চাঁদে পতাকা পুঁতে আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল আগেই। নাসার আগেই চাঁদে মহাকাশযান নামিয়ে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছে চিন। এবার তারা ফের ঘোষণা করল, ২ কিলোগ্রাম (৪.৪ পাউন্ড) চাঁদের মাটি খামচে নিয়ে পৃথিবীতে ফিরছে চন্দ্রযান চ্যাং’ই৫।
চাঁদের মাটিতে নেমে এতদিন নুড়ি-পাথর কুড়োচ্ছিল চ্যাং’ই ৫ এর ল্যান্ডার ও অ্যাসেন্ডার। প্রায় ২ কিলোগ্রাম মাটি পেটে পুরে গতকাল, রবিবার ফের অরবিটারের সঙ্গে মিলে যায়। চাঁদের চারপাশে চক্কর কেটে ২২ মিনিটে চারটি ইঞ্জিন চালু করে। এবার চন্দ্রযানের চারটি অংশ একসঙ্গে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর পথ ধরেছে।
উত্তর চিনে নামবে এই চন্দ্রযান। সময় লাগতে পারে তিন দিন। তার জন্য প্রস্তুতিও চলছে। মঙ্গোলিয়ায় আপাতত জমা থাকবে চাঁদ থেকে কুড়িয়ে আনা নুড়ি-পাথর। আমেরিকা ও রাশিয়ার পরে মঙ্গোলিয়াই প্রথম যারা চাঁদের মাটি বা লুনার স্যাম্পেল নিয়ে গবেষণা শুরু করবে।
১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই ইতিহাস তৈরি করেছিল আমেরিকার ‘অ্যাপোলো ১১’ মিশন। প্রথম চাঁদের মাটিতে পা দিয়েছিলেন দুই নভশ্চর নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন। চন্দ্রাভিযানে মানুষ নিয়ে গিয়ে ইতিহাস তৈরি করেছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সেই দিনটাকে অমর করে রাখতে চাঁদের মাটিতে পতাকা পুঁতে দিয়ে এসেছিলেন মহাকাশচারীরা। এর ৫০ বছর পরে ফের ইতিহাস করল চিনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
চাঁদে আগেও মহাকাশযান পাঠিয়েছে চিন, চ্যাং’ই ৩ এবং চ্যাং ‘ই ৪। সে দুটোতে ছিল স্ট্যাটিক ল্যান্ডার যা চাঁদের মাটিতে সফট ল্যান্ডিং করবে, অর্থাৎ গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করে হালকা পালকের মতো নেমে আসবে। আর রোভার যা চাঁদের পিঠে ঘুরে বেড়িয়ে নমুনা জোগাড় করবে। তবে এই দুই মহাকাশযানকে টেক্কা দিয়ে দিয়েছে চ্যাং’ই ৫। সফট ল্যান্ডিং করেছে কোনও ভুলত্রুটি ছাড়াই। ঠিক যেভাবে প্রোগ্রামিং করা হয়েছিল সেভাবেই কাজ করেছে। নুড়ি-পাথর খামচে রোভারে ভরে আবার ফিরে আসছে পৃথিবীতে। তার মাঝে পতাকা পোঁতা, নমুনা সংগ্রহের ছবি তুলে পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশনে পাঠানো, সব কাজই করেছে।
চ্যাং’ই ৫ নিয়ে চর্চা চলছে কারণ এই মহাকাশযানের গঠন খুবই জটিল। সাধারণ ল্যান্ডার বা রোভার ভরে দিয়ে চাঁদে পাঠায়নি চিন। এই মহাকাশযানের চারটি অংশ। দুটি ভাগে রয়েছে দুটি করে। ৮.২ টন ওজনের স্পেসক্রাফ্ট চিনের ওয়েংচাং স্পেসক্রাফ্ট লঞ্চিং সাইট থেকে উড়ে যায় ২৩ নভেম্বর। পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যেই পৌঁছে যায় চাঁদের পাড়ায়।
এই মহাকাশযান মাল্টি-মডিউল প্রোব, চাঁদের কাছাকাছি পৌঁছে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি ভাগ চাঁদের কক্ষপথে পাক খেতে খেতে নজর রাখে। দ্বিতীয় ভাগ চাঁদের মাটিতে অবতরণ করে। যে ভাগটি নজরদারির জন্য রাখা হয়েছিল তার মধ্যে ছিল সার্ভিস ভেহিকল ও অ্যাটমস্ফেরিক রি-এন্ট্রি মডুউল। এদের কাজ ছিল তদারকি করা আর প্রতি মুহূর্তের খবর পৃথিবীতে পাঠানো। চাঁদের মাটিতে নামে ল্যান্ডার এবং অ্যাসেন্ডার। ঠিক কোন জায়গা থেকে মাটি খামচে নিলে টাটকা নুড়ি-পাথর পাওয়া যাবে তা ঠিক করে ল্যান্ডারই। এর রোবোটিক আর্ম নমুনা তুলে পেটে ভরে নেয়। চিন জানিয়েছে, আমেরিকা তার অ্যাপোলো মিশনে ৪০০ কিলোগ্রাম নমুনা এনেছিল চাঁদ থেকে। সেগুলোর বয়স ১০০ কোটি বছরেরও বেশি। কিন্তু এবার একদম টাটকা মাটি তুলে নিয়ে আসছে তারা।
-বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক