Home Second Lead সংকটাপন্ন কাগজ ব্যবসা

সংকটাপন্ন কাগজ ব্যবসা

দোকানে দোকানে কাগজের বিশাল মজুত। বিক্রি নেই। ছবি: জাহাঙ্গীর আলম
  • নজির আহমদ চৌধুরী রোডের ব্যবসায়ীরা ভাল নেই
  • আগে বিক্রি হতো দিনে ১০ লাখ টাকা, এখন ২ লাখও না
  • দাম কমেছে ৬০ ভাগ পর্যন্ত

সুমন চৌধুরী

চট্টগ্রাম: করোনার জেরে ধস নেমেছে কাগজের ব্যবসায়।

আন্দরকিল্লায় নজির আহমদ চৌধুরী রোড কাগজের পাইকারি ও খুচরা বাজার।  এখানে প্রতিটি দোকানে কাগজের বিশাল মজুত। কিন্তু তেমন নেই বেচাবিক্রি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার আগের তুলনায় ৭০ ভাগ  ব্যবসা কমেছে।

নজির আহমদ চৌধুরী রোডের কাগজ বাজার সব সময় জমজমাট থাকতো। কোলাহল আর মেশিনের আওয়াজে সরগরম থাকতো সব সময়। দোকান থেকে কাগজ মাথায় নিয়ে ছাপাখানায় পৌঁছে দিতেন শ্রমিকেরা। এখন কিছুই নেই। কাটিং মেশিনের কট কট শব্দও শোনা যায় না। দোকানে কমেছে কর্মীসংখ্যা। যে কয়েকজন রয়েছেন তাদের সময় কাটে গল্পগুজবে। সড়কের পাশে ভ্যান গাড়িগুলো সারি করে শেকল দিয়ে তালা ঝুলানো।

এই বাজারে ছোট-বড় ৭২০টি দোকান। এগুলোর মধ্যে ডিলার আছে ৬টি। সিকদার এজেন্ট, রাঙ্গুনিয়া প্রেস, ইউছুফ ট্রেডার্স, মেনুফুল ট্রেডার্স, এশিয়া পেপার ও মেসার্স ইসলামী স্টোর বিভিন্ন মিল থেকে কাগজ এনে পাইকারিতে বিক্রি করে। এখানে রয়েছে ছাপাখানাও। কাগজ নেয়ার পর বিভিন্ন মাপে সাইজ করে ছাপাখানায় পাঠানো হয়।

ইসলাম ব্রাদার্সের একজন কর্মি বিজনেসটুডে২৪ কে জানান, করোনার আগে প্রতিদিন আট থেকে ১০ লাখ টাকার কাগজ বিক্রি হতো। কিন্তু এখন দুই তিন লাখ টাকাও বিক্রি নেই। আমরা সাধারণত ডিলার সিকদার এজেন্ট থেকে কাগজ নিয়ে ব্যবসা করি। ৫ জন কর্মচারীর মধ্যে বর্তমানে আছেন দু’জন।

এশিয়া পেপারের ম্যানেজার মো. রবি জানান, এখন কাগজ ব্যবসার মৌসুম। বছরের শেষ দুই মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন সিলেবাস, ডায়েরি, ক্যাশ ম্যামো, ক্যালেন্ডার, খাতা, নতুন বই ইত্যাদি ছাপানোর অর্ডার থাকে। ফলে কাগজের চাহিদা থাকে অনেক। কিন্তু এবার তা নেই। গুদামে কাগজ মজুত। কিন্তু তেমন বিক্রি নেই।

পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশে কাগজের বার্ষিক চাহিদা ১৫ লাখ টন। উৎপাদন হয় ২০ লাখ টন। রপ্তানি হয় বিশ্বের অন্তত ৪০টি দেশে। বিশ্বজুড়ে করোনায় রপ্তানিও কমে গেছে।

বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশনের হিসেবে কাগজ শিল্প রুগ্ন হয়ে পড়ায় উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকে। বিক্রি কমেছে ৭৫ শতাংশ। আর কাগজের দাম কমেছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। মজুদ থাকলেও বিক্রি নেই। অন্যদিকে বন্ড সুবিধার অপব্যহার বন্ধ করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশিয় উদ্যোক্তারা।

মেসার্স ইসলামী স্টোরের প্রোপাইটার মো. মেজবাহ উদ্দীন জানান, আগে আমরা কাগজের জন্য মিলে যোগাযোগ করতাম। নির্দিষ্ট সময়ে তা ডেলিভারিও পেতাম না। নগদে এবং বাকিতে লেনদেন হত। এখন মিলওয়ালারা কাগজ মজুত থাকায় উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। উল্টো ফোন করেন কাগজের অর্ডারের জন্য। তবে না নগদে, বাকিতে নয়।

আন্দরকিল্লা ব্যবসায়ী কল্যাণ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুল ইসলাম বিজনেসটুডে২৪ কে জানান,  করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা এবং প্রযুক্তি নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ব্যবসা হারিয়েছে ঐতিহ্যবাহী কাগজ শিল্প। এমন অবস্থায় উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকে। টুকিটাকি অফিসিয়াল কিছু অর্ডার ছাড়া কিছুই নেই। এ দিয়ে দোকান ভাড়াও উঠে না।

তিনি জানান, অক্টোবর মাস থেকে নতুন বছরের ক্যালেন্ডার ছাপানোর কাজ শুরু হয়। কিন্তু নভেম্বর শেষ হয়ে ডিসেম্বর মাসের কাছাকাছি চলে এসেছে, কোনো অর্ডার নেই। তাছাড়া নির্বাচন এলে পোস্টার, হ্যান্ড বিলের চাহিদা থাকে, তাও বন্ধ। বিয়ের অনুষ্ঠানও হচ্ছে না। কোচিং সেন্টারগুলোর অবস্থাও ভালো না। মোটামুটি ভাবে করোনার কারণে সবই ভেস্তে গেছে। বর্তমানে ব্যবসা চালাত হিমশিম খেতে হচ্ছে।