তাপস প্রান্ত
চট্টগ্রাম: কমিউনিকেশন ধারার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক মাধ্যম ‘মাইক’। আধুনিক এই যুগে প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশ সাধনের পরও দৈনন্দিন জীবনের এক অপরিহার্য অংশ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। সাধারণত কোনো তথ্য, জরুরী ঘোষণা বা পণ্যের প্রচারণায় ব্যবহৃত হয়ে আসা ‘মাইক’র ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে রয়েছে বাঙ্গালীর ঐতিহাসিক নানান মুহূর্ত।
আবার ‘মাইক’ এর ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে রয়েছে দুইভাই হরিপদ ঘোষ ও দয়াল ঘোষের নাম। ১৯৪৮ সাল, আরজু লাইট হাউস নামে একটি দোকান চালু করেন তারা,যেখানে লাইটের পাশাপাশি গ্রামোফোনও ভাড়া দিতেন।
গ্রামোফোনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভারত থেকে কয়েকটি মাইক নিয়ে আসেন তারা।
১৯৪৮ সালে দেশ ভাগ ও বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর থেকে সভা-সমাবেশ বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বাড়তে থাকে মাইকের।এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে মাইকের চাহিদা বাড়ায় তাইওয়ান, জাপান, চীন থেকে আনা হয় মাইক। তবে মাইকের মূল অংশ মানে ইউনিট বেশি আনা হতো বাইরে থেকে। এরপর নিজের দোকানের কারিগর দিয়ে হরিপদ ঘোষ তৈরি করতেন হর্নসহ বাকি অংশ।
৬২’র শরীফ শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ‘৬৬’র ছয় দফা এবং ৬৯’এর গণঅভ্যুত্থান হয়ে একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ সহ প্রতিটি ধাপে জড়িয়ে আছে মাইকের নাম।এরি ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে বিস্তার ঘটে মাইক সার্ভিসের। নগরীর আইস ফেক্টরী রোড , চকবাজারসহ নানা জায়গায় প্রায় ৩০০টির বেশি মাইক সার্ভিসের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে।
কালের পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন প্রকার মাইক সংযুক্ত হয়ে এই ব্যবসায় সানাই মাইক, বক্স মাইক, হ্যান্ড মাইক , কর্ডলেস মাইক এবং ডাবল বক্স মাইক,কর্ডলেস হ্যান্ড মাইকসহ বাহারি নাম।
মাইক ব্যবসাটা মূলত মৌসুমভিত্তিক। বছরের নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত মোটামুটি ব্যস্ত সময় পার করতে হয় এই পেশার সাথে জড়িতদের। ওয়াজ মাহফিল, সাংস্কৃতিক উৎব, বাৎসরিক পিকনিক, পূজা সবমিলিয়ে দম ফেলার সময় মেলে না। কিন্তু করোনার কারণে এখন আর মৌসুমভিত্তিক ব্যবসায়ও হচ্ছেনা।
ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসায়ী কল্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ ভৌমিক বলেন, মহামারির কারনে ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। আগে দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বেচাকেনা হয়েছে। দোকানের আয় দিয়ে সুন্দরভাবে সংসার চলেছে। কিন্তু করোনার কারণে সামাজিক অনুষ্ঠান সভা সেমিনার বন্ধ থাকায় এখন আগের মত বেচাকেনা নেই। এখন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। তা দিয়ে দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও কর্মচারীদের বেতন কীভাবে দেব, সংসারই–বা চলবে কীভাবে, চিন্তায় আছি। অনেকে মাইক ও সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবসা বন্ধ করে অন্য ব্যবসার দিকে ঝুকেছে।
আলম ইলেক্ট্রনিক্স মালিক নূর আলম বলেন, বিয়ে, জন্মদিনের অনুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচিতে সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবহার হতো হরহামেশাই; মহামারির মধ্যে ওই সব বন্ধ থাকায় এখন চাহিদা কমেছে সরঞ্জাম।তবে চসিক নির্বাচনের ফলে হ্যান্ড মাইকের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে।