সোহেল মাহমুদ
খুলনা: দীর্ঘদেহী খুলনার উজ্জ্বল সুস্থভাবে বাঁচতে চায়। দরিদ্র কৃষক পরিবারের ২১ বছর বয়সী উজ্জ্বলের উচ্চতা সাত ফুট আর ওজন ১৬২ কেজি। ছোট বেলা থেকেই তার শারিরীক পরিবর্তন নিয়ে বাবা-মা সাধ্যমতো চিকিৎসা করেও ছেলের কোন উন্নতি না হওয়ায় হাল ছেড়েছেন।
খুলনার চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যওয়ার পরামর্শ দিলেও পরিবারের সে সার্মথ্য নেই। বর্তমানে চিকিৎসার জন্য উজ্জ্বল নিজে ভ্যান চালিয়ে নিজের ওষুধ কিনে বেচে থাকার সংগ্রাম করছেন।
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার চক্রাখালি গ্রামের ঠাকুরদাস মন্ডলের ছেলে উজ্জ্বল মন্ডল, মা শ্যামলী মন্ডল। তিন ভাই বোনের মধ্যে তিনি বড়। ছোট ভাই উৎপল মন্ডল আর একমাত্র বোন উৎপলা মন্ডল।
জন্মের পর সুস্থভাবে বেড়ে উঠলেও ১০ বছর বয়স থেকে তার শরীরে দেখা দেয় অস্বাভাবিকতা। দ্রুত বাড়তে থাকে ওজন ও উচ্চতা। ২০ বছর পর তার ওজন দাঁড়ায় ৮০ কেজির বেশী। পরবর্তী এক বছরে তা বেড়ে দাড়ায় ১৬২ কেজিতে।
দরিদ্র দিন মজুর পরিবারের উজ্জ্বল ইতিমধ্যে পেয়েছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্র। প্রতিমাসে ভাতা পেলেও সে টাকায় তার সাত দিনের ওষুধও হয়না। যে কারনে বাধ্য হয়ে কাজ নেন স্থানীয় একটি রড-সিমেন্টের দোকানে। উপজেলা থেকে পেয়েছেন একটি ভ্যান সে ভ্যানে করেই ইট-বালি-সিমেন্ট-রড পরিবহন করে চলে তার জীবন। বর্তমানে তার চলা ফেরায় সমস্যা হচ্ছে। প্রতিটি হাড়ের জয়েন্টে ব্যাথা হচ্ছে। তিনি জানান, নিজের ওজন আর তিনি বহন করতে পারেননা, তবুও টাকার জন্য তাকে কষ্ট করে হলেও কাজ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাবা-মা দুজনেই কৃষাণের কাজ করে কিন্তু সব সময় তাদের কাজ থাকেনা। তাদের সামন্য আয়ে সংসার চলা কঠিন হয়ে যায়, তার উপর প্রতিমাসে তার চিকিৎসায় খরচ হয় তিন হাজার টাকা। এছাড়া উজ্জ্বলের প্রতিবেলায় আধাকেজি চালের ভাত সহ মাছ-তরকারিতে খরচ লাগে এজন্য প্রায় সময়ই অন্যের কাছে সাহায্য নিতে হয়।
উজ্জ্বল বলেন, বর্তমানে তার একটি মাত্র চটি রয়েছে যেটা দু’বছর আগে পুজোর সময় দেড় হাজার টাকায় তিনি অর্ডার দিয়ে তৈরী করিয়ে ছিলেন। সেটাও কয়েক জায়গায় ছিড়ে গেছে। তিনি বলেন, তার মাপে বাজারে কোন চটি পাওয়া যায়না। তিনি জানান, পুজোয় যদি মালিক বখশিশ দেন তবে নতুন চটি তৈরী করবেন। উজ্জ্বল তার দীর্ঘদেহ নিয়ে খুশি থাকলেও তার অসুস্থতা নিয়ে চিন্তিত। তিনি বলেন, আমি সুস্থভাবে বাঁচতে চাই। যেন আমি কাজ করে খেতে পারি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের দীর্ঘদেহি মানুষ কক্সবাজারের গর্জনিয়া বড়বিল গ্রামের মৃত জিন্নাত আলি ছিলেন ৮ফুট ৬ইঞ্চি লম্বা। যথাযথ চিকিৎসা পেলে খুলনার উজ্জ্বল মন্ডল হয়ে উঠতে পারে দেশ তথা বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানুষ।