Home আইন-আদালত সুবর্ণচরে গৃহবধূ হত্যা রহস্য উদঘাটন, ছেলেসহ গ্রেপ্তার ৫

সুবর্ণচরে গৃহবধূ হত্যা রহস্য উদঘাটন, ছেলেসহ গ্রেপ্তার ৫

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম: নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার জাহাজমারা গ্রামের বিল থেকে নূরজাহান (৫৮) নামে এক নারীর লাশের পাঁচ খন্ড উদ্ধারের পনের দিন পর ঘটনায় জড়িত নিহতের ছেলে হুমায়স কবির হুমাসহ (২৮) আরো চার জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এরা হলো- হুমার বন্ধু নীরব (২৬) ,প্রতিবেশী কসাই নূর ইসলাম (৩৮), হুমার মামাতো ভাই কালাম প্রকাশ মামুন (২৬) ও মামাতো বোনের স্বামী সুমন (২৫)। এদের মধ্যে দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। ইসমাইল ও হামিদ পলাতক রয়েছে।

উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি, চাপাতি, কোদাল, বালিশ ও মৃতের পরনের শাড়ি। পুলিশের ধারণা অর্থ-সম্পত্তির জন্য তাকে হত্যা করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নুরজাহান হত্যা ও তার রহস্য উদঘাটনের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৭ অক্টোবর বিকেলে সুবর্ণচরের জাহাজমারা গ্রামের একটি বিলের মাঝের বিভিন্ন ক্ষেত থেকে নূরজাহানের লাশের পাঁচটি খণ্ড উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার ছেলে হুমায়ন কবির হুমা বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কোনো প্রকার সূত্র ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ। একাধিক টিম হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের চিহ্নিত করা, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধারে জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে সক্রিয় হয়।

এসপি আলমগীর জানান, হুমায়ন কবিরের সৎভাই বেলাল নিজের গরু, পুকুরের মাছ ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসার পুঁজির জন্য মা নূরজাহানকে জিম্মাদার রেখে চার লাখ টাকা সুদে নেন। ওই টাকা পরিশোধ করা অবস্থায় দেড় বছর আগে একটি ইটভাটায়  বেলাল মারা যান। বেলালের মৃত্যুর পর পাওনাদাররা টাকার জন্য হুমায়ন ও তার মাকে চাপ দিতে থাকে। হুমায়ন চেয়েছিল মৃত বেলাল ও তার মায়ের নামে থাকা জায়গা জমি বিক্রি করে ওই টাকা শোধ করতে। কিন্তু নূরজাহান তাকেই নিজের জমি বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করতে বলেন। এ নিয়ে মা-ছেলের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো।

এর মধ্যে হুমার মামা দুলাল মাঝির কাছ থেকে ৬২ হাজার ৫শ টাকা পাওনা ছিলেন নূরজাহান। তিনি প্রায়ই টাকা ফেরতের জন্য দুলালকে তাগাদা দিতেন। এসব বিষয় নিয়ে নূর জাহানের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল দুলালের ছেলে কালাম ও মেয়ের জামাই সুমন। এর জের ধরেই হুমায়ন, কালাম, সুমন, প্রতিবেশি ইসমাইল, হামিদসহ মোট সাতজন এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী দেনামুক্ত হতে ওইদিন তারা নূরজাহানকে ঘুমের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। পরে লাশটি পাওনাদারদের জমির পাশে নিয়ে বটি, চাপাতি ও কোদাল দিয়ে পাঁচ খণ্ড করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়।

আলমগীর হোসেন আরো জানান, অভিযানকালে সন্দেহজনকভাবে মৃত নারীর ছেলে হুমায়ন কবির হুমার বন্ধু নীরব ও প্রতিবেশী কসাই নূর ইসলামকে গ্রেপ্তার করে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও আগের মামলার বাদি হুমায়ন কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হুমা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত তার মামাতো ভাই কালাম প্রকাশ মামুন ও মামাতো বোনের স্বামী সুমনের তথ্য জানালে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।