Home কৃষি পাহাড়ে মাল্টা চাষে বিপ্লব

পাহাড়ে মাল্টা চাষে বিপ্লব

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতা ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে পার্বত্য চট্রগ্রামে মাল্টা উৎপাদন বেড়েই চলেছে। চলতি বছর খাগড়াছড়িতে মাল্টা চাষ আগের তুলনায় বেড়েছে। এ বছর খাগড়াছড়িতে ৪২৩ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে ৩ হাজার ১১৪ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন হয়েছে। গত বছর ৩৪৮ হেক্টর জামিতে মাল্টা উৎপাদন হয়েছিল ১ হাজার ৮০৯ মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টর জমিতে যার উৎপাদন ছিল ৫ দশমিক ২ মেট্রিক টন যা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে হেক্টর প্রতি প্রায় সাড়ে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে ৫০ হেক্টর জমিতে ২৮০ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া পানছড়িতে ৪৫ হেক্টর জমিতে ১২৯ মেট্রিক টন, দীঘিনালায় ৫৮ হেক্টর জমিতে ৩০০ মেট্রিক টন, মহালছড়িতে ৭৫ হেক্টর জমিতে ৬৭ মেট্রিক টন, মাটিরাঙ্গায় ১০৫ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ১০২ মেট্রিক টন, রামগড়ে ২০ হেক্টর জমিতে ৪০ মেট্রিক টন, মানিকছড়িতে ৫০ হেক্টর জমিতে ৫৬০ মেট্রিক টন এবং দুর্গম লক্ষ্মীছড়িতে ২০ হেক্টর জমিতে আট মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন হয়েছে। প্রতি এক একর জমিতে প্রায় ২০০ মাল্টা গাছ হয়। চার থেকে পাঁচ বছর বয়সী একটি মাল্টা গাছে প্রায় এক মণ মাল্টা ফলন দেয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছের ফলনও বাড়ে। বাজারে প্রতিকেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। ছয় থেকে সাতটি মাল্টাতে এককেজি হয়। খাগড়াছড়ির চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকরা মাল্টা সরবরাহ করছে বলেও জানা যায়।

পাহাড়ি অঞ্চলে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত বারি-১ জাতের মাল্টার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। ভালো উৎপাদন ও সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাহাড়ি মাল্টা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। ২০০৪ সালের দিকে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে কৃষি বিজ্ঞানীরা বারি মাল্টা-১ উদ্ভাবন করেছিলেন। পাহাড়ের উর্বর মাটি যেন ফল চাষের জন্য অনন্য এক উদাহরণ। অনুকূল জলবায়ু ও আবহাওয়ার কারণে খাগড়াছড়ির পাহাড়ে সবুজ সুস্বাদু ফল মাল্টায় ছেয়ে গেছে। এককভাবে মাল্টা চাষ করে লাভের মুখ দেখায় দিন দিন বাড়ছে মাল্টা চাষির সংখ্যা। বর্তমানে পাহাড়ে মাল্টা চাষির সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন।

খাগড়াছড়ির জালিয়া পাড়ার মাল্টা চাষি সাহাজ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, আমি চার একর জমিতে মাল্টা চাষ করেছি। ৯০০ গাছের মধ্যে ৫০০ গাছে ফলন পেয়েছি। এতে সাড়ে পাঁচ টন মাল্টা উৎপাদন হয়েছে। একটি আম গাছের চারপাশে ২০ ফিট করে জমি খালি রাখতে হয়। যাতে গাছটি দ্রুত বাড়ে। আর মাল্টা গাছের জন্য আট ফিট জমি যথেষ্ট। তবে মাল্টা চাষে কষ্ট কম। জৈব সার আর নিয়মিত গাছে পানি দিতে পারলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। অপর মাল্টা চাষি বাবু মারমা বলেন, রোগ বালাই ও ঝরে পড়া কম এবং উৎপাদান ভালো হওয়ায় মাল্টা চাষ করে ভালো লাভ করা যায়। আর সুস্বাদু এ মাল্টার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমরা সরবরাহ করি। অল্প পুঁজিতে মাল্টা থেকে ভালো লাভবান হওয়া যায়। প্রতি একর জমিতে মাল্টা চাষ করে এক লাখ টাকার বেশি লাভ থাকে।

খাগড়াছড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মর্তুজ আলী গণমাধ্যমকে বলেন, শুরুতে কৃষি বিভাগের সাইট্রাস প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২০০ জন চাষিকে ১০০ করে চারাসহ বিভিন্ন উপকরণ দেয়া হয়। এখানকার মাটি ও জলবায়ু মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় দিন দিন কৃষকের সংখ্যাও বাড়ছে। আশা করছি সামনে এ কৃষকরা মাল্টা চাষে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হবে।

গত অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে মাল্টা হার্বেস্টের উপযুক্ত সময় হলেও পাহাড়ে দুই সপ্তাহ আগেই মাল্টা ফল উত্তোলন শুরু হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, মাল্টা পরিপক্ক হওয়ার আগেই অনেক কৃষক বাজারজাত করছে। এতে মাল্টা পরিপূর্ণ স্বাদ এবং দাম পাওয়া যায় না। খাগড়াছড়িতে বাণিজ্যিক চাষাবাদ ছাড়াও ঘরের আঙিনাতেও মাল্টা চাষ করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত সৃজন হচ্ছে নতুন নতুন মাল্টা বাগান। স্থানীয়ভাবে শুধু নয় বাইরে থেকেও অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠছে।