ভোররাতে ঘুমিয়ে ছিলেন সকলে। কেউ আন্দাজও করেননি, কিছু ক্ষণ পরেই অপেক্ষা করে আছে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়। রবিবার ভোরে ভয়াবহ আগুনে ঝলসে গেল দিল্লির রানি ঝাঁসি রোডের আনাজ মান্ডির একটি ব্যাগ তৈরির কারখানা। প্রাণ হারালেন ৪৩ জন, আহত অন্তত ১৫ জন। মৃত শ্রমিকেরা কারখানাতেই ঘুমোতেন রাতে। ফলে বাঁচার চেষ্টা করার সুযোগও পাননি তাঁরা।
তবে এই সংখ্যাটা হয়তো আরও বাড়তে পারত, দমকলকর্মী রাজেশ শুক্লা না থাকলে। আগুনের খবর পেয়েই ৩০টিরও বেশি দমকলের ইঞ্জিন এসে পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। কিন্তু আগুন এতই বাড়ছিল, যে তা যথেষ্ট ছিল না। ফলে আরও বেশি দমকল আসার জন্য খবর পাঠানো হয়।
কিন্তু এক মুহূর্ত দেরি করতে মন মানেনি দমকলকর্মী রাজেশ শুক্লার। কারখানার ভিতর থেকে তখন ভেসে আসছে জ্বলন্ত মানুষের আর্ত চিৎকার। তখনই দমকলকর্মীদের মধ্যে তিনিই প্রথম ঢুকে পড়েন জ্বলন্ত কারখানায়। লেলিহান আগুন থেকে ১১ জনকে উদ্ধার করেন তিনি। নিজেও আহত হন চরম সাহসি এই কাজ করতে গিয়ে। রাজেশ সাহস করে ঢুকে তাঁদের বার করে না আনলে হয়তো তাঁদের পক্ষে বেরিয়ে আসা সম্ভবই হতো না।
তাই রাজেশই রবিবারের রিয়্যাল লাইফ হিরো হয়ে উঠেছেন সকলের কাছে। এই হিরোকে কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা দেশ। বাকি আহতদের সঙ্গেই আপাতত লোকনায়ক হাসপাতালে ভর্তি আছেন রাজেশ। তাঁর সঙ্গে গিয়ে দেখা করেন দিল্লির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন। রাজেশকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে তিনি টুইটও করেন। লেখেন, “দমকলকর্মী রাজেশ শুক্লাই আসল নায়ক। এমন দায়িত্ববান এবং সাহসি নায়ককে কুর্নিশ।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার পরে তুলকালাম পড়ে গিয়েছিল কারখানায়। শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়ায়। ছাদ থেকে লাফ দিয়ে প্রাণে বাঁচার চেষ্টা করেন অনেকে। কাউকে আবার জলের পাইপ বেয়ে নামার চেষ্টা করতে দেখা যায়। হাসপাতালে আহতদের ভিড় জমে যায়। স্বজনহারাদের হাহাকারে ভারী হয়ে ওঠে আশপাশ।
দমকল সূত্রের খবর, অগ্নি-নিরাপত্তা ছিলই না কারখানায়। তার ফলেই এত বড় আগুনের মুখোমুখি হতে হল। ইতিমধ্যেই ওই বিল্ডিংয়ের দুই মালিক ইমরান ও রেহানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, কিন্তু তাঁরা আপাতত ফেরার।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল মৃতদের পরিবারকে দশ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন ইথিমধ্যেই। বিহারের যেসব শ্রমিক মৃত, তাঁদের পরিবারকে অর্থ সাহায্য করবে বিহার সরকারও। পাশাপাশি, কী করে এমন দুর্ঘটনা ঘটল, সে বিষয়ে তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে প্রশাসনের তরফে।