থেকে শুরু করে জমি থেকে কচু তুলে পরিষ্কার করা পর্যন্ত প্রতিবিঘা জমিতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আড়াই বিঘা জমিতে যে পরিমাণ কচুর ফলন হয়েছে সবখরচ বাদ দিয়ে এবার আমার প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা লাভ হবে।
উপজেলার হাবিবপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির খুলিতে প্রায় ১০-১৫ জন বিভিন্ন বয়সী নারী গোল হয়ে গল্প করছেন আর হাতে চামচ আবার কেউ ঝিনুকের খোলস দিয়ে কচুর গা থেকে শেকড় ছড়াচ্ছেন। তাদের মধ্য একজন আকলিমা বেগম (৪২)।  তার সাথে কথা হলে তিনি  বলেন, সকালে সংসারের গৃহস্থালি কাজ শেষ করে খাওয়া-দাওয়ার পরে গ্রামের নারীদের এ দলে যোগ দিয়ে কচু পরিষ্কার করছি। একমণ কচু পরিষ্কার করলে কচুর মালিক ৬০ টাকা দেন। অবসর সময়ে মেয়েকে এ কাজে সাথে নিয়ে প্রতিদিন প্রায় আড়াই মণ কচু পরিষ্কার করি। কচু পরিষ্কার করে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসারের বাড়তি খরচ মেটাই।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিকছন চন্দ্র পাল বলেন, বিরামপুর উপজেলার অধিকাংশ এলাকার কৃষি জমিতে বেলে-দো-আঁশ মাটির মিশ্রণ রয়েছে। এসব জমি কচুচাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। চলতি খরিপ-১ মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৫শ ৫০ জন কৃষক কচুচাষ করেছেন। এবছর কচুচাষে আগ্রহী কৃষকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৬০ হেক্টর জমিতে কচুচাষ হয়েছে। এবারে কচুচাষীরা বাজারে কচুর দাম অনেক ভালো পাওয়ায় আগামীতে আরো বেশি পরিমাণে কচুচাষ হবে বলে আশা করছি।
-দৈনিক সময়ের আলো