বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক একেএম মহিউদ্দিন আজাদকে প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বুধবার (০২ ডিসেম্বর) থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হিসেবে সবকিছু দেখভালের দায়িত্বে থাকবেন তিনি। এরআগে মঙ্গলবার গভর্নর ফজলে কবির প্রশাসক নিয়োগের আদেশে সই করেন।
গত বছরের জুলাইয়ে আমানতকারীদের অর্থ ফেরতে ব্যর্থতার দায়ে পিপলস লিজিং অবসায়নের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আজ অবধি অবসায়ন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় আমানতকারীরা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। এ ছাড়া আরও অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। অবসায়ন প্রক্রিয়ার বিষয়টি জানাজানির পর পরিস্থিতি ব্যাপক খারাপ হলে গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংক সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল সব আমানতকারী অর্থ ফেরত পাবেন।
জানা গেছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রিমিয়ার লিজিংয়ে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে ২০০৬ সালে তৎকালীন ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে ব্যাংকটির মালিকানা বদল করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে রূপান্তর করা হয়। যদিও প্রতিষ্ঠানটি এখনও ধুঁকছে।
প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হামিদ মিয়া এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টেলিফোনে তাকেও এ রকম একটি বিষয় জানানো হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নির্দেশনা তিনি পাননি। তিনি জানান, যতদূর শুনেছি কানাডা প্রবাসী ফারুক হোসেন নামে একজন আমানতকারী দুই কোটি টাকার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন। সুদসহ গত ৮ মার্চ তার অর্থ ফেরত দেওয়া হয়েছে। এর পরও উচ্চ আদালতের একটি আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। প্রিমিয়ার লিজিংয়ে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে না পারার খবর দুঃখজনক। মূলত এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে সুশাসনের ঘাটতির কারণে এমনটি হচ্ছে। খারাপ অবস্থায় পড়ার পর প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ সুদে আমানত নিয়ে ঠিকমতো বিনিয়োগ করতে পারছে না। এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি জোরদার করতে হবে।
২০১৯ সালের নিরীক্ষিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পদের পরিমাণ কমে গত বছর শেষে এক হাজার ৬৯৮ কোটি টাকায় নেমেছে। ২০১৭ সালে যা এক হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা ছিল। প্রতিষ্ঠানটির আমানত তিন বছর আগের ৯৬৭ কোটি টাকা থেকে কমে ৮১৪ কোটি টাকায় নেমেছে। এই আমানতের ৯০ শতাংশই প্রাতিষ্ঠানিক। যার বেশিরভাগই ফেরত দিতে পারছে না প্রিমিয়ার লিজিং। আর ঋণের পরিমাণ চার বছর আগের এক হাজার ৪১৬ কোটি টাকা থেকে কমে এক হাজার ২৫১ কোটি টাকায় নেমেছে।