Home তথ্য প্রযুক্তি মোবাইল থেকেই ছড়াচ্ছে ‘নোমোফোবিয়া!’

মোবাইল থেকেই ছড়াচ্ছে ‘নোমোফোবিয়া!’

 

মোবাইল ফোন ছাড়া কয়েক মিনিট কাটানো এখন আমাদের কাছে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে অধিকাংশ মানুষ বাথরুমে যাওয়ার সময়েও সঙ্গে মোবাইল নিয়ে যান। মোবাইল ফোনের এই অতিরিক্ত ব্যবহার যে কতটা ক্ষতি করছে, তা আমাদের ধারণার বাইরে। সম্প্রতি হাফিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার, ব্যবহারকারীদের শরীর ও মনের ওপর সাঙ্ঘাতিক প্রভাব ফেলছে। কী ধরনের ক্ষতি করছে মোবাইল ফোন, আসুন জেনে নেওয়া যাক।

কানে কম শুনছেন অনেকে

রাস্তা ঘাটে সবার কানে এখন হেডফোন দেখা যায়। মানুষ সম্ভবত রাস্তায় গান শোনেন ও ফোনে কথা বলেন বেশি। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা যেমন বেড়েছে,তেমন বেড়েছে কানের সমস্যাও। হেডফোনের সাউন্ড লাউড করে দিয়ে গান শুনলে, অন্তঃকর্ণের কোষগুলোর ওপর প্রভাব পড়ে। অডিটরি নার্ভের সাহায্যে সেই সংবেদন মস্তিষ্কে যায় এবং মস্তিষ্ক অস্বাভাবিক আচরণ করে। এমনকী বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

শরীরের অস্থিসন্ধিগুলোর ক্ষতি হচ্ছে

অনেকেই একটু বেশি ঝুঁকে বসে দীর্ঘ সময় ধরে মেসেজ পাঠান। বসার ভঙ্গির কারণে মেরুদণ্ডে নানা অসুবিধা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘক্ষণ ধরে মোবাইল কি-প্যাডে  টাইপ করলে আঙুলের গাঁটে ব্যথা হতে পারে। এমন কি আর্থ্রাইটিসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও অনেকে কাঁধ ও কানের মাঝে ফোন রেখে কথা বলেন। এতে ঘাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, অতিরিক্ত সময় ধরে মোবাইলে মেসেজ লিখবেন না। অস্থি সন্ধির সমস্যা থেকে দূরে থাকবেন।

 শুক্রাণু উৎপাদন কমে যাচ্ছে

গবেষকেরা জানান, মোবাইল ফোন থেকে উচ্চ কম্পাঙ্কের তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ নির্গত হয়। দীর্ঘদিন ও দীর্ঘক্ষণ ধরে এই ক্ষতিকর তরঙ্গ শরীরে প্রবেশ করলে মস্তিষ্কে ক্যানসার হতে পারে। এ ছাড়াও শরীরের অন্যান্য কলা কোষের ক্ষতি করে এই  তরঙ্গ। গবেষকদের মতে, মোবাইল ফোন থেকে নির্গত এই ক্ষতিকর তরঙ্গ পুরুষের প্রজননতন্ত্রে প্রভাব ফেলে। শুক্রাশয়ের ভেতর উৎপাদন কমিয়ে দেয়। ফলে শুক্রাণুর ঘনত্ব কমে যায়। পুরুষদের মধ্যে বন্ধ্যাত্বও দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়।

কমতে পারে দৃষ্টিশক্তি

ইউরোপের চক্ষু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে দৃষ্টিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। ব্যবহারকারীরা সাধারণত চোখ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দূরে রাখেন মোবাইলকে। অনেকে এর চেয়েও কাছে রাখেন, এর থেকে মায়োপিয়া বা ক্ষীণ দৃষ্টির সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্মার্টফোনটিকে অতিরিক্ত সময় ধরে চোখের খুব কাছে রেখে ব্যবহার করলে জিনগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। ব্যবহারকারীর পরবর্তী প্রজন্মও চোখের সমস্যায় ভুগতে পারে।

রাতে ঘুম আসে না

ঘুমোবার আগে যাঁরা স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার করেন তাঁরা ইনসমনিয়া বা নিদ্রাহীনতার সমস্যায় ভোগেন। স্মার্টফোন থেকে নির্গত উজ্জ্বল নীল আলোর জন্য মেলাটোনিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। কারণ মস্তিষ্কে মেলাটোনিন নিঃসরণের যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া আছে তা ব্যাহত হয়। ফলে এক পর্যায়ে ঘুমের মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়।

ঘুম ভাঙলেই মেসেজ দেখা

অনেকের মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে মোবাইল হাতড়ে খুঁজে নিয়ে মেসেজ চেক করেন বা মেসেজ পাঠান। এর জন্য ঘুম বিঘ্নিত হয়। দিনের পর দিন ‘স্লিপ টেক্সটিং’ সমস্যার জন্য শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দেখা যায়। এছাড়াও ঘুমের ঘোরে অনেক অনভিপ্রেত নম্বরে মেসেজ চলে গিয়ে বিপত্তি বাড়ায়। মনোবিজ্ঞানীরা রাতে বিছানার পাশে মোবাইল ফোন না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

মোবাইলে থাকা জীবাণু ক্ষতি করছে স্বাস্থ্যের

আমেরিকার গবেষকরা বলছেন, কমোডের সিটের তুলনায় ১০ গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে মোবাইলে। নিয়মিত পরিষ্কার না করার জন্য মোবাইল জীবাণুদের পিকনিক স্পট হয়ে ওঠে। এক জনের মোবাইল ফোনে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলি তাঁর জন্য খুব বেশি ক্ষতিকারক না হলেও  সেটা থেকে অন্যের দেহে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে। নিয়মিত মোবাইল পরিষ্কার রাখলে  অবশ্য জীবাণুজনিত সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।

মোবাইল হারানোর আতঙ্ক

মোবাইল ব্যবহারকারী সবসময় আতঙ্কে থাকেন, এই বুঝি মোবাইল হারিয়ে গেল। এর থেকে দেখা দেয় এক ধরনের মানসিক রোগ। ৫ বছর আগেও যে রোগের অস্তিত্ব কল্পিত ছিল না। গবেষকরা এই রোগের নাম দিয়েছেন  নোমোফোবিয়া ’(নো মোবাইলফোন ফোবিয়া)। ব্রিটেনের ৫৩ শতাংশ এবং ভারতের ২৯ শতাংশ যুবক যুবতীরা এই রোগের শিকার। এর থেকে বাঁচতে অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ঘাঁটা কমাতে বলছেন গবেষকরা।