শামসুল ইসলাম
করোনার বছরে ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় আড়াই লাখ টিইইউস (টুয়েন্টি ফিট ইক্যুইভেলেন্ট ইউনিটস) কন্টেইনার কম হ্যান্ডলিং হয়েছে। ফলে এক বছর আগে উঠে আসা থ্রি মিলিয়নিয়ার ক্লাব থেকে ছিটকে পড়েছে বন্দর। তবে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমে গেলেও বিশ্বের শীর্ষ কন্টেইনার পোর্টের তালিকায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই বন্দর কর্মকর্তাদের।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে রপ্তানি ও আমদানি মিলে মোট ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ নেমে আসে ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮৭ টিইইউসে।
বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আমদানি-রপ্তানি মিলে মোট ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৭৯ টিইইউস কন্টেইনার ওঠানামা হয়। বাকি ১১ মাস একই হার বজায় থাকলে বছর শেষে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ দাঁড়াত ৩৪ লাখ টিইইউস। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই ধারাবাহিকতা আর রক্ষা হয়নি।
সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা গেছে এপ্রিলে। ওই মাসে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে মাত্র এক লাখ ৩২ হাজার ৯২১ টিইইউস। এর মধ্যে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার ছিল ৭৩ হাজার ৯১৬ টিইইউস আর রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার শিপমেন্ট হয়েছে ৫৯ হাজার ৬০৪ টিইইউস।
এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ২ লাখ ৪১ হাজার ৯৪০ টিইইউস, মার্চে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৯ টিইইউস, মে মাসে ২ লাখ ৪ হাজার ৮০১ টিইইউস, জুনে ২ লাখ ১৯ হাজার ১৫০ টিইইউস, জুলাইয়ে ২ লাখ ৩১ হাজার ৬৬৩ টিইইউস, আগস্টে ২ লাখ ৪১ হাজার ৮৬৭ টিইইউস, সেপ্টেম্বরে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬২ টিইইউস, অক্টোবরে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৭ টিইইউস, নভেম্বরে ২ লাখ ৫৮ হাজার ২২ টিইইউস ও ডিসেম্বরে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৬৬ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে গত ২৬ মার্চ দেশে সাধারণ ছুটি শুরু হলেও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের স্বার্থে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা হয় চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম। এ সময় বন্দরের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এর মধ্যে বন্দর চেয়ারম্যানের পিএসহ বেশ কয়েকজন মারা যান। বিশ্বজুড়ে মহামারী করোনার প্রভাবে আমদানি-রপ্তানি কমলে এর প্রভাব পড়ে চট্টগ্রাম বন্দরেও। ফলে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংও কমে যায়। এ কারণে ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ৩০ লাখ ৮৮ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে থ্রি মিলিয়নিয়ার ক্লাবে উন্নীত হলেও বছর না যেতেই তা থেকে ছিটকে পড়ে।
লন্ডনভিত্তিক শিপিং বিষয়ক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম লয়েডস লিস্টের প্রকাশিত জরিপে ২০১৯ সালের হিসাবে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে লয়েডস লিস্টের তালিকায় ছয় ধাপ এগিয়েছিল। বিশ্বের শীর্ষ ১০০ কন্টেইনার পোর্টের তালিকায় উঠে আসে ৫৮তম স্থানে। আগের বছর ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে ওই তালিকায় এ বন্দরের স্থান ছিল ৬৪তম। কিন্তু করোনার কারণে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমে গেলেও শীর্ষ বন্দরের তালিকায় পিছিয়ে পড়বে না বলে মনে করছেন বন্দর কর্মকর্তারা। তাদের মতে, করোনার থাবা চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর যেভাবে পড়েছে বিশে^র অন্য বন্দরগুলোর ওপরও একইভাবে পড়েছে। তাই র্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সব জায়গায় একই ধরনের প্রভাব পড়বে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর চট্টগ্রাম বন্দরের কার্গো, হ্যান্ডলিং, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং, শিপ হ্যান্ডলিং ইত্যাদির প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে। করোনা পরিস্থিতি সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে ধাক্কা দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বিশ্বের সেরা বন্দরগুলোর ওপরও। চট্টগ্রাম বন্দরও এর বাইরে নয়। তাই বিদায়ী বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং আগের বছরের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। এখন পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
তিনি বলেন, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমে যাওয়ার কারণে শীর্ষ বন্দরের তালিকায় পিছিয়ে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ করোনা মহামারীর কারণে সব বন্দরের একই অবস্থা। বরং আগের বছরের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দর আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে বলেই আমাদের ধারণা।
-দেশ রূপান্তর