বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:
বাংলাদেশে আধুনিক পদ্ধতিতে মৌ মাছির চাষ করে মধু আহরণের ধারা ক্রমেই বাড়ছে। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে মধু চাষকে সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। বর্তমানে ২ হাজার মৌ খামার ও ১ লাখ ২০ হাজারের অধিক মৌ বাক্স রয়েছে। যা থেকে প্রতি বছর উৎপাদিত হয় ৪ হাজার মেট্রিক টন মধু।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ কাজে লাগিয়ে মৌ-চাষ করতে পারলে বছরে এক লাখ টনের বেশি মধু চাষ করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) বিসিকের তথ্য অনুসারে, এ কার্যক্রম প্রসারে ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে মৌ-চাষ উন্নয়ন প্রকল্প নামের’ একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। এর আওতায় দেশের ১৫ হাজারের বেশি মৌ-চাষীকে আধুনিক পদ্ধতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আরও ৬ হাজার নতুন মৌ-চাষী তৈরি করা হচ্ছে।
মৌ-চাষে উপযোগী ৫৫টি জেলায় বিশেষ খামার সৃষ্টি করে মধু উৎপাদনে কাজ করছে বিসিক। প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেক মৌ-চাষীকে খামার স্থাপনের জন্য ৯ শতাংশ হারে ব্যাংক সুদে ২৫ হাজার টাকা ঋণ দেয়া হচ্ছে।
সরিষা, কালিজিরা, ধনিয়া, লিচুসহ বিভিন্ন ফুলের বাগানে মধু চাষ করা যায়। এক সময় এসব ফুল চাষীরা তাদের বাগানে মৌ-চাষ করতে দিতো না, তারা মনে করে ফুলে মাছি বসলে ফুল নষ্ট হয়, ফলন কম হয়। অথচ ফুলে মৌ মাছি বসলে পরাগায়ণের ফলে অধিক ফলন হয়। যখন এসব বিষয় জানলো তখন তারা আরও বেশি সহযোগিতা করছে। এতে দুই দিকেই লাভ হচ্ছে একদিকে প্রচুর মধু উৎপন্ন হচ্ছে অপরদিকে অধিক পরাগায়ণে ফলে বেশি ফলন হচ্ছে।
মৌ বাক্স স্থাপন করে মৌ-মাছির মাধ্যমে সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এক মৌসুমে প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা হয়। প্রতিটি মৌ বাক্সের মধ্যে একটি করে রানি মৌমাছির সাথে রয়েছে হাজার হাজার মৌমাছি। মৌমাছিগুলো প্রায় চার কিলোমিটার দূরে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে আনতে পারে। ভরা মৌসুমে মাসে একটি মৌ বাক্স থেকে ৩ থেকে ৪ বারে ৫ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়।
দেশে এ্যাপিস সেরানা; এ্যাপিস মেলিফেরা এই দুই প্রজাতির মৌমাছি কাঠের বাক্সে পালনের উপযোগী।
একটা কলোনিতে একাধিক চাক থাকে প্রতি কলোনিতে একটি রানী, শতাধিক পুরুষ এবং ২৫ থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত শ্রমিক মৌমাছি মিলে এরা কলোনিবদ্ধভাবে বসবাস করে। এদের স্থান ত্যাগের অভ্যাস কম এবং সহজেই পোষ মানানো সম্ভব। বছরে প্রতি উৎপাদনমুখি কলোনি থেকে গড়ে ১০ কেজি পর্যন্ত মধু উৎপাদন হতে পারে।
ইউরোপীয় প্রজাতির মৌমাছি একটি কলোনিতে একাধিক চাক তৈরি করে থাকে। বিজ্ঞানভিত্তিক চাষ-পদ্ধতি অনুসরণ করে পৃথিবীতে সিংহভাগ মধুই উৎপাদিত হচ্ছে এ প্রজাতির মাধ্যমে। আমাদের দেশে এ প্রজাতির মৌমাছির চাষ শুরু হয় ১৯৯৫ সাল থেকে।
বিসিক এবং প্রশিক্ষণ কর্মীদের দীর্ঘদিনের ক্রমাগত গবেষণা, প্রজনন এবং উন্নত ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার ফলেই এ অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এ প্রজাতির মৌমাছির একটি বাক্স থেকে বছরে ৫০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়।