বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
স্পুটনিক ভি টিকা টানা দু’বছর করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেবে, এমনটাই দাবি করল রাশিয়ার গ্যামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট। তাদের বক্তব্য, এই টিকা নিলে ভাইরাসজনিত কোনও জটিল রোগের শঙ্কাও থাকবে না। মানুষের শরীরে ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ শক্তি টিকে থাকবে দু’বছর।
করোনার টিকা নিলেও শরীরে ঠিক কতদিন রোগ প্রতিরোধ শক্তি টিকে থাকবে সেটাই বড় এখন বড় প্রশ্ন। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছিলেন, টিকা সাময়িকভাবে জটিল রোগ থেকে রেহাই দেবে। কিন্তু চিরস্থায়ী ইমিউনিটি তৈরি করতে পারবে না। ফাইজার ইতিমধ্যেই দাবি করেছে তাদের তৈরি টিকা কম করেও ৬ মাস ইমিউনিটি ধরে রাখবে। সেখানে রাশিয়ার দাবি তাদের তৈরি স্পুটনিক ভি আরও বেশিদিন কার্যকরী হবে।
রাশিয়ায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করছে গ্যামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব এপিডেমোলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি। সংস্থার ডিরেক্টর অলেক্সান্ডার গিন্টসবার্গ বলেছেন, ইবোলার টিকা যেভাবে তৈরি হয়েছিল, স্পুটনিক ভি-ও অনেকটা সেভাবেই তৈরি। তবে করোনার টিকা আরও বেশি শক্তিশালী। গিন্টসবার্গের কথায়, সরাসরি করোনার স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার না করে অন্য ভাইরাসের সঙ্গে আরএনএ প্রোটিন মিলিয়ে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করা হয়েছে। সর্দি-কাশির জন্য দায়ী যে অ্যাডেনোভাইরাস, তাকেই ভেক্টর হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই অ্যাডেনোভাইরাস মামুলি সর্দি-জ্বর ছড়ায়, প্রাণঘাতী সংক্রমণ ছড়াতে পারে না। অ্যাডেনোভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে তার মধ্যে করোনার স্পাইক (S) প্রোটিন মিশিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। ভাইরোলজিস্টরা জানিয়েছেন, করোনার যে আরএনএ প্রোটিন স্ক্রিনিং করা হয়েছে তাকে আগে নিষ্ক্রিয় করে নেওয়া হয়েছে বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে, যাতে এই ভাইরাল স্ট্রেন শরীরে ঢুকলে প্রতিলিপি তৈরি করে সংখ্যায় না বাড়তে পারে।
মোডার্না টিকা ৯৫ শতাংশ কার্যকরী হয়েছে ঘোষণার পরেই, টিকার চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়াল রিপোর্ট সামনে আনে রাশিয়া। সেই রিপোর্টে বলা হয়, স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে টিকা ৯৫ শতাংশের বেশি কার্যকরী হয়েছে। গ্যামেলিয়া জানায়, তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল শুরুর ২১ দিন পরে প্রথম রিপোর্ট সামনে আনা হয়েছিল। সেটা ছিল টিকার প্রথম ডোজের ক্লিনিকাল রিপোর্ট। দেখা গিয়েছিল স্পুটনিক ভি টিকার একটা ডোজে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে শরীরে। টিকা ৯১.৪ শতাংশ কার্যকরী হয়েছে। ২১ দিনের পরে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয় স্বেচ্ছাসেবকদের। আরও ২১ দিন পরে অর্থাৎ প্রথম ডোজ দেওয়ার পর থেকে মোট ৪২ দিন পরে দেখা যায় টিকা আরও বেশি ভাল কাজ করছে। ইমিউন পাওয়ার আরও বেড়েছে। রক্তে অ্যান্টিবডির পরিমাণও বেশি। সব মিলিয়ে দেখা গেছে টিকা ৯৫ শতাংশেরও বেশি কার্যকরী হয়েছে।
রাশিয়ার ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে ভারতে স্পুটনিক ভি টিকার ট্রায়াল শুরু করেছে ডক্টর রেড্ডিস ল্যাবরেটরি। টিকার তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল চলছে ভারতে। ১০ কোটি টিকার ডোজ তৈরির জন্য ডক্টর রেড্ডিসের সঙ্গে চুক্তি করেছে রাশিয়ার ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড।