বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:
সাংবাদিকতা একটি মহৎ ও সম্মানজনক পেশা। তবে এর সঙ্গে আর অন্য দশটি পেশার পার্থক্য অনেক। বলা যায়, আগের তুলনায় সাংবাদিকদের এখন অনেক বেশি স্টোরি তৈরি করতে হয়। বেশি কাজ উৎপাদনের চাপে আপনি ভাবতে পারেন আপনার আসল কাজ হচ্ছে সব কিছু প্রক্রিয়াজাত করা। নতুন কোন গল্পের কথা ভাবা বা অনুসন্ধান করা নয়। তাছাড়া, আজকাল ইন্টারনেটে যে ভাবে তথ্য এবং অপ-তথ্যের বন্যা বয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে সঠিক তথ্য খুঁজে পেতে ডুবে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
একজন ভালো ও পেশাদার সাংবাদিক হওয়ার জন্য কি কি প্রয়োজন?
আজকের প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানিত সাংবাদিকদের অনেকেই বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা করে আসছেন। ভালো সাংবাদিক হওয়ার জন্য সাংবাদিকতাই পড়তে হবে এমনটা জরুরি নয়। তবে বিষয়টি পড়া থাকলে একজনকে ভালো সাংবাদিক হতে তা অবশ্যই সাহায্য করে। সাংবাদিকদের ‘সব কাজের কাজী’ হতে হয়। অর্থাৎ অনেক বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান থাকা একজন সাংবাদিকের জন্য জরুরি। সেটা খেলা, অর্থনীতি ও বাণিজ্য, আইন-আদালত, সংবিধান, জ্বালানি ইত্যাদি।
সাংবাদিকতার ক্ষেত্রসমূহ
প্রিন্ট মিডিয়া (পত্রিকা, ম্যাগাজিন, সাময়িকী ইত্যাদি) : সম্পাদকীয় বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ, বার্তা বিভাগ, রিপোর্টিং বিভাগ, প্রুফ এডিটিং বিভাগ, ফটোগ্রাফি বিভাগ, অলংকরণ বিভাগ, বিজ্ঞাপন বিভাগ, প্রচার বিভাগ, রেফারেন্স লাইব্রেরি, প্রিন্টিং/ছাপা বিভাগ।
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া (রেডিও, টেলিভিশন)
নিউজ বিভাগ-রিপোর্টিং, নিউজ এডিটর, জয়েন্ট নিউজ এডিটর, ডেস্ক রিপোর্টার, নিউজ প্রডিউসার, নিউজ প্রেজেন্টার, অনলাইন এডিটর, প্রোগ্রাম প্রডিউসার, ভিডিও এডিটর, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, এনিমেটর, সেট ডিজাইনার, চিত্রগ্রাহক, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ব্রডকাস্টিং এক্সিকিউটিভসহ নানা ধরনের কর্মসংস্থান। ইলেক্ট্রনক মিডিয়ায় সাধারণত নিয়ম হলো যে কোনো বিভাগে আপনি কাজ করতে প্রথমেই জানতে হবে বেসিক জার্নালিজম।
অনলাইন মিডিয়া: বাংলাদেশে পূর্বে প্রিন্ট মিডিয়া (সংবাদপত্র) ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কাজের সুযোগ থাকলেও বর্তমানে ইন্টারনেটের কল্যাণে আরেকটি ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেটি হলো- অনলাইন মিডিয়া।
সম্পাদকীয় বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ, বার্তা বিভাগ, রিপোর্টিং বিভাগ, প্রুফ এডিটিং বিভাগ, ফটোগ্রাফি বিভাগ, অলংকরণ বিভাগ, বিজ্ঞাপন বিভাগ, রেফারেন্স লাইব্রেরি। এছাড়াও এর চেয়ে কমবেশি বিভাগ থাকতে পারে। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করবে ঐ প্রতিষ্ঠানের উপর।
সাংবাদিক হলে যেসব গুণ থাকা দরকার – ১. সিদ্ধান্ত ২. সততা ৩. ব্যক্তিত্ব ৪. ব্যবহার ৫. সাহসিকতা ৬. বস্তুনিষ্ঠতা ৭. অধ্যবসায় ৮.নিয়মানুবর্তিতা ও যোগাযোগ ৯. দায়বদ্ধতা ১০. বিচক্ষণতা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একথা স্বীকার করতেই হবে, এ পেশায় আজও সিংহভাগ জনশক্তিই আনাড়ি। তারা অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী ও প্রশিক্ষণহীন। সাংবাদিকতায় পড়ালেখা করে এ পেশায় এসেছেন এমন লোকের সংখ্যা নিতান্ত নগণ্য।
পড়ালেখা করাতো দূরে থাক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এমন লোকই বা কোথায়। অথচ একটি সম্ভাবনাময় ও চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা আজ দেশে-বিদেশে অনেক উঁচু মাপের পেশা।
পৃথিবীতে যতগুলো পেশা আছে সাংবাদিকতা তার মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। সাংবাদিকতায় অধ্যায়ন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ পেশায় প্রবেশ করতে পারলে একটি সম্ভাবনাময় ও উজ্জ্বল ক্যরিয়ার গড়া সম্ভব।
সাংবাদিক হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা
জাতীয় পত্রিকা/অনলাইন/ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কাজ করতে হলে তাকে কমপক্ষে অর্নাস অথবা সমমানের ডিগ্রিধারী হতে হবে। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা মফস্বলের ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য। সাংবাদিকতার উপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর থাকলে ভালো। সাংবাদিকতায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও সাংবাদিকতার উপর যেকোনো কোর্স করলে সহজেই সাংবাদিকতার পেশায় হাতেখড়ি হতে পারে। একটি সফল সর্ট কোর্সের পর পিজিডি ও মাস্টার্স করতে পারলে সাংবাদিক হিসাবে একটি শক্ত ভিতের উপর দাঁড়ানো সম্ভব।
কোথায় করবেন কোর্স
যাদের পক্ষে এখন আর সাংবাদিকতায় স্নাতক করা সম্ভব নয়, তারাও করে নিতে পারেন ৬মাস, একবছর বা ২ বছর মেয়াদী স্নাতকোত্তর বা ডিপ্লোমা অথবা সার্টিফিকেট কোর্স। দেশের সরকারি বে-সরাকারি বহু প্রতিষ্ঠানে এ ধরণের কোর্সকরার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ তথ্য অধিদপ্তর, প্রেস ইনস্টিটিউট বা প্রেস কাউন্সিলসহ প্রথম আলো, নয়দিগন্তসহ অনেক বেসরকারি ইলেক্ট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এখন এ সকল কোর্স চালু করেছে। ঢাবি, রাবি’সহ দেশের কয়েকটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতায় স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর কোর্স রয়েছে। তাছাড়া রয়েছে ১ ও ২ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স। কোর্স করে আপনি বিভিন্ন পত্রিকায় আপনার লেখা পাঠাতে থাকুন ও সেই সঙ্গে আপনার বায়োডাটাও পাঠাতে থাকুন।
ভর্তির যোগ্যতা
স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হতে যে কোন বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ হতে হবে। আর স্নাতকোত্তর বা ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হতে স্নাতক পাশ হতে হবে।
মৌলিক কাজের জন্য প্রয়োজন সময়, মনোযোগ এবং পরিশ্রম। এর পাশাপাশি কৌতূহল এবং জানার আগ্রহ। সাংবাদিকতার মানেই হচ্ছে মানুষকে নতুন কিছু বলা। মৌলিক সাংবাদিকতার জন্য যে নৈপুণ্য দরকার সে বিষয়ে বিভিন্ন লেকচার এবং কর্মশালায় বিবিসির সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে টুডে অনুষ্ঠানের প্রাক্তন সম্পাদক কেভিন মার্শ-এর দেয়া বক্তব্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে এই গাইড।
সকল সাংবাদিক চায় মৌলিক কাজ করতে। এই কারণেই আমরা এই পেশায় যোগ দিয়েছি।মৌলিক সাংবাদিকতা এই দুটো শব্দ এক সাথে বললে মনে হয় একই কথা দু’বার বলা হচ্ছে। সেটা মনে হবারই কথা। সাংবাদিকতার মানেই হচ্ছে মানুষকে নতুন কিছু বলা, এমন কিছু বলা যেটা তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে, তাদের ধরে রাখবে। সকল সাংবাদিক এমনকি যাদের নিয়ে আমরা গর্ব করি, তারা দুশ্চিন্তায় থাকে তাদের কাজ কতটুকু মৌলিক বা অরিজিনাল হচ্ছে, তা নিয়ে। কোথা থেকে পরবর্তী অরিজিনাল স্টোরি আসবে, তা নিয়ে। মৌলিক সাংবাদিকতার জন্য বিশেষ নৈপুণ্য দরকার। সেই নৈপুণ্য আপনি শিখতে পারেন, কিন্তু এই পেশায় অনেকে মনে করছেন এই বিশেষ নৈপুণ্য কাজে লাগানোর সুযোগ ক্রমশ: কমছে।
মনোভাব এবং অভ্যাস: মৌলিক কাজের জন্য প্রয়োজন সময়, মনোযোগ এবং পরিশ্রম। এখানে দায়সারা গোছের কিছু করলে চলবে না – এখানে কঠোর পরিশ্রম দরকার, শুধু কয়েকদিনের জন্য নয়, অনবরত। এখানে মনোভাবের প্রয়োজন হতে পারে এবং অভ্যাসের প্রয়োজন নির্ঘাত হবে।
সম্মানী কেমন
এখানে প্রথমদিকে হয়তো আয়ের পরিমাণটা কম। তবে অভিজ্ঞতা অর্জনের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আয় রোজগার। দেশে আপনার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সম্মানী ১০-৫০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। তবে ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে এ অঙ্ক বাড়তে পারে। আর যদি সাংবাদিকতার মাধ্যমে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার সাংবাদিক হওয়া যায় তাহলে সম্মানী এর দ্বিগুণও হতে পারে।
তবে, করোনাভাইরাসের মহামারি সংবাদমাধ্যম শিল্পের জন্য আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। পত্রিকাগুলোর বিজ্ঞাপন শূন্যের কোঠায় নেমেছে, পত্রিকার গ্রাহক ব্যাপকভাবে কমেছে। ফলে প্রচুর আর্থিক লোকসান গুণতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি পত্রিকা মুদ্রণ সংস্করণ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। আয় কমে যাওয়ার একটা ফল সংবাদ প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া। ছাপা সংস্করণ বন্ধ করে শুধু অনলাইন সংস্করণ চালু রাখার মাধ্যমে টিকে থাকার চেষ্টা। টিকে থাকা মুদ্রিত সংবাদপত্রগুলোর মুদ্রণসংখ্যা ও পৃষ্ঠাসংখ্যা ভীষণভাবে কমে যাওয়া এবং সর্বোপরি সংবাদকর্মীদের চাকরি হারানো এবং বেতন কমে যাওয়া।